ভোটের সামগ্রী বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছে গোড়ায় মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের সুকান্তপল্লি প্রাথমিক স্কুলের বুথে ভোটকর্মীর দায়িত্ব পড়েছে। ভোটের আগের দিন, ১০ এপ্রিল ইভিএম-সহ নানা জিনিসপত্র নিতে পৌঁছে গেলাম দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজে। দেখি, প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আলাদা কাউন্টার। মনে করলাম, যাক, শান্তিতে কাজ হবে। ভুল ভাঙল অচিরেই।
মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশনের কাউন্টারে গিয়ে দেখি, অশান্তির একশেষ। চিৎকার-চেঁচামেচি চলছে। বিএসএনএলের গ্রাহকেরা এসএএমএস পাঠালেও তা কম্পিউটারের পর্দায় আসছে না। ফলে, আবার এসএমএস করতে হচ্ছে। অনেকেই ক্ষোভ জানাচ্ছেন, এসএমএস করতে করতে ফোনের ব্যালান্স শেষের পথে। অনেকে আবার বলছেন, হাত ব্যথা হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমার দলের প্রথম ও তৃতীয় পোলিং অফিসারের মোবাইল নম্বর দিয়ে সামাল দেওয়া গেল। দু’জনেরই বিএসএনএল নয়, অন্য সংস্থার সংযোগ।
ওই কাউন্টার থেকে বেরিয়ে ভোটের সামগ্রী আনতে গিয়ে দেখি, লাল মোরামের রাস্তায় শত-শত ভোটকর্মীর আসা-যাওয়ায় প্রায় ধুলোর ঝড় উঠেছে। একে প্রবল গরম, তার উপরে আবার লাল ধুলোয় সবাই নাজেহাল। জামাকাপড়ের হালও দাঁড়িয়েছে সেই রকম। লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটের জিনিসপত্র নেওয়ার পরে বুথে যাওয়ার বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হল আরও ঘণ্টা দেড়েক।
পরের চমক অপেক্ষা করছিল বুথে। প্রাথমিক স্কুল। খুদেদের বসার জন্য বেঞ্চগুলি ছোট ও নিচু। তাতে ভোটের কাজকর্ম করা রীতিমতো সমস্যার। কর্তারা এই বিষয়টির দিকে একেবারেই নজর দেননি। তিনটি বুথের মোট ১২ জন ভোটকর্মী, সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে খাবার জল তো দূর, হাত-মুখ ধোওয়ার জলটুকুও নেই। বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) নম্বর জোগাড় করে ফোন করলাম। সাড়া মিলল না। শেষে পাশের বাড়ি থেকে পানীয় জল চেয়ে আনলাম।
খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। সেই সুযোগে এলাকারই এক জন মাথা পিছু আড়াইশো টাকায় দু’বার খাবার এবং দু’বার চা দেওয়ার কথা জানালেন। খাবারের গুণমানের ব্যাপারে আশ্বাস-সহ একটা ছোটখাট ভাষণও দিলেন। নিমরাজি হলেও মেনে নিতে বাধ্য হলাম। তবে যে খাবার এসে পৌঁছেছিল, তার গুণমান সম্পর্কে আলোচনা যত কম করা যায় ততই ভাল। রাত ৯টা নাগাদ সেক্টর অফিসার ২০ লিটার পানীয় জল ও শৌচাগারের জন্য এক ট্যাঙ্ক জলের ব্যবস্থা করলেন। রাত ১২টা নাগাদ ঘুমোনোর চেষ্টা করলাম। সে জন্য মশার সঙ্গে খানিক লড়াই হল। রাত ৩টে নাগাদ বিদ্যুৎ চলে গেল। ভয়াবহ গরমে তখন নাজেহাল দশা। ঘর থেকে বাইরে বেরোলাম। অন্ধকারেই স্নান সেরে শরীর একটু ঠান্ডা হল।
ভোট অবশ্য হল শান্তিপূর্ণ ভাবেই। সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণ শেষে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে যানজটে গরমে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পরে ডিসিআরসি-তে পৌঁছে সব জমা দিলাম। ভোটের আগে অনেক সময়েই খবর মেলে, নির্বাচনের কাজে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন কর্মীরা। ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরে বাড়ি ফেরার পথে বারবারই মনে হচ্ছিল, অধিকাংশ মানুষ বোধহয় ভোটের ডিউটিতে যেতে চান না এই অব্যবস্থার কারণে।
(লেখক লাউদোহার নতুনডাঙা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy