Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ভোটের ফেসবুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে মেমে-রেজ কমিক্স

কুট্টুসের সঙ্গে কথা বলছে টিনটিন। কমিক্‌স-প্রেমীদের তাদের নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। এ বঙ্গের বিধানসভা ভোটের বাজারে সেই টিনটিন-কুট্টুসই হাজির ফেসবুকে।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৩:৪৬
Share: Save:

কুট্টুসের সঙ্গে কথা বলছে টিনটিন। কমিক্‌স-প্রেমীদের তাদের নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। এ বঙ্গের বিধানসভা ভোটের বাজারে সেই টিনটিন-কুট্টুসই হাজির ফেসবুকে। তবে কথোপকথনের বিষয়— তৃণমূল বনাম জোট।

কিংবা চেনা ছবির জানা দৃশ্যে বাংলা ছবির কমেডি জুটি ভানু-জহর গোল গোল চোখে তাকিয়ে। সংলাপটা বদলেছে শুধু। কোনও বিখ্যাত স্থিরচিত্রে নিজের মতো করে ক্যাপশন-সংলাপ দিয়ে তৈরি এমনই সব সৃষ্টির পোশাকি নাম ‘মেমে’।

আবার বাস্তবের চেনা চরিত্র নিয়ে ‘কার্টুন স্ট্রিপ’। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের দুনিয়া কাঁপানো এ ধরনের ব্যঙ্গচিত্রের নাম ‘রেজ’। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে বক্রোক্তি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকা থেকে ট্রেনে আরও পুলিশ নিয়ে আসুন।’’ তা নিয়ে তৈরি হয়েছে মমতা-ওবামা সংলাপ নির্ভর কার্টুন, ‘ওবামা-পিসি মৈত্রী এক্সপ্রেস’ রেজ কমিক্‌স।

মেমে এবং রেজ। এই জুটিতেই বাজিমাৎ এ বারের বিধানসভা ভোট।

নির্বাচনী-বিধির কড়াকড়িতে দেওয়াল লিখন নিয়ে প্রতিযোগিতার দিন বদলেছে। বরং স্বাধীনতা বেড়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের। তা কাজে লাগিয়ে এ বার ভোটে আলোড়ন ফেলেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দেওয়াল। ফেসবুকে ভোট-লিখনে শেয়ার ও লাইক-এর হিড়িকে সব রেকর্ড চুরমার। হালফিলের সেই তপ্ত বঙ্গেই আগমন ‘মেমে’ ও ‘রেজ’-এর। সৌজন্য দেশ-বিদেশের কিছু তরুণ-তরুণী।

সৃষ্টিকর্তারা কেউ পড়ুয়া, কেউ সদ্য চাকরিজীবী, কেউ বা প্রবাসী অধ্যাপক-গবেষকও। ফেসবুক পেজ থেকে হোয়্যাট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ— হুড়মুড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে মেমে আর রেজ। শুধু ‘শেয়ার’ বা ‘লাইক’ নয়, এই ব্যঙ্গচিত্রের বন্যা জমিয়ে দিচ্ছে আড্ডা, তুলছে বিতর্কের ঝড়।

মফস্‌সলের সাদামাঠা, গোবেচারা চেহারার সায়ক সোম (নাম পরিবর্তিত) সল্টলেকের এক সরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। এ লেখায় উল্লেখ করা সব মেমে ও রেজ-ই তাঁর তৈরি। সরকারি চাকরি, তাই রাজরোষের ভয়ে গোপনেই চলছে সৃষ্টি। সায়কের কথায়, ‘‘এখন এই ব্যঙ্গচিত্র তৈরিতে নেমেছেন দেশ-বিদেশের অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী।’’

ভয় তো থাকবেই। বছর চারেক আগে ‘সোনার কেল্লা’ ছবির দৃশ্য অনুকরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদীকে নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র তৈরি করে কম হেনস্থা হতে হয়নি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। প্রতিবাদ আন্দোলনে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। কিন্তু কী ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ল আপাত-নিরীহ হাল্কা মেজাজের মেমে আর রেজ?

হাওয়াই চটির লোগো দেওয়া ‘হাওয়া-হাওয়াই’ নামে পেজ বানিয়েছেন তিন বন্ধু। এক জন কার্টুন আঁকেন, এক জন লেখেন, অন্য জন করেন গ্রাফিক্স ডিজাইন। তাঁদেরই এক জন জানালেন, প্রথমে ‘ট্রল বাংলা’ বলে নামে একটি ফেসবুক পেজে এ ধরনের মেমে বা রেজ হাজির হয়। জনপ্রিয়তাও বাড়ে। বিষয় হিসেবে ঢুকে পড়ে বঙ্গের শিল্প-বিমুখতা, টেট বিপর্যয়, বেসরকারি কলেজে ক্যাম্পাসিংয়ের হাল। হাসিঠাট্টা, মতামত-পাল্টা মতামতের ঝড় ওঠে। জায়গা করে নেয় রাজনীতিও।

সায়কের তৈরি ফেসবুকের একটি পেজ ‘এত চুদুরবুদুর কেন’-র ফলোয়ারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৬ হাজারের বেশি। রাজ্যে বিধানসভা ভোট ঘোষণার পরে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে ‘ট্রল পলিটিক্স’ নামে একটি পেজ বানান সায়ক। মেমে বা রেজ-এ সেখানে রোজ হাজারের বেশি লাইক পড়ে, শেয়ার হয়।

জনপ্রিয়তা এতই যে এই মাধ্যমটিকে ধরার চেষ্টায় নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। তৈরি হয়েছে তৃণমূলের ‘প্রোবিশ্বাস’, বাম মতাদর্শে ‘নজর রাখছি’, কুৎসা এবং বিজেপির পক্ষে ‘কেচ্ছা’ নামে পেজগুলি। বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছে সেগুলি।

আর ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে মোবাইল থেকে ল্যাপটপে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE