১। খোশগল্পে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-র নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা। ২। বাড়িতে কাগজ পড়ছেন তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার হাঁসদা। ৩। পড়শির সঙ্গে গল্প করতে ব্যস্ত কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
সকালে ঘুম ভাঙলেই সারা শরীরে কেমন যেন আশঙ্কার হিমশীতল চোরা স্রোত বইছে। ঠিক যেমন স্কুলজীবনে পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগের দিনগুলোতে হত। পরীক্ষায় তবুও পরীক্ষার্থীর আত্মতুষ্টির জায়গা থাকে। কারণ, পরীক্ষার্থী খাতাটা ভরান নিজে। ভোট-প্রার্থীর ক্ষেত্রে সেই আত্মতুষ্টিতে থাকার অবকাশ নেই। ফলে, ১৯ তারিখ পর্যন্ত রক্তচাপ ওঠা নামা করছে শাসক থেকে বিরোধী সব দলের প্রার্থীদেরই।
ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা অবশ্য পাঁচ বছর পরে লম্বা অবসরের সময় পেয়েছেন। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের কোকপাড়ার কাছে এক আত্মীয়ের বাড়িতে দিনকতক কাটিয়ে এসেছেন। নির্বাচনী বিধির গেরোয় কেবলমাত্র দফতরের কাজে কোথাও গেলে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। বাদবাকি সময় নিজের অথবা ভাড়ার গাড়িতে করে যাতায়াত করছেন। সাত সকালে ঝাড়গ্রাম শহরে বাড়ির এক তলার অ্যান্টিচেম্বারে আনন্দবাজার পড়ার ফাঁকে জানালেন, “রাজ্যে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসতে চলেছে। আমি জিতছি।” কিন্তু তারপরই ঢোক গিলে তৃণমূলের বিদায়ী মন্ত্রী জানাচ্ছেন, জয়ের ব্যবধান নিয়ে তাঁর চিন্তার কথা।
ভোটযন্ত্রে কী যে হয়েছে, তা নিয়ে টেনশনে রয়েছেন সুকুমারবাবু। টেনসন কাটাতে নানা ধরনের কমেডি সিনেমা দেখছেন তিনি। বৈঠকখানায় টিভিতে কিশোর কুমারের কমেডি ছবি ‘লুকোচুরি’ দেখার ফাঁকেও বারে বারেই অন্যমনস্ক হতে দেখা গেল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললেন, “আচ্ছা আমার মার্জিন কতটা বাড়বে বলে মনে হয়?” আগাম কোনও ধারণা দেওয়া যাচ্ছে না। ভোট শেষ হওয়ার পরে এলাকায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন সুকুমারবাবু। পাঁচ বছর পরে লম্বা অবসর পেয়ে স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। বহুদিন পরে দূরের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে জমাটি আড্ডা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রতিদিন সকালে সেই এক চিন্তা। জয়ের মার্জিন কত হবে?
সুকুমারবাবুর প্রতিপক্ষ বাম সমর্থিত জোটের প্রার্থী তথা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। রোজ সকালে মর্নিং ওয়াক করছেন। তারপর লাল চা খেয়ে স্নান সেরে রান্নাবান্না। কখনও বেরিয়ে পড়ছেন জনসংযোগে। ভোট শেষ হওয়ার পরে জামসেদপুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। অনেক পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। চুনিবালার কথায়, “আমার কোনও টেনশন নেই। ভোটের ফল যা হবে সেটাই মেনে নেব।” যদিও আদিবাসী নেত্রীর ছোট মেয়ে বুরুলুকুই হাঁসদা জানাচ্ছেন, “মাঝ রাতে মা প্রায়ই ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ বসে থাকেন। আর জনে জনে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, কে জিতবে বলো তো!”
লড়াইয়ের ময়দানে থাকলেও বামেদের সমর্থন পাননি কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে ফোন করে প্রবীণ নেতাটি জানতে চাইছেন, ঝাড়গ্রাম আসনে জয়ের হাসি কে হাসবেন। নিজে কী চাইছেন? সুব্রতবাবুর জবাব, “অবশ্যই তৃণমূলের পরাজয়। আর চাইছি কংগ্রেসের ভোট বাড়ুক।”
১৯ তারিখের আগে স্বাভাবিক কাজকর্মে একেবারেই মন বসাতে পারছেন না ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি। দৈনিক পুজোপাঠ আর জনসংযোগ চলছে। বৌদির হাতের সুস্বাদু নানা ব্যঞ্জনে সমৃদ্ধ থালা ভরা ভাত খাওয়ায় সেই আগের মতো মন নেই। তাঁর কথায়, “পরিবর্তনের পরিবর্তন কী আদৌ হবে? ভোটের ফল নিয়ে চিন্তা পিছু ছাড়ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy