ভোটের শহরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। মঙ্গলবার, বৌবাজারে। (খবর ভিতরে) — সুদীপ্ত ভৌমিক
এক বছর আগে কলকাতায় পুরভোটের দিন দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে জখম হয়েছিলেন গিরীশ পার্ক থানার অফিসার। অভিযোগ ছিল কলকাতা পুলিশের গড়িমসির সুযোগ নিয়ে শাসকদলের আশ্রিত ওই দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছিল। তাতেই গুলিবিদ্ধ হন ওই অফিসার।
তার এক বছর আগে লোকসভার ভোটে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কাশীপুর-শ্যামপুকুরের বিভিন্ন এলাকা। অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার ফলেই বিরোধীদের উপর তাণ্ডব চালিয়েছিল শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।
এই প্রথম সাবেক কলকাতার ভোট হচ্ছে দুই পর্যায়ে। কলকাতায় লোকসভা ও পুরভোটে হিংসার ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রবণতা বাড়ার এই বিষয়টি নজর এড়ায়নি নির্বাচন কমিশনের। সেই কারণেই কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি কমিশন। মাঝখানে আট দিনের ব্যবধান রেখে এ বার ভোট হচ্ছে কলকাতার দুই প্রান্তে। উত্তর কলকাতায় ২১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার এবং দক্ষিণে ৩০ এপ্রিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের বিধানসভার ভোটে কলকাতা পুলিশের এলাকায় যাতে কোনও গোলমাল না হয় তার জন্য সব বুথে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অন্য বারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ২০১৪ সালে পুরো কলকাতা পুলিশ এলাকায় জন্য ছিল প্রায় ৪০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেখানে এবার শুধু মাত্র কলকাতা পুলিশের ২৯টি থানা এলাকার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের জন্য থাকছে ৬১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। যার মধ্যে থাকছেন সিআরপি, বিএসএফ, সিআইএসএফের জওয়ানরা। মহানগরে এত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এর আগে ভোট হয়নি বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের একাধিক পুলিশ কর্তা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২১ এপ্রিলে কলকাতায় মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৫০৫। বুথের সংখ্যা ১৮৫৯। প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবেন কমপক্ষে চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের লাইন ঠিক করার জন্য থাকবেন এক জন লাঠিধারী পুলিশ। তবে ওই পুলিশকর্মী অন্য কোনও থানা এলাকার হবেন। এ ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশকর্মীরা কোনও মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘৫০৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৮টি স্পর্শকাতর কেন্দ্র। এই সমস্ত কেন্দ্রে বা়ড়তি নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে।’’ তিনি জানান, বুথের ভিতরে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। রাজ্য পুলিশ বুথের বাইরে থাকবে। ভোটের দিন নজরদারি বাড়াতে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে (পিটিএস) কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কলকাতা পুলিশ যুগ্ম ভাবে ‘জয়েন্ট কন্ট্রোল রুম’ চালু রাখা হবে। লালবাজারে একটি কন্ট্রোলরুমে একটি অতিরিক্ত নম্বর (২২১৪-২১২১) চালু থাকবে। নাগরিকরা ১০০ ডায়ালে ফোন করে যাতে অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে জানাতে পারেন তার জন্যও থাকছে অতিরিক্ত সংযোগ। যুগ্ম কমিশনার (সদর) বলেন, ‘‘এতদিন ১০০ ডায়ালে আটটি লাইন থাকত। ভোটের দিনে আরও অতিরিক্ত ২২টি লাইন থাকবে।’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, আগামী কালের ভোটে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ওই সাতটি বিধানসভা এলাকায় টহল দেবে ৬৭টি ‘পুলিশ সেক্টর মোবাইল’। প্রতিটিতে থাকবেন হাফ সেকশন (চার জন) কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান, যাঁরা কলকাতা পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ কন্ট্রোল রুমের নির্দেশে যে কোন এলাকায় ছুটে যাবেন। কোথায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হল তা-ও লিপিবদ্ধ করে রাখবেন জওয়ানেরা। তাঁরা আজ, বুধবার থেকেই এলাকায় টহল দেবেন। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ২৯ কুইক রেসপন্স টিম। ওই টিমে থাকবে পুলিশের কোন এক জন সাব ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্ট পদ
মর্যাদার অফিসার।
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, কোথাও কোন অশান্তির খবর এলে কুইক রেসপন্স টিম সবার আগে সেখানে পৌছবে। সেই সঙ্গে এ বারই প্রথম তৈরি করা হয়েছে ‘স্পেশাল ইন্টারভেন্শন টিম’। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ওই টিম। মোট ৫১টি ‘স্পেশাল ইন্টারভেন্শন টিম’ বুধবার থেকে এলাকায় এলাকায় নাকা চেকিং-এর পাশাপাশি রুট মার্চ করবে। প্রতিটি টিমে এক কোম্পানি করে জওয়ান থাকবে বলে লালবাজার জানিয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের বিশেষ কমিশনার থেকে শুরু করে ডিসি পদমর্যাদার অফিসারদের নিয়ে পৃথক পৃথক দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলের নেতৃত্বে থাকবেন এক জন করে আইপিএস অফিসার। এ ছাড়াও বিভিন্ন ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনাররা আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য নিজস্ব বাহিনী নিয়ে
তৈরি থাকবেন।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, মহানগরের এর আগের ভোটে সেক্টর মোবাইল, কুইক রেসপন্স টিম থাকলেও তাতে থাকতেন কলকাতা পুলিশের কর্মী-অফিসাররা। এ বারই প্রথম ভোটের জন্য সেক্টর মোবাইল, কুইক রেসপন্স টিমের দায়িত্বে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গঠিত ‘স্পেশাল ইন্টারভেন্শন টিম’ও নতুন। যা দেখে কলকাতা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এ বারের ভোটের দিন যা করার করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাই বৃহস্পতিবার তাঁদের ফর্মের উপরই কিছুটা হলে নির্ভর করবে শাসকদলের ‘ভোট’ ভাগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy