একটি-দু’টি নয়, এক ধাক্কায় তিনটি! নির্বাচন কমিশনের ত্রিমুখী পত্রাঘাতে তৃতীয় দফা ভোটের আগে নতুন করে অস্বস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকার। কমিশনের পক্ষ থেকে একটি চিঠিতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর জবাব চাওয়া হয়েছে। বাকি দু’টি চিঠিতে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাবদিহি চেয়েছে কমিশন। সব ক’টি চিঠিই ছত্রে ছত্রে ভর্ৎসনায় ভরা।
জোটের চাপ, নারদ-ধাক্কায় দলে হাঁসফাঁস, উড়ালপুলের ধসে আরও উদোম সিন্ডিকেটরাজ— সব মিলিয়ে মমতা যেন চক্রব্যূহে। তারই মধ্যে আজ কমিশনের এই পত্রাঘাত। এ দিন বিকেলে সাঁকরাইলে প্রচার সেরে ফেরার পথেই মমতা সোজা চলে যান নবান্নে। মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-র সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। নবান্ন সূত্রের খবর, কমিশনের চিঠির কী উত্তর দেওয়া উচিত, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে কমিশনের আগের চিঠিটি গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে। মুখ্যসচিব তার উত্তর দেওয়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে মুখ্যসচিবের সেই জবাব যে কমিশন গ্রাহ্যই করছে না, চিঠিতে আজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছে কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে নয়, এ দিন চিঠি পাঠানো হয়েছে তৃণমূলের চেয়ারপার্সনকে। বলা হয়েছে, ‘‘আগের চিঠিতে (১৪/৪) আপনাকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। আপনার জবাব আসেনি। তবে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় একটি উত্তর দিয়েছিলেন। আমরা বলে দিতে চাই যে, ওই চিঠিটি মুখ্যমন্ত্রী নন, তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশেই লেখা হয়েছিল। তাই চিঠির জবাব আপনাকেই দিতে হবে।’’ ২২ এপ্রিল বেলা এগারোটার মধ্যে মমতার জবাব চেয়েছে কমিশন।
কমিশনের রোষের মুখে পড়েছেন মুখ্যসচিবও। বাসুদেববাবু যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে বাঁচাতে তৎপর হয়েছেন, সেই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে তাঁকে লেখা একটি চিঠিতে। মমতা ভোট-সভায় আসানসোলকে আলাদা জেলার মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আচরণবিধি ভেঙেছেন— এই যুক্তিতে তাঁকে শো-কজ করেছিল কমিশন। কিন্তু মমতার নির্দেশে ব্যাট ধরেন মুখ্যসচিব। কমিশনকে জানান, আসানসোলকে আলাদা জেলা করার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। সভায় তা বলে মুখ্যমন্ত্রী বিধি ভঙ্গ করেননি। কমিশন আজ বাসুদেববাবুকে চিঠিতে লিখেছে, ‘‘আপনি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই চিঠি লিখেছেন বলে জানিয়েছেন। আপনার এই চিঠি লেখার এক্তিয়ার নেই। উত্তর দিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। আপনি নির্বাচনী আচরণবিধি পালন করেননি।’’
মমতার হয়ে জবাব দিতে গিয়ে কমিশনের ভূমিকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন বাসুদেববাবু। চিঠিতে লিখেছিলেন, শো-কজ করার আগে ভাল করে সব দিক খতিয়ে দেখা উচিত ছিল কমিশনের। ওই চিঠির বিরুদ্ধে সরব বিরোধী দলগুলি বাসুদেববাবুর শাস্তির দাবি জানায় কমিশনে। আজ কমিশন মুখ্যসচিবকে বলেছে, ‘‘কোন যুক্তিতে কমিশনের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেছেন, ২২ এপ্রিলের মধ্যে তাঁর ব্যাখ্যা দিন।’’
তৃতীয় চিঠিতেও কড়া সমালোচনা রয়েছে মুখ্যসচিবের। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যসচিব। সূত্রের খবর, কমিশনকে তিনি লিখেছিলেন, এতে বাহিনীর মনোবলে চিড় ধরবে। ভোটের সময়ে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে রাজ্য সরকার দায়ী থাকবে না। কমিশনের মতে, এক জন আমলা হয়ে বাসুদেববাবুর ওই বক্তব্য যথেষ্ট নিন্দনীয়। রাজ্য প্রশাসন নিজের দায় এড়াতে ব্যস্ত। কমিশনের পরামর্শ, ভবিষ্যতে যেন চিঠিতে সংযত ভাষা ব্যবহার করেন বাসুদেববাবু।
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘বাসুদেববাবু যে বেঠিক কিছু করেননি, তা জানিয়ে কমিশনকে তিনি চিঠি দেবেন।’’ ওই কর্তা জানান, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালে নরেন্দ্র মোদীকে শো-কজ করেছিল কমিশন। চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা হলেও ঠিকানা ছিল বিজেপির অফিস। এই ক্ষেত্রে গিয়েছে নবান্নে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে চিঠির জবাব দেওয়ায় কোনও ভুল নেই বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy