Advertisement
১৯ মে ২০২৪
রোজ যান গন্ডগোলের এলাকায়

জেলাশাসকদের নতুন নির্দেশ কমিশনের

আর দফতরে বসে ফোনে নির্দেশ দিয়ে ভোট পরিচালনা নয়। শান্তিপূর্ণ এবং ভয়মুক্ত ভোট নিশ্চিত করতে এ বার রাজ্যের সব জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসককে সরাসরি মাঠে নামার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৪
Share: Save:

আর দফতরে বসে ফোনে নির্দেশ দিয়ে ভোট পরিচালনা নয়। শান্তিপূর্ণ এবং ভয়মুক্ত ভোট নিশ্চিত করতে এ বার রাজ্যের সব জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসককে সরাসরি মাঠে নামার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। রবিবার রাজ্যের উপ-মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার জানিয়েছেন, জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসকদের প্রতি দিন জেলার অতি-স্পর্শকাতর এবং স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে ঘুরতে হবে। ভোটারদের ভয়মুক্ত করার কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে চলবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারিও।

শুধু এটুকুই নয়। ভোটারদের ভয়মুক্ত করতে প্রতি জেলায় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খোলার দাওয়াইও দিয়েছে কমিশন। এ দিন দিব্যেন্দুবাবু জানান, প্রতি জেলায় আজ, সোমবার থেকেই দিন-রাতের কল সেন্টার খোলার চেষ্টা করা হবে। সোমবার না হলেও দু’এক দিনের মধ্যেই ওই সব কল সেন্টার খুলে দেওয়া হবে। সেখানে ভোটারেরা তাঁদের এলাকার হিংসা বা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনকে জানাতে পারবেন। কমিশনের নির্দেশ, গোলমালের খবর পেলেই সেখানে গিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। একই সঙ্গে ভোটারদের ভয় কাটানোর কাজও করবে। এমনকী, কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত ভোটারদের ফোন করে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খোঁজখবরও নেবে প্রশাসন।

শান্তিপূর্ণ ও ভয়মুক্ত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন যে সব রকম ব্যবস্থাই নেবে, তা রাজ্যে এসে জানিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। তাঁর নেতৃত্বে ১৪ ও ১৫ মার্চ কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে আসে। তখন একাধিক বৈঠকে ফুল বেঞ্চ বুঝিয়েছিল, রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বহু অভিযোগ তাঁদের কাছে এসেছে এবং তাঁরা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। কমিশন যে প্রয়োজনে কঠোর হবে, তার প্রমাণ মিলেছিল ফুল বেঞ্চ যাওয়ার দু’দিনের মধ্যেই বদলি করে দেওয়া হয় রাজ্যের বেশ কয়েক জন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ ৩৭ জন অফিসারকে। তার পরে গত কালই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জঙ্গমহলরে আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তাঁর বিরুদ্ধে বহু বারই তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে।

রাজ্য প্রশাসনের উপরে আস্থা না-রেখে নির্বাচন কমিশন যে প্রতি ধাপে নজরদারি আরও কঠোর করবে, তা বুঝিয়ে ইতিমধ্যেই ভিন রাজ্যের সিইও-দের নিয়ে ৫টি নজরদারি দল পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে জেলা প্রশাসনকে আরও কড়া অনুশাসনের মধ্যে রাখতেই জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকদের সরাসরি মাঠে নেমে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হল বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসনেরই একাংশ। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এমন নির্দেশ নজিরবিহীন। আগে কখনও জেলাশাসকদের রাস্তায় নেমে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ কমিশন দেয়নি।’’

কমিশন সূত্রে খবর, ফুল বেঞ্চ জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বসার এক দিন আগেই সব জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ও কয়েকটি ক্ষেত্রে সামনাসামনি বসে বৈঠক করেন উপ নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা। বৈঠকে জেলা প্রশাসনগুলির অতি-স্পর্শকাতর ও স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিতকরণে খুশি হতে পারেননি সাক্সেনা। প্রয়োজনে কমিশন নতুন করে ম্যাপিং করতে পারে বলেও সে দিন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাক্সেনা। এর পরে ফুল বেঞ্চের বৈঠকেও এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। ভোটারদের ভয়মুক্ত করতে গ্রামের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ১২ হাজার গোলমালপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশও দেয় কমিশন। পাশাপাশি, ৩১ হাজার গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করা এবং দুষ্কৃতীদের অবাধ ঘোরাফেরায় লাগাম লাগানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় কমিশন যে কড়া ব্যবস্থা নেবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়।

এ বার সরাসরি জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদেরও রাস্তায় নেমে ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরির নির্দেশ দিল কমিশন। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সে জন্যই জেলা প্রশাসনকে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে এবং ফোন করে কথা বলতে বলা হচ্ছে। নির্দেশ সঠিক ভাবে পালন হচ্ছে কি না, নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার রিপোর্টও নেবে কমিশন।’’

এ দিনই মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে গিয়ে বেআইনি অস্ত্র মজুত নিয়ে অভিযোগ জানায় রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দল। বিজেপি নেতা অসীম সরকার জানান, কমিশনের কাছে তাঁরা জানিয়েছেন, ভোটের আগে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র মজুত হচ্ছে। অবিলম্বে সব অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিজেপি নেতারা। একই সঙ্গে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের গতিবিধির উপরে নজরদারি করার দাবি জানান বিজেপি নেতারা। প্রয়োজনে ভোটের সময় তাঁকে গৃহবন্দি করারও দাবি জানানো হয়। যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে এমন দাবির কথা অস্বীকার করা হয়েছে। তবে বেআইনি অস্ত্র মজুতের অভিযোগ প্রসঙ্গে দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ নিয়ে কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE