Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩
জল্পনা খড়্গপুরে

চাচা-কাহিনির সমাপ্তি কোন অঙ্কে

চিত্র এক: গত পুরভোটে খড়্গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু পুরবোর্ড গঠনের আগে দলবদলে তৃণমূলে চলে যান সুনীতা গুপ্ত। তিনি দলবদল করলেও এলাবাসীর মন কিন্তু বদলায়নি। ওই ওয়ার্ডে এ বার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৫৩৪টি ভোট। আর ৫৪৮টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

চিত্র এক: গত পুরভোটে খড়্গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু পুরবোর্ড গঠনের আগে দলবদলে তৃণমূলে চলে যান সুনীতা গুপ্ত। তিনি দলবদল করলেও এলাবাসীর মন কিন্তু বদলায়নি। ওই ওয়ার্ডে এ বার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৫৩৪টি ভোট। আর ৫৪৮টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। কাউন্সিলর সুনীতাও বলছেন, ‘‘পুরভোটে যে গুন্ডামি চলেছিল তা মানুষ মানতে পারেনি। আমরাও চাপের মুখে দলবদল করেছিলাম।’’

Advertisement

চিত্র দুই: তিনি তৃণমূলের শহর সভাপতি। আবার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। সেই দেবাশিস চৌধুরীর ওয়ার্ডেও ১৯৭৪টি ভোট পেয়ে বিজেপি-ই তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আর ৬১৩টি ভোট তৃণমূল তৃতীয়। দেবাশিসবাবু নিজে বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে মানুষ এ টুকু ভোট দিয়েছে। নেত্রী এখানে না এলে আমরা এটুকুও ভোট পেতাম না।’’

চিত্র তিন: সিপিএমের খড়্গপুর শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের এলাকা ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও এগিয়ে বিজেপি প্রার্থী। গত পুরভোটে এই ওয়ার্ড থেকে সিপিএম প্রার্থীই জেতেন। যদিও এ বারে চিত্রটা উল্টো। জোট প্রার্থীর থেকে বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে রয়েছে ৪৩৬টি ভোটে। এমন কেন হল? সিপিএম জোনাল সম্পাদক অনিতবরণবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা বিজেপিকে ভোট দেওয়ায় আমরা পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের ওয়ার্ডের ফল সেই কথাই বলছে।’’

সিপিএম নেতাদের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরই দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বিজেপি-তৃণমূল আঁতাতের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে খড়্গপুরের কথাও তুলে ধরেন তিনি। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের মতেও, তৃণমূলের একাংশের ভোট না পেলে এ ভাবে বিজেপির পক্ষে জেতা সম্ভব হত না। শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডে ‘লিড’ পেয়েছেন দিলীপবাবু। সেই কারণেই কংগ্রেস ও বামেদের মিলিত ভোটেও চাচার বিজয়রথের গতি ধরে রাখা যায়নি।

Advertisement

গত বছর খড়্গপুরে পুরভোটে বিজেপি ৭টি আসন পায়। পরে পাঁচ জন বিজেপি কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও ওই পাঁচ জন কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে এ বার ফের বিজেপি প্রার্থী ‘লিড’ পেয়েছে। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা কাউন্সিলর লক্ষ্মী মুর্মুর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪৩৯টি ভোটে, সুনীতা গুপ্তর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫৩৪টি ভোটে, জগদম্বাপ্রসাদ গুপ্তর ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪১৭টি ও বেলারানি অধিকারীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৭৯টি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পুরভোটে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন খড়্গপুরে রেল মাফিয়া হিসেবে পরিচিত শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজাদেবী। যদিও তিনিও পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর ওয়ার্ডে বিজেপি ১৪৮৫ ভোটের ‘লিড’ পেয়েছে।

পুরভোটের পর দল বদল করা কাউন্সিলরদের দাবি, পুরসভা নির্বাচনের পরে শহরে যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধেই এ বার শহরের মানুষ ভোট দিয়েছে। পূজাদেবী বলেন, ‘‘শহর তৃণমূল কার্যালয়ে দলের প্রার্থীকে ঘিরে যে ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল তা মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। ভোটের আগে ভেবেছিলাম আমার ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতবে। কী হয়েছে বুঝতে পারছি না।’’

শুধু বিজেপি নয়, তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেক ওয়ার্ডেও গেরুয়া শিবিরের ফল ভাল হয়েছে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের ওয়ার্ডে বিজেপি ২৩৪৩টি ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে। সেখানে তৃণমূল মাত্র ৬২০টি ভোট পেয়ে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এ নিয়ে পুরপ্রধান প্রদীপবাবুর ব্যখ্যা, “বিজেপি প্রার্থী মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে ভোট জয় করেছে। নরেন্দ্র মোদী, সুরেশ প্রভু খড়্গপুরে প্রচারে আসাতেও একটা প্রভাব পড়েছে। অনেক মানুষ ভেবেছেন, রেল এলাকায় থাকা ওয়ার্ডে এ বার উন্নয়ন হবে। তাই বিজেপি ওই এলাকার ওয়ার্ডেও বেশি ভোট পেয়েছে।’’

কংগ্রেস ও সিপিএমের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলিতেও থাবা বসিয়েছে বিজেপি। এ বিষয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের নীচু তলায় সমঝোতা হওয়ায় বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের ভোট তৃণমূলের পক্ষে গেলে তো আমরাই জিততাম।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘দেরিতে প্রচারে নানা ও চাচার বয়স ‘ফ্যাক্টর’ হয়েছে ঠিকই। তবে শহরের সব ওয়ার্ডে বিজেপির এগিয়ে যাওয়ার পিছনে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাত কাজ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.