Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

দিদির নতুন তত্ত্ব, ভোট লুঠ করেছে বিজেপি

এত দিন ভোট লুঠের অভিযোগ উঠছিল তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বুথে বুথে ভূতের নেত্যতেও জুড়ে গিয়েছিল তৃণমূলের নাম। কিন্তু রাজ্যে শেষ দফা ভোটের মুখে সেই ভোট লুঠের নিশানা উল্টে দিলেন তৃণমূল নেত্রী নিজেই!

আনন্দ মণ্ডল ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
পাঁশকুড়া ও চণ্ডীপুর শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

এত দিন ভোট লুঠের অভিযোগ উঠছিল তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বুথে বুথে ভূতের নেত্যতেও জুড়ে গিয়েছিল তৃণমূলের নাম। কিন্তু রাজ্যে শেষ দফা ভোটের মুখে সেই ভোট লুঠের নিশানা উল্টে দিলেন তৃণমূল নেত্রী নিজেই!

রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ তুললেন— কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে বিজেপি ভোট লুঠ করাচ্ছে। চণ্ডীপুর ও পাঁশকুড়া দুই সভাতেই মমতা একেবারে বিধানসভা কেন্দ্রের নাম ধরে ধরে বলেন, ‘‘বিজেপি বলছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট লুঠ করতে। লোকাল পুলিশ তাদের পাঁচটি কেন্দ্রে সেটা করতে দিল। আমি কেন্দ্রগুলোর নামও জানি।’’ তিনি চারটি কেন্দ্রের নাম মঞ্চ থেকেই জানিয়ে দেন— নাগরাকাটা, কালচিনি, মাদারিহাট ও বৈষ্ণবনগর। তবে পঞ্চম কেন্দ্রটির নাম আর করেননি।

ভোট-পর্বের শেষ লগ্নে পৌঁছে হঠাৎ কেন মমতা এমন অভিযোগ তুললেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। তৃণমূল-বিরোধী ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপিতে গেলে যে আখেরে তাঁরই লাভ, সে কথা বিলক্ষণ জানেন মমতা। সেই কারণেই তিনি ঠারেঠোরে এই বার্তা দিতে চাইছেন, যে ভাবেই হোক বিজেপি এ বার ভাল রকম ভোট পাচ্ছে। মমতার উদ্দেশ্য, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি যে বাড়তি সমর্থন পেয়েছিল, সেটা যেন জোটের ঘরে না যায়।

কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট লুট করে বিজেপি আদতে তাঁকে দুর্বল করতে চাইছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন মমতা। সেই সূত্রে টেনে আনেন আগামী লোকসভা ভোটের কথা। চণ্ডীপুরে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি ২০১৯ সালের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছে। সে জন্যই আমাকে দুর্বল করতে চাইছে। কিন্তু মমতাকে দুর্বল করা অত সোজা নয়। বিজেপি তোমাকে ২০১৯ সালে বুঝে নেব!’’

আগামী ৫ মে শেষ দফায় পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও ভোট রয়েছে কোচবিহারে। নন্দীগ্রামের জেলাতেও গত লোকসভায় বিজেপির পালে হাওয়া লেগেছিল। বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কোচবিহারের ছবিটাও আলাদা নয়। ২০১১-তে যেখানে উত্তরবঙ্গের এই জেলার ৯টি বিধানসভা আসনে বিজেপি মাত্র ২-৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সেখানে ২০১৪-তে তা এক লাফে বেড়ে হয় ১১-১৬ শতাংশ। তুফানগঞ্জে তো ২০ শতাংশের বেশি। আজ, সোম ও কাল, মঙ্গলবার এই কোচবিহারেই প্রচারে যাচ্ছেন মমতা। তার আগে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের সভা থেকে কৌশলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তৃণমূল বনাম জোটের মুখোমুখি লড়াই নিয়ে যতই চর্চা হোক, লড়াইয়ে বিজেপি-ও আছে পুরোদস্তুর।

কিন্তু শেষ দফার প্রচারে বেরিয়ে হঠাৎ কেন তিনি তৃতীয় দফায় ভোট মিটে যাওয়া উত্তরবঙ্গের চার কেন্দ্রের কথা তুললেন?

বিজেপি সূত্রের দাবি, ওই চার কেন্দ্রে তাদের ভাল ফলের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মাদারিহাট নিয়ে তো তারা খুবই আশাবাদী। আর কালচিনি ও নাগরাকাটা যে হেতু মাদারিহাটের মতোই ডুয়ার্সের দু’টি আসন, সেখানে মোর্চা ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ভাল প্রভাব রয়েছে। মোর্চা তো বিজেপির সঙ্গী। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুব্ধরাও তাদের সঙ্গে রয়েছে। তার উপর কালচিনিতে তৃণমূল প্রার্থী হলেন বিতর্কিত উইলসন চম্প্রমারি। তাঁর বিরুদ্ধে ভোট পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। এই সব সমীকরণেই ওই চার কেন্দ্রে সম্ভাব্য হারের হিসেব করে মমতা ভোট-লুটের তত্ত্ব আওড়াচ্ছেন বলে বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘যারা নিজেরা ভোট-লুঠ করতে অভ্যস্ত, তারা এ বার ভোট লুঠ করতে পারল না। সেই আক্ষেপ থেকেই অন্যের ঘাড়ে মিথ্যে দোষ চাপাচ্ছে। এটা ওদের হতাশার প্রকাশ।’’

অঙ্ক বলে বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হলে শাসকের সুবিধা। বাম জমানাতেও বার বার সেই ছবি দেখা গিয়েছে। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুযোগ নিয়ে বহু বার বহু আসনে উতরে গিয়েছে বামফ্রন্ট। মমতার থেকে ভাল সে অঙ্ক কেউ জানে না। সেই কারণেই শেষ দফায় তৃণমূল-বিরোধী ভোট যাতে বেশি করে ভাগ হয়, সেটা তিনি নিশ্চিত করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে সেই চেষ্টা কাজে আসবে না বলেই জোট-নেতৃত্বের দাবি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘জোটকে ঠেকাতে মমতা চাইছেন বিরোধী ভোট বিজেপিতে যাক। কিন্তু সে গুড়ে বালি।’’ জোটের জয় নিয়ে এ দিন প্রত্যয়ী শুনিয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের গলাও। পূর্ব মেদিনীপুরেরই হলদিয়ার দুর্গাচকের সভায় সূর্যবাবু বলেন, ‘‘এই যে মানুষের জোট হয়েছে, তা শুধু ভোটে লড়ার জন্য নয়। ভোটে জিতে সরকার গড়বে জোট। আর সেই সরকারের হাত, কান, চোখ হবে বুথে বুথে মানুষের এই জোট।’’ ৫ মে শেষ ভোটের দিন বুথকে সব শক্তি দিয়ে দুর্গের মতো রক্ষা করার বার্তাও দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘বাম-কংগ্রেস জোটে যাতে তৃণমূল, বিজেপির লোকও আরও বেশি করে আসে, সেটা দেখতে হবে।’’ সূর্যবাবুর সঙ্গেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘জোটই ক্ষমতায় আসছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার নিশ্চিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Mamata bandopadhyay Bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE