Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আরাবুল ‘হেরো’, ভাঙড়ে শান্তি চাইছেন রেজ্জাক

নতুন ভাঙড় গড়তে হবে! তাই ভোটের ফল ঘোষণার পর গলায় গামছা জড়িয়ে দলীয় সমর্থকদের শপথ পাঠ করাচ্ছেন ‘চাষার ব্যাটা’ রেজ্জাক মোল্লা। তাঁর ফরমান, ‘‘আনন্দ কর। উৎসব কর। কিন্তু বিরোধী দলের অফিস ভাঙচুর করা চলবে না।’’ কারণ, দলীয় অফিস সব রাজনৈতিক দলের ‘সম্মানের জায়গা’। সেখান হামলা করা মানে নিজেদেরই ‘খাটো’ করা।

পাশে কাইজার আহমেদ। ঘটকপুকুরের কর্মিসভায় রেজ্জাক মোল্লা। — নিজস্ব চিত্র

পাশে কাইজার আহমেদ। ঘটকপুকুরের কর্মিসভায় রেজ্জাক মোল্লা। — নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

নতুন ভাঙড় গড়তে হবে! তাই ভোটের ফল ঘোষণার পর গলায় গামছা জড়িয়ে দলীয় সমর্থকদের শপথ পাঠ করাচ্ছেন ‘চাষার ব্যাটা’ রেজ্জাক মোল্লা। তাঁর ফরমান, ‘‘আনন্দ কর। উৎসব কর। কিন্তু বিরোধী দলের অফিস ভাঙচুর করা চলবে না।’’ কারণ, দলীয় অফিস সব রাজনৈতিক দলের ‘সম্মানের জায়গা’। সেখান হামলা করা মানে নিজেদেরই ‘খাটো’ করা।

গত শুক্রবার থেকে ভাঙড়ের নানা জায়গায় গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের এ ভাবেই সতর্ক করেছেন রেজ্জাক। ভাঙড়ের ইতিহাসে যেন উলটপুরাণ। শনিবার বিকেলে কাইজার আহমেদকে পাশে নিয়ে ঘটকপুকুরে ভাঙড় এক ও দুই নম্বর ব্লকের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বসেছিলেন তিনি। রেজ্জাক সেখানে বলেন, ‘‘নির্বাচন শেষ। লড়াই খতম। উত্তেজনা ঝেড়ে ফেলতে হবে। একই পাড়ায়, একই বাজারে সবাই থাকবে। হুজ্জতি সহ্য করা হবে না।’’

নির্বাচনের পর ভোগালি-২ ও শোনপুর এলাকায় বিরোধী সমর্থকদের দোকান ভাঙচুর ও মারের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই বৈঠকে এলাকার নেতাদেরও সতর্ক করেন রেজ্জাক।

সিপিএম-কে ‘সবক’ শেখাতেই তিনি সেই দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে রেজ্জাকের দাবি। জোড়া ফুল প্রতীকে জয়ী হওয়ার পর তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি। তবে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, এর পাশাপাশিই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা শুরু করেছেন রেজ্জাক। কোনও এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হলে রাজনৈতিক রং বিচার না করে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পুলিশের বিষয়ে রেজ্জাক বলেন, ‘‘ভাঙড় বিধানসভার অধীনে থানার ওসিদের বলে দিয়েছি, অভিযোগ পেলে অপরাধের মাত্রা অনুয়ায়ী হাজতে পাঠিয়ে দেবেন। আর তা না করলে আপনাদের বিরুদ্ধে আমিই ব্যবস্থা নেব।’’

ভাঙড় এলাকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, যে কোনও নির্বাচনের পরই ভাঙড় এলাকায় বিরোধীদের বাড়ি ভাঙা ও ঘরছাড়া করা একটা রীতি হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ, ইদানীং কালে সেই সন্ত্রাসের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন আরাবুল ইসলাম। তাঁর নেতৃত্বেই সম্প্রতি সব ক’টি ভোটেই ফলাফলের পর রাতে গ্রামে-গ্রামে বিরাধীদের বাড়ি ভাঙচুর করা হত। অবশ্য এ বার ভোটে রেজ্জাকের বিরুদ্ধে আরাবুলই অন্তর্ঘাতের চেষ্টা করেছিলেন— এই অভিযোগে তৃণমূলের মধ্যেই অসন্তোষ। সে দিক থেকে রেজ্জাক জেতার পর আরাবুলের হতাশ হওয়ারই কথা। তবু এ বারও ভোটের পর সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল। কিন্তু রেজ্জাক সাহেব নিজেই এলাকায় ঘোরা শুরু করেছেন। পুলিশকেও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। সেই কারণে ভাঙড় প্রায় শান্ত হয়ে গিয়েছে।

শনিবার বৈঠকেই ভাঙড় লাগোয়া চন্দনেশ্বর গ্রামে সিপিএমের একটি অফিস ভাঙচুর হয়েছে। তবে ওই সিপিএম অফিস ক্যানিং (পূর্ব) বিধানসভা এলাকায়। ওই এলাকায় জিতেছেন একদা রেজ্জাকের ডান হাত সওকত মোল্লা। কয়েক জন সমর্থকের কাছ থেকে ওই সিপিএম অফিস ভাঙার বিষয়টি শোনার পর রেজ্জাক বিড়বিড় করে বলেন, ‘‘এ সব করে কী যে আনন্দ হয়, তা বুঝি না। দিদিমণিও তো বলেছেন, শান্তি রাখতে।’’

শুধু নতুন ভাঙড় গড়ার শপথ নয়। আরাবুল জমানা যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে সমর্থকদের ইঙ্গিত দিয়েছেন রেজ্জাক। সমর্থকদের রেজ্জাক বলেন, ‘‘ভাঙড় কলেজে পঠনপাঠনের পরিবেশ ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেছি।’’ উল্লেখ্য, ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুল। আর আরাবুলের ছেলে হাকিবুল গত ছ’বছর ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক। গত পাঁচ বছর কলেজে কোনও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘জুন পর্যন্ত ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের মেয়াদ রয়েছে। তার পর হয়তো আরাবুলকে আর নির্বাচিত করা হবে না। ইতিমধ্যে ছাত্র সংসদে তালা ঝুলে গিয়েছে। রেজ্জাক সাহেবের নির্দেশে এক ছাত্রনেতাকে কলেজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু এলাকায় নির্বাচনোত্তর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ নয়, সামগ্রিক ভাবে ভাঙড়ের পরিবেশ ফেরানোর চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন রেজ্জাক সাহেব।’’

যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘রেজ্জাক সাহেব হয়তো তাঁর কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছেন। বিভিন্ন এলাকায় মারধর বন্ধও হয়েছে। তবে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল, রেশন কার্ড কে়ড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ সিপিএমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেজ্জাকের অবশ্য জবাব, ‘‘নিদিষ্ট ভাবে জানাক। সব ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতাদের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE