Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এ বারে উঠে পড় বাবা, ভোটটা তো পার করে দে

কাক ভোরে ওঠা তাঁর ধাতে নেই। তবে ভোটের-ভোরে ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল বেশ সকালেই। সিংহ বাগানের সাদা বাড়িটার ঝুল-বারান্দায় দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙার ফাঁকেই খেয়াল হল, ‘ছেলেগুলো’ উঠেছে তো! হাঁক পাড়ালেন— ‘‘এ বার ওঠ বাবা, আজকের দিনটা অন্তত পার করে দে!’’ পৌনে ছ’টার চা মুখে তোলার আগেই বেজে উঠল ফোনটা। বৃহস্পতিবার ভোটবেলা তাঁর শুরু হল এ ভাবেই।

তখনও ভোট চলছে। —নিজস্ব চিত্র

তখনও ভোট চলছে। —নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

কাক ভোরে ওঠা তাঁর ধাতে নেই। তবে ভোটের-ভোরে ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল বেশ সকালেই। সিংহ বাগানের সাদা বাড়িটার ঝুল-বারান্দায় দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙার ফাঁকেই খেয়াল হল, ‘ছেলেগুলো’ উঠেছে তো! হাঁক পাড়ালেন— ‘‘এ বার ওঠ বাবা, আজকের দিনটা অন্তত পার করে দে!’’ পৌনে ছ’টার চা মুখে তোলার আগেই বেজে উঠল ফোনটা। বৃহস্পতিবার ভোটবেলা তাঁর শুরু হল এ ভাবেই।

—‘‘হ্যালো দাদা, আরবান্দি ১৯ নম্বর বুথের ভোটার যন্ত্রে গোলযোগ দেখা দিয়েছে। আপনার নামের পাশে বোতামটি ঠিক মতো কাজ করছে না কিন্তু!’’

স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে নিদান দিচ্ছেন তিনি, ‘‘বেশি গণ্ডদোল করিস না। যা করার ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে।’’

রাতে মাত্র ঘণ্টা কয়েক ঘুম হয়েছে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের জোট প্রার্থী শঙ্কর সিংহের। এ দিন সকালেও তাই এক চোখ ঘুম নিয়েই চা নিয়ে বসেছিলেন। বলছেন, ‘‘ওই ফোনটাই সব আলসেমি কেড়ে নিল।’’ তার পরে থেকে একের পর এক ফোন এসেছে তাঁর কাছে। কখনও নবলায় ভোটার যন্ত্র খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে কখনও বা কালিনারায়নপুরের বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের পক্ষপাতিত্ব। আঁইশতলা সন্ন্যাসীবাগান থেকে ছুটে এল ফোন— ‘‘বুথের মধ্যে রাজ্য পুলিশের কর্মীরা ঢুকে পড়েছেন দাদা। ওরা আমাদের কর্মীদের বেরিয়ে যেতে বলছেন। কী করব?’’ পরামর্শ, নিদান কখনও বা ‘দেখছি’ বলে সটান ধরছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের— ‘‘এ বার অন্তত সেন্ট্রাল ফোর্সকে সতর্ক করুন!’’

দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তিনি। এ দিক সকাল থেকেই তিনি কর্মীদের বুঝিয়ে গিয়েছেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট করিয়ে নেওয়ার জন্য। তার পরামর্শে কোথাও কোথাও কাজ করেছে, কোথাও হয়তো তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। তবে দিনান্তে তা নিয়ে শঙ্করকে অন্তত তেমন শঙ্কিত দেখাচ্ছে না। বলছেন, ‘‘শুধু আমি কেন, গোটা নদিয়া জেলাতেই ভাল ভোট হয়েছে।’’ যার আড়ালে ইতিবাচক ইশারাই দেখছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা।

তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘দাদা ভোটটা মোক্ষম বোঝেন। ওঁর শরীরী ভাষা থেকেই স্পষ্ট শুধু রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম নয়, জেলার অন্যত্রও ভাল ফল করবে জোট।’’

বেলা বাড়লে পরিবারের সকলকে নিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকারও রক্ষা করে এসেছেন তিনি। বেলা দশটা নাগাদ, চাকদহ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিলেন আর পাঁচ জনের মতো লাইনে দাঁড়িয়েই। সেখানে তাঁকে দেখেই হাতজোড় করে এগিয়ে আসতে দেখা গেল স্থানীয় বাসিন্দাদের। চড়া রোদে পুরনো ছায়া ঢাকা শঙ্কর যেন বেরিয়ে এলেন প্রতি নমস্কারে। তার ভোট দেওয়ায় খুশি ওই কেন্দ্রের ভোটার থেকে বিরোধী দলের লোকেরা। লাইনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা বলেন, ‘‘ভাগ্যিস শঙ্করদা লাইনে দাঁড়িয়েছিল। তাই, আমরা একটু নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারলাম। সকাল থেকে চাকদহ শহরে বিভিন্ন জায়গায় ভোট কেন্দ্রেগুলিতে যা হচ্ছিল, তাতে বুঝতে পারছিলাম না, এত শান্তিতে ভোট দিতে পারব।’’

বেলা ১২টা নাগাদ ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে আর সময় নষ্ট করেননি। কোনও রকমে হাত মুখ ধুয়ে সোজা চলে আসেন রানাঘাট শহরের বিশ্বাসপাড়ায় সিপিএমের রানাঘাট জোনাল অফিসে। সকাল থেকে জোনাল কমিটির সদস্য অয়ন মিত্র, রানাঘাট লোকাল কমিটির সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী সহ অনান্যরা দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।

একদা যে অফিসের ছায়া মাড়াতেন না এ দিন দিনভর সেখানেই বসে ছিলেন শঙ্কর। সঙ্গে দলীয় কর্মীদের চেয়ে সিপিএম কর্মী-নেতাদের ভিড়ই ছিল বেশি।’’ অবাধ নৈকট্যের তাঁরা পরস্পরকে এগিয়ে দিয়েছেন জলের বোতন কিংবা চায়ের কাপ। যা দেখে বুক বাঁধছেন দলীয় কর্মীরা। বলছেন, ‘‘এ বার দেখুন এখান থেকেই শুরু হবে আমাদের যাত্রা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Shankar Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE