Advertisement
১৯ মে ২০২৪

অধীরের প্রস্তাব শুনে হাসছে বাম

জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইছেন মহম্মদ সোহরাব। পাঁচ বারের কংগ্রেস বিধায়ক, এক কালে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক, ৮৩ বছরের সোহরাব আর একটা সুযোগ চাইছেন।

বিমান হাজরা
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইছেন মহম্মদ সোহরাব।

পাঁচ বারের কংগ্রেস বিধায়ক, এক কালে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক, ৮৩ বছরের সোহরাব আর একটা সুযোগ চাইছেন।

জঙ্গিপুর যে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, তা বুঝছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। তাই রাহুল গাঁধীর সভা থেকে সিপিএমের উদ্দেশে অধীর চৌধুরীকে বলতে হচ্ছে, কৃষ্ণগঞ্জ নাও, জঙ্গিপুর দাও।

বামেরা বলছে, ইল্লি আর কী! তৃণমূলের ডেরা কৃষ্ণগঞ্জের বদলে হাতের পাঁচ জঙ্গিপুর! নেহি চলেগা!

বিত্তশালী বিড়ি মালিক জাকির হোসেনের জোড়াফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়তেই যে কংগ্রেস প্রমাদ গুনেছে, তাতে সন্দেহ নেই। কংগ্রেসের ভোট কেটেই তৃণমূল বাড়ছে। বামেরা শক্তি ধরে রেখেছে অনেকটাই। সম্ভবত সে কারণেই অধীর বলছেন, “জঙ্গিপুরে সিপিএম প্রার্থী দেওয়ায় যদি মহম্মদ সোহরাব হেরে যান, আমরা জোটধর্ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলব।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের নিজের এলাকা জঙ্গিপুর। তিনি পাল্টা বলছেন, “কংগ্রেসই প্রথম জোটের শর্ত ভেঙে ডোমকল, হরিহরপাড়া ও সাগরদিঘিতে প্রার্থী দিয়েছে। অধীরবাবুর দেখানো পথেই জঙ্গিপুরে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হচ্ছে।”

গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হিসেবেই জয়ী হয়েছিলেন সোহরাব। সিপিএম প্রার্থী, মৃগাঙ্কবাবুর স্ত্রী পুর্ণিমা ভট্টাচার্যের পথে প্রধান কাঁটা হয়েছিল দলের অন্দরে ক্ষোভ। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে সাড়ে ৮ হাজার ভোটে পিছনে ফেলেছিল সিপিএম। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টিতে এবং রঘুনাথগঞ্জ ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে গরিষ্ঠতা রয়েছে বামেদেরই। জঙ্গিপুর পুরসভা তিন দশকেরও বেশি তাদের দখলে। এ হেন আসনে সিপিএমের জঙ্গিপুর জোনাল সম্পাদক সোমনাথ সিংহ রায় তাই অনেকটাই নিশ্চিন্ত।

ততটাই চিন্তিত সোহরাব। শেষ লগ্নের প্রচারেও কাঠফাটা রোদে ছাতা হাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। দরজা খুলেই প্রবীণ মাস্টারমশাইকে ‘স্যার এসেছেন’ বলে পায়ে হাত দিয়েছেন কেউ। ঘরে ঢুকে বসতে বলেছেন। তবু সংশয় যেন কাটছে না।

লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী, বসিরহাটের নুরুল ইসলামের সঙ্গে প্রায় সমানে পাল্লা দিয়েছিল বিজেপি। তারা আপাতত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ছন্নছাড়া। কংগ্রেসের দুর্গে অনেকটাই ফাটল ধরেছে। ফাটল ধরেছে সিপিএমেও, তবে তা তুলনায় কম। শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে তৃণমূলের। তার উপরে ধনী প্রার্থী দাঁড়ানো বিরোধীরা আতঙ্কিত।

কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “জঙ্গিপুরের বাতাসে টাকা উড়ছে। আর কোনও কেন্দ্রে এত পোস্টার, ব্যানার বা ফ্লেক্স চোখে পড়েনি। তার প্রভাবে যে কার যাত্রাভঙ্গ হবে, বলা মুশকিল।”

জাকির হোসেনের উত্থান মুলত বিড়ির হাত ধরে হলেও এখন তেল কল, ময়দা কল, চালকল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক। সুতিতে তাঁর দাদা লতিফুদ্দিন বিশ্বাস কংগ্রেসের নেতা হিসেবেই পরিচিত। প্রণব মুখোপাধ্যায় সাংসদ থাকাকালীন তাঁর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত ছিলেন জাকির। সে সব এখন অতীত। বরং জঙ্গিপুরে কামড় বসাতে তিনি মরিয়া।

রঘুনাথগঞ্জ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি তথা সোহরাবের নির্বাচনী এজেন্ট হাসানুজ্জামান বাপ্পা বলছেন, “এখানে লড়াইটা কঠিন তো বটেই। জোট হলে সহজ হত। তবু আমরা আশাবাদী। বুথভিত্তিক সংগঠন আছে, প্রার্থীর পরিচিতি আছে। হাজার-হাজার ছাত্র ছড়িয়ে আছে মাস্টারমশাইয়ের। ”

সোমনাথ এর আগে জেলা পরিষদ ভোটে জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন। যদিও সিপিএমের ‘মুক্তাঞ্চল’ গিরিয়া সেকেন্দ্রার অবদান ছিল সেই জয়ে। এ বার তিনি অবশ্য বেশ প্রত্যয়ী। বলছেন, “জঙ্গিপুরে জয়ের ব্যাপারে আমরা একশো শতাংশ নিশ্চিত।”

যা শুনে মুচকি হাসছেন জাকির। বলছেন, “কারও ভোট কাটার জন্য নয়। আমার লড়াই জেতার জন্যই।”

তবে কি ‘ওস্তাদের মার’ শেষ রাতেই হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE