Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বিধিভঙ্গের দায়ে তিন নেতা, জবাব চায় কমিশন

ওঁরা দু’জনে আগে ছিলেন প্রতিপক্ষ। এখন (অন্তত খাতায়-কলমে) সহযোদ্ধা। এবং দু’জনেরই বিতর্কিত মন্তব্যে নিয়মিত তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। তৃতীয় জন পোড়খাওয়া কমিউনিস্ট নেতা। দু’দিন আগেই যিনি লোকসভায় তীব্র বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

ওঁরা দু’জনে আগে ছিলেন প্রতিপক্ষ। এখন (অন্তত খাতায়-কলমে) সহযোদ্ধা। এবং দু’জনেরই বিতর্কিত মন্তব্যে নিয়মিত তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। তৃতীয় জন পোড়খাওয়া কমিউনিস্ট নেতা। দু’দিন আগেই যিনি লোকসভায় তীব্র বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে।

এ বার বক্তৃতায় নির্বাচনী বিধি ভাঙার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস পেলেন তিন জনেই— তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী (প্রাক্তন সিপিএমও বটে) আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার জানান, যিনি যে বিধানসভা এলাকায় ওই সমস্ত মন্তব্য করেছেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের রির্টানিং অফিসার নোটিস দিয়েছেন।

ভাঙড়ে দলের কর্মিসভায় রেজ্জাক বলেছিলেন, প্রত্যেক ভোটারের পিছনে এক জন করে ‘মিলিটারি’ থাকবে। কিন্তু মিলিটারি চলে গেলে তাঁরা বাড়িতে নিশ্চিন্তে শোবেন কী করে! প্রাক্তন বাম নেতার এই মন্তব্যেই নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ভোটারদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন বলে দাবি বিরোধীদের। সেলিমের বিরুদ্ধে শাসক দলের অভিযোগ ছিল, তিনি ভাঙড়েরই একটি কর্মিসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলেছেন। অন্য দিকে, ‘পুলিশের ওপরে বোম মারুন’ বক্তৃতা-খ্যাত অনুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সম্প্রতি দলীয় এক কর্মিসভায় তিনি বলেন, ‘‘যদি দেখেন পাঁচ-সাতটা বাড়ি ভোট দেবে না,

তা হলে তাদের ভোট দেওয়ার দরকার নেই। সেই সব পরিবারকে বলে দেবেন, নির্বাচন কমিশন-কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের দিন পর্যন্ত। তার পরে আমরাই ‘কন্টিনিউ’ থাকব। সেই বুঝে কাজ করুন।’’ তাঁর এই মন্তব্যটির অডিও রেকর্ডিং সংবাদমাধ্যমের কাছেও রয়েছে।

রেজ্জাক এবং সেলিম যদিও জানিয়েছেন, তাঁরা কমিশনের নোটিস এখনও হাতে পাননি। পেলে উত্তর দেবেন। রেজ্জাকের মন্তব্য, ‘‘আমি যা বলেছি, তা তো অসত্য নয়। বিতর্কিত কিছু বলিনি। কমিশন কত দিন মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারবে! বড়জোর এক মাস। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ না হলে যা ঘটবার, সেটাই ঘটবে। কমিশন আটকাতে পারবে না!’’ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘সংসদ চলছে। আমি দিল্লিতে। কমিশনের নোটিস পেলে যথাযথ উত্তর দেব।’’

অনুব্রত এ দিন ফোন ধরেননি, এসএমএস-এরও উত্তর দেননি। তবে দলীয় সূত্রের খবর, যে ভাবে কর্মিসভায় বলা তাঁর কথা প্রকাশ্যে এসেছে, মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য ‘কেষ্ট’ তাতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ। কারণ, মঙ্গলবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের ওই কর্মিসভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কেউই সাধারণ কর্মী-সমর্থক নন। ছিলেন বীরভূমের ১১ জন প্রার্থী, তৃণমূলের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পুরসভার কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সমিতির সদস্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও কর্মাধ্যক্ষেরা। সঙ্গে ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায় এবং জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম।

সম্মেলনের শুরুতে নির্দেশ দেওয়া হয়, সবাই যেন নিজেদের মোবাইল বন্ধ রাখেন। দু’তিন জন কথা না শোনায় অনুব্রতর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের মোবাইল বাজেয়াপ্তও করেন। এক নেতার কথায়, ‘‘যাতে কোনও ভাবেই ভেতরের অলোচনা বাইরে না যায়, সে জন্যই ওই পদক্ষেপ করা হয়।’’ তা সত্ত্বেও তাঁর মন্তব্য প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনুব্রত। কে বা কারা অনুব্রতর বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে সংবাদমাধ্যমের হাতে পৌঁছে দিলেন, তা দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে খবর।

অনুব্রত অবশ্য এর আগে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি ওই কথা বলেননি। তবে তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন, ‘‘ঘরোয়া বৈঠক ছিল। ঘরের ভিতরে আমি বৌকে মারব না কী করব, তা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE