Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে ফেরার মাওবাদী নেত্রীর মা-ও

এলাকার সব দেওয়ালে ‘কুলকুল, আবার জিতবে তৃণমূল’। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ বুথে দেখা গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে বাঙালি বেশি। তাঁদেরই এক জন বললেন, “কোনও সমস্যা নেই। এত ভাল ভোট ভাবা যায় না।” সত্যিই ভাবা যায় না! সোমবার ভোট-পরবের সকালটা শুরু হয়েছিল বিস্তর ঝঞ্ঝাট দিয়ে। নির্বাচন কমিশনের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখেও না-খুশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বুথের ত্রিসীমানা মাড়াতে দিলেন না।

ভোট দিতে যাওয়ার আগে জবা মাহাতোর মা লুলকি মাহাতো। জামিরডিহা গ্রামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ভোট দিতে যাওয়ার আগে জবা মাহাতোর মা লুলকি মাহাতো। জামিরডিহা গ্রামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বিনপুর থেকে কিংশুক গুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪২
Share: Save:

এলাকার সব দেওয়ালে ‘কুলকুল, আবার জিতবে তৃণমূল’। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ বুথে দেখা গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে বাঙালি বেশি। তাঁদেরই এক জন বললেন, “কোনও সমস্যা নেই। এত ভাল ভোট ভাবা যায় না।”
সত্যিই ভাবা যায় না! সোমবার ভোট-পরবের সকালটা শুরু হয়েছিল বিস্তর ঝঞ্ঝাট দিয়ে। নির্বাচন কমিশনের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখেও না-খুশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বুথের ত্রিসীমানা মাড়াতে দিলেন না। বিনপুরের ভাগাবাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের বাইরে থাকা সিআরপি জওয়ান পরিচয়পত্র দেখে বললেন, “ইয়ে সব বকওয়াস হ্যায়। হঠো ইয়াসে।” কেন? জবাব নেই। দূরের তৃণমূলি জমায়েত থেকে মন্তব্য উড়ে এল, ‘‘একদম ঢুকতে দেবেন না স্যার।” থাকা নিরাপদ নয় বুঝে এগিয়ে চললাম বেলপাহাড়ির দিকে। সেখানকার এসসি হাইস্কুলের বুথেও পরিচয়পত্র দেখে ঢুকতে দিলেন না কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বললেন, “পারমিশন নহি হ্যায়।” একরাশ বিরক্তি আর অপমান হজম করে শিমুলপাল অঞ্চলের ধোবাকাচা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে দেখা গেল স্থানীয় তৃণমূল নেতা পরেশ হেমব্রম বুথ চত্বরে ভোটারদের নজরদারি করছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে। পরেশবাবু দাবি করলেন, তিনিও ভোটার। ফলে তাঁর দাঁড়ানোর অধিকার আছে। কিন্তু ভোট দেওয়ার পরে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? এ বার পরেশবাবুর সাফাই, “এই চড়া রোদে লোকজন ভোট দিতে আসছেন। কে, কী ভাবে আসছেন, ফিরে যাচ্ছেন না দেখলে চলবে কী করে!” ততক্ষণে ঘাড় ধাক্কা খেয়ে কয়েকটি বুথ থেকে সটকে পড়েছেন বিরোধী পোলিং এজেন্টরা।
ফের আমলাশোল গ্রামের বুথ চত্বরে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার ছবি তুলতে বাধা দিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ঘটনাচক্রে ঝাড়গ্রামের এসপি সুখেন্দু হীরা এসে পৌঁছনোয় ছবি তুলতে দেওয়া হল।

পূর্ণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে আবার অন্য দৃশ্য। ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় এক বৃদ্ধার হাতে টাকা গুঁজে দিলেন দুই যুবক। কড়কড়ে একশো টাকার নোট পেয়ে বৃদ্ধার মুখে হাসির ঝিলিক। ‘হ তুদেরই ভট দিঞছি’। আপনারা কী তৃণমূল? এ প্রশ্নের জবাব এল হাসিমুখে, “হ্যাঁ, মানে না, ওই আর কি।” কেন টাকা দিচ্ছেন? এ বার তিরিক্ষি জবাব এল, “মানুষের সেবা করলেও দোষ?” ঢাঙিকুসুম গ্রামের নিতাই সিংহ ও তাঁর স্ত্রী বাসন্তী সিংহ ভোট দিয়ে হাতে ছোলা-মুড়ির প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কারা মুড়ির প্যাকেট দিল? বাসন্তীদেবী বলেন, “ওই পার্টির ছেলেরা।......।” স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে হাত টেনে জোরে পাহাড়ি চড়াই পথে হাঁটা দেন নিতাইবাবু। তাঁদের সঙ্গী এক প্রৌঢ় অবশ্য জানালেন, গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় তৃণমূলের ধমক-চমক চলছে। গ্রামে গ্রামে পাড়া বৈঠকের পরে প্রতিটা গ্রাম-সংসদে মাংস-ভাত আর হাঁড়িয়ার ‘ফিস্টি’ (বনভোজন) হয়েছে। ভোট দিলে মিলেছে করকরে টাকা।

তৃণমূলকে ভোট না দিলে মাওবাদীরা আসবে বলে লবনিতে পোস্টার পড়েছিল। সেই লবনি থেকে অনেকটাই দূরে জামিরডিহা। এই গ্রামেই বাড়ি ফেরার মাওবাদী নেত্রী জবা মাহাতোর। তাঁর মাটির বাড়ির দেওয়ালে সিপিএমের প্রচার লিখন। তবে জবার মা লুলকি মাহাতো বাড়ির দাওয়ায় বসে জানালেন, এখন তৃণমূলের হাওয়া। একমাত্র ছেলেও তৃণমূল সমর্থক। ভোট দেবেন? লুলকিদেবীর জবাব, “সমাজে থাকি, ভোট দিতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE