Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ভোটে সেই লগ্নি সংস্থার টাকা, দাবি বামেদের

নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে তিন জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। উত্তরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৪ ঘণ্টা। তাঁদের মধ্যে ভাঙড়ে তৃণমূলের প্রার্থ়ী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা ও দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আজ কমিশনকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন। তৃতীয় জন, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম এখনও জবাব দেননি। এ দিনই তাঁর দলের নেতারা দিল্লিতে ও রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে তিন জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। উত্তরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৪ ঘণ্টা। তাঁদের মধ্যে ভাঙড়ে তৃণমূলের প্রার্থ়ী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা ও দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আজ কমিশনকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন। তৃতীয় জন, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম এখনও জবাব দেননি। এ দিনই তাঁর দলের নেতারা দিল্লিতে ও রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন।

দিল্লিতে এ দিন নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও নীলোৎপল বসু। অভিযোগ জানান, তৃণমূল এখনও বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে টাকা তুলছে। শুধু নারদ-ভিডিওয় দেখানো ঘুষের টাকা নয়, ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে নেওয়া টাকাও ভোটের কাজে লাগাচ্ছে তারা। সিপিএমের তরফে কমিশনকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২০০টি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি-র বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করছে। বাকিগুলি নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের হাতে। এই তদন্তের ক্ষেত্রে হুমকি দিয়ে এই চিট ফান্ড সংস্থাগুলির থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সেই টাকাই শাসক দলের ভোটের কাজে লাগানো হচ্ছে। সিপিএমের তাই আবেদন, ওই সব সংস্থার আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছে।’’

ইয়েচুরিদের এ-ও অভিযোগ, কমিশনের নির্দেশ রাজ্যের সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভোটের কাজে না লাগানো যাবে না। কিন্তু রাজ্য সরকার তাদের সিআরপি-র মতো উর্দি পরিয়ে টহল দেওয়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে, যাতে তাঁরা ভোট দিতে না যান। বাইক-মিছিলের মতো এটাও বন্ধ করুক কমিশন। কারণ শাসক দলের কর্মীদেরই এই সব বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে। এ দিন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম।

নারদ-ভিডিও নিয়েও চাপ বাড়াতে ইয়েচুরিদের দাবি, ওই ভিডিওতেই স্পষ্ট, শাসক দল কী ভাবে টাকা তুলছে। ওই ভিডিও যে আসল, তা প্রমাণে তদন্ত হোক। এই ঘুষের টাকা ভোটে কোথায় কোন কাজে লাগানো হচ্ছে, তা-ও দেখা হোক। ইয়েচুরি জানান, ওই ভিডিওয় বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারকে তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের হয়ে ঘুষ নিতে দেখা যাচ্ছে। ওই অফিসার যাতে ভোটের সময় সরকারি পদের অপব্যবহার না করেন, তা-ও কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।

সিঙ্গুরের সিপিএম প্রার্থ়ী রবীন দেব এ দিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তাতে বামফ্রন্টের অভিযোগ, কমিশন যে সব ভাল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলি নিচু তলায় কার্যকর হচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের অফিসের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পরে রবীনবাবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যে ভাবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিস চলছে তাতে কমিশনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এখানে তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের এক নেতাকে পাঠানো হয়েছে। ওই অফিসকে তৃণমূলের দফতরে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ এই সূত্রে রবীনবাবু বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রী ও মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের নির্দিষ্ট অভিযোগ কমিশনে জমা দিয়েছিলাম। কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে ভারসাম্য রাখতে দুই তৃণমূল নেতার সঙ্গে সেলিমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে।’’ স্মারকলিপিতেও এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন বামেরা।

সেলিম ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার তাঁকে আরও একটি মেল করে অভিযোগ করেছেন যে, তিনি অনুমতি না নিয়ে সভা করেছেন এবং সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থ়ীই নন। সভা করছে দল বা ফ্রন্ট। এর জন্য তাঁর অনুমতি নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। আর সংবাদমাধ্যমের কাছে মতামত জানানো নিয়েও প্রশ্ন তোলার কোনও যুক্তি নেই। তবে কমিশনকে তিনি জবাব দেবেন। তাঁর দলও কড়া বার্তা দেবে কমিশনকে। অনুব্রতর নাম না করে সেলিম এ দিন বলেন, ‘‘কুমন্তব্য আর অন্য অভিযোগকে এক করে দেখা হচ্ছে।’’ রাজ্যের উপ-মুখ্য নির্বাচনী অফিসার অমিতজ্যোতি ভট্টাচার্য জানান, নির্দিষ্ট সময়ে মহম্মদ সেলিমের উত্তর না পেলে দিল্লিতে তা জানানো হবে। কমিশন যা নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’’

শো-কজের জবাবে অনুব্রত কী জানিয়েছেন কমিশনকে? তাঁর বক্তব্য, তিনি বন্ধ ঘরে কর্মিসভা করছিলেন। ভোটে দলের কর্মীদের ভূমিকা কী হবে, সে কথাই বলেছেন সেখানে। সংবাদমাধ্যমের কেউ সেখানে ছিলেন না। ফলে কর্মিসভা নিয়ে মনগড়া খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও অনুব্রত ওই ঘটনার পরে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘‘ঘরোয়া বৈঠক ছিল। ঘরের ভিতরে আমি বৌকে মারব না কী করব, তা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’

রেজ্জাক অবশ্য অনুব্রতর মতো পাল্টা যুক্তি দেওয়ার পথে হাঁটেননি। তিনি নিজের বক্তব্যের জন্য কমিশনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। সূত্রের খবর, ভাঙড়ে এক কর্মিসভায় তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেক ভোটারের পিছনে এক জন করে ‘মিলিটারি’ থাকবে। মিলিটারি চলে গেলে তাঁরা ঘরে নিশ্চিন্তে শোবেন কী করে! প্রাক্তন বাম নেতার এই মন্তব্যে বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE