Advertisement
০২ মে ২০২৪

নজিরবিহীন তল্লাশিতে ‘চমকিত’ পাড়া

শনিবার রাত ১২টা। বাইপাস থেকে বেলেঘাটা হয়ে সল্টলেকে ঢুকতেই দেখা গেল অন্ধকারের মধ্যে সার দিয়ে গাড়ি। গার্ড-রেল দিয়ে রাস্তার পরিসর কমানো।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

শনিবার রাত ১২টা। বাইপাস থেকে বেলেঘাটা হয়ে সল্টলেকে ঢুকতেই দেখা গেল অন্ধকারের মধ্যে সার দিয়ে গাড়ি। গার্ড-রেল দিয়ে রাস্তার পরিসর কমানো। রাজ্য পুলিশ ছাড়াও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে হাজির কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং অফিসারেরা।

দুই জওয়ান এগিয়ে এলে প্রথম যা কানে এল, তা হল, ‘‘অন্দর কি বাত্তি জ্বলা দিজিয়ে।’’ এর আগে শপিং মলে বা রাতে সল্টলেকে ঢুকতে গিয়ে যে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে, কোথাও এমনটা হয়নি। আলো জ্বালাতেই বাইরে থেকে পিছনের আসনের দিকে, আসনের সামনে পা রাখার জায়গা দেখে নিলেন এক জওয়ান। অন্য জনের নির্দেশ এল, ‘‘ডিকি খোলিয়ে।’’

শুধু চোখ বোলানো নয়, ডিকিতে খুঁটিনাটি কী কী রয়েছে, টর্চের আলোয় দেখে নেওয়া হল তা-ও। সন্তুষ্ট হলে বলা হল, ‘‘যাইয়ে।’’ দু’তিনটে গাড়ি পাশে দাঁড় করানো ছিল। বোঝাই গেল, সেগুলি নিয়ে সন্তুষ্ট নন জওয়ানেরা।

সাত মাস আগে সল্টলেকের পুর-ভোটে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল বহিরাগতরা। অবাধে বুথে চেয়ার পেতে বসে ভোট পরিচালনা করতে দেখা যায় তাদের। মূলত তাদের আটকাতেই গত শনিবার থেকে সল্টলেক জুড়ে এমন নজিরবিহীন নাকাবন্দি শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকার ২৫-৩০ বছরের বাসিন্দারা।

রবিবার সকালে বৈশাখী থেকে করুণাময়ী যাওয়ার মুখে বাস দাঁড় করিয়ে উঠে পড়েন তিন উর্দিধারী। দু’জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। বাসে মেরেকেটে জনা ১৫ যাত্রী। তাঁদের ব্যাগ দেখে-শুনে নেমে যান তাঁরা।

শনিবার সন্ধ্যায় বাইপাস টপকে সিএ ব্লকে বাড়ি ফিরছিলেন এক যুবক। বাইপাস থেকে একটি ছোট গলি পেরিয়ে শর্টকাটে ব্লকে ঢোকা যায়। সেই গলিতেই পথ আটকাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। কাছেই বন্ধুর বাড়িতে যাওয়া, হাফ-প্যান্ট পরা যুবককে প্রশ্ন, ‘‘আপনি সল্টলেকের বাসিন্দা, তার প্রমাণ আছে? ভোটার কার্ড আছে?’’ স্বভাবতই সঙ্গে ভোটার কার্ড নিয়ে তিনি বেরোননি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে থাকা স্থানীয় পুলিশের মধ্যস্থতায় শেষে বাড়ি ফিরতে পারেন যুবক।

তবে উল্টো ছবিও আছে। দীর্ঘদিনের বাসিন্দারা বলছেন, বাইপাস টপকে এলেই তো সল্টলেক। উল্টোডাঙা থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত দত্তাবাদের অরক্ষিত বসতি। বাইপাস টপকে সেই বসতি হয়ে অনায়াসে ঢোকা যাবে সল্টলেকে। একই ভাবে সুকান্তনগরের দিক থেকেও ঢোকা যায়। বড় রাস্তার মুখে তল্লাশি চললেও অরক্ষিত এমন বহু অলিগলি দিয়ে হেঁটে সল্টলেকে ঢুকতে পারে বহিরাগতেরা। এমনকী, এমন অনেক গলি দিয়ে অটো নিয়েও ঢোকা যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সব পথেই পুরভোটের আগে এসেছিল বহিরাগতেরা।

সল্টলেকের প্রবেশ পথে বিশেষত রাতে এ ভাবে গার্ড-রেল রাখার রেওয়াজ বহু দিনের। বছরের অন্য সময়ে কেউ পথ আটকান না। কখনও দেখা যায়, উর্দিধারী দুই ব্যক্তি দূরে চেয়ারে। গার্ড-রেল পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় গাড়ি। কখনও দেখা যায়, আশপাশে পুলিশের নামগন্ধ নেই।

এর আগে বিধানসভা বা পুরভোটের ঠিক আগে, গার্ড-রেলের সামনে কিছুটা দেখা গিয়েছে পুলিশি তৎপরতা। সাত মাস আগে সল্টলেকের পুরভোটে বহিরাগতদের গোলমালের আশঙ্কায় আগের রাত থেকে তল্লাশি হয়। কিন্তু সে বার রাতে বাইরে থেকে সল্টলেকে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল, বাছাই করা কিছু মালবোঝাই গাড়িকেই শুধু আটকে কথা বলছে পুলিশ। যার ফল পুরভোটের দিন হাড়ে হাড়ে টের পায় সল্টলেক।

শনিবার কিন্তু সল্টলেকে ঢোকা সব গাড়িতেই জোর তল্লাশি হয়। একই ছবি ছিল রবিবারেও। আগে তল্লাশির নামে কখনও গাড়ি এক বার দাঁড় করিয়ে কাচ নামাতেই ‘কোথা থেকে আসছেন, বাড়ি কোথায়’ গোছের প্রশ্ন করে অন্ধকারে উঁকিঝুঁকি মেরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আলো জ্বালাতে বলা হয়নি। রাজ্য পুলিশকে এ ভাবে গাড়ির ডিকি খুলে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি শপিং মলে বা পাঁচতারা হোটেলের প্রবেশপথে ডিকিতে থাকা জ্যাক হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতেও। শনিবার রাতে ডিকিতে রাখা হাইড্রোলিক জ্যাক দেখে সামান্য সন্দেহ হতে তা নিয়ে প্রশ্ন করতেও দেখা গেল বাহিনীর জওয়ানকে। সন্দেহ মিটতে তবেই বলেছেন, ‘‘সাব, আপ যা সকতে হো।’’

শনি-রবিবার সেখানে মোটরবাইক ও গাড়ি থামিয়ে ডিকি তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভিআইপি রোড থেকে যে সেতুগুলি টপকে খাল পেরিয়ে কেষ্টপুর, লেকটাউন থেকে মানুষ সল্টলেকে ঢোকেন, সেখানে বহু মানুষের পথ আটকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। চলেছে জিজ্ঞাসাবাদ। ওই সব এলাকা থেকে বহু মানুষ সল্টলেকের বাড়িতে ঠিকা পরিচারিকার কাজ করতে আসেন। অনেকে সল্টলেকে অন্যান্য নানা কাজে যুক্ত। কার্যত তাঁদের মঙ্গলবারের আগে ঢুকতে বারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরিচারিকারা আসতে না পারায় সমস্যায় পড়েছেন সল্টলেকেরই বেশ কিছু বাসিন্দা।

নিরাপত্তা যেন এতটাই আঁটোসাঁটো থাকে শেষ পর্যন্ত— সেই আশাতেই এখন প্রহর গুনছে গোটা সল্টলেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

security assemby election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE