Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বৈশাখেই উধাও গত জৈষ্ঠ্যের ‘হাওয়া’

মাঠে মানুষ এল বটে, তবে তাঁরা গাছের ছায়া বাড়ির কার্নিসের আড়ালটুকু ছেড়ে নড়বার উৎসাহ দেখালেন না। প্রথম বৈশাখের লু-এর কাছে ‘নমো হাওয়া যে বাস্তবিকই স্তিমিত রবিবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল আরও এক বার।

দু’বছর আগে, লোকসভা  ভোটের প্রাক্কালে মোদীর সভায় এমনই ভিড় দেখেছিল কৃষ্ণনগর (বাঁ দিকে)। এ বারে তপ্ত বৈশাখে ঘেমেনেয়ে একসা মোদী। খোঁজ মিলল না সেই ভিড়েরও।  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দু’বছর আগে, লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে মোদীর সভায় এমনই ভিড় দেখেছিল কৃষ্ণনগর (বাঁ দিকে)। এ বারে তপ্ত বৈশাখে ঘেমেনেয়ে একসা মোদী। খোঁজ মিলল না সেই ভিড়েরও। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

দু’বছর আগের জৈষ্ঠ্য এই বধির বোশেখের কাছে হেরেই গেল!

মাঠে মানুষ এল বটে, তবে তাঁরা গাছের ছায়া বাড়ির কার্নিসের আড়ালটুকু ছেড়ে নড়বার উৎসাহ দেখালেন না। প্রথম বৈশাখের লু-এর কাছে ‘নমো হাওয়া যে বাস্তবিকই স্তিমিত রবিবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল আরও এক বার।

কখনও ডিএল রায়ের গান আবার কখনও সরপুরিয়া, সরভাজার কথা। বাংলায় সটান জিজ্ঞেসও করে বসলেন, ‘‘আপনারা সোবাই কেমোন আছেন?’’ মন জয়ের হাজারো চেষ্টার পরে স্থানীয় কর্মীরা একটু চাঙ্গা হলেন বটে তবে, মোদীর সভায় ভিড় হারিয়ে গেল রোদ্দুরে।

তিনটে দশে তিনি যখন মঞ্চে উঠলেন তখন গেলো জলসভার সেই সোল্লাশ কোথায়? খচখচ করে মোবাইলে থেকে খান কয়েক ছবি উঠল বটে, তবে ওইটুকুই। জনপ্রিয়তা তাঁর পড়ে রইল সেই দূরেই। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের মাঠ দেখে এ দিন দলীয় এক কর্মীই বলে বসলেন, ‘‘মোদী এসেছেন তো!’’

জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থকে গাড়ি বোঝাই করে আসছিলেন কর্মীরা। ছোট ছোট মিছিল করে তারা মাঠে ঢুকছিলেন। সেই দিকে তাকিয়ে মোদী আসার কিছু আগেই দুই মাঝারি নেতা আলোচনা করছিলেন, ‘‘মাঠ ভরবে তো। তা না হলে সম্মান থাকবে না।’’ সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে নেমে বিজেপি নেতৃত্ব যে একেবারেই ‘ফেল’ তা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল মঞ্চের বাঁ দিকের বিশাল ফাঁকা সবুজ অংশটা। বারবার সে দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিচ্ছিলেন বিজেপি নেতৃত্বও।

অথচ প্রায় ১৭ বছর পরে এই শহরে দেশের কোন প্রধানমন্ত্রী পা দিলেন। জনসভা করলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই উন্মাদনা দেখা গেল না। অথচ এই সভার উপরেই বিজেপি-র ভোট বাগ্য যে সুতোর মতো ঝুলে ছিল তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন দলের এক জেলা নেতাই। বলছেন, ‘‘সে দিক থেকে আমরা ডাহা ফেল!’’

ভোটের হাওয়া বিজেপি ঠিক কতটা ধরে রাখতে পারবে সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করছিল এই সভার উপরে। ফলে মাঠ ভরানোর জন্য এতটুকু চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি জেলা নেতৃত্ব। বলা যায় সর্বশক্তি দিয়েই ঝাপিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টার ফল দেখে এরই মধ্যে নানা মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন,‘‘বিজেপি যে মানুষের থেকে বিচ্ছেন্ন হয়ে পড়ছে ফের দেখা গেল।’’ জেলা কংগ্রেসরে সভাপতি তথা কৃষ্ণনগর (উত্তর) কেন্দ্রর প্রার্থী অসীম সাহা বলছেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে মোদীর প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। এই সভা কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিল যে বিজেপিকে মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দেবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা তেহট্টের প্রার্থী গোরীশঙ্কর দত্ত বলেন,‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভায় আজকে উপস্থিতির ইঙ্গিত বহন করছে যে ২১ তারিখে তাদের ভোট কত শতাংশে নেমে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 heat wave Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE