Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভোটারদের ডাকতে ইডলি-চাটনি

সকাল থেকেই এলাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছে। বুথ লুঠের কোনও সম্ভাবনা নেই। ভোটারকে ভয় দেখানোর পথ বন্ধ। সন্ত্রাসের পথ বদল করে মন ভেজানোর চেষ্টায় শাসক দল।


ভোটের ভোজন। সিংহীবাগানে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

ভোটের ভোজন। সিংহীবাগানে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

শুভাশিস ঘটক ও শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

সকাল থেকেই এলাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছে। বুথ লুঠের কোনও সম্ভাবনা নেই। ভোটারকে ভয় দেখানোর পথ বন্ধ। সন্ত্রাসের পথ বদল করে মন ভেজানোর চেষ্টায় শাসক দল। বাড়ি বাড়ি ইডলি-চাটনি বিলি করে। শুধু বাড়ি বাড়ি নয়, জোড়াসাঁকো কেন্দ্রের সিংহীবাগান এলাকায় বুথমুখী ভোটারদের হাতে তুলে দিয়েছেন শালপাতার ঠোঙায় ইডলি-চাটনি।

গত পুর নির্বাচনে শাসকদলের সন্ত্রাসে সিংহীবাগান এলাকায় বুথের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। মারধরের চোটে এলাকাছাড়া হয়ে গিয়েছিলেন বিরোধীরা। ওই এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছিল শাসক দলের মোটরসাইকেল বাহিনী।

তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিংহীবাগান এলাকার দখল নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথের দরজায় কর্তব্যরত এক জওয়ান বলেন, ‘‘আমাদের সব কিছু বলে দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনও রকম সন্ত্রাস হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কড়া নির্দেশ রয়েছে।’’ বুথ থেকে কিছুটা দূরে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস। সেখানে দু’জন বসে রয়েছেন। এলাকার ধারেকাছে কোনও জমায়েত নেই। ভোটের আদর্শ পরিবেশ। ওই এলাকার বাসিন্দা নিশা সিংহ নামে এক মহিলা ভোট দিয়ে বুথের বাইরে বেরিয়ে আকাশের দিকে হাতে তুলে নমস্কার করে বলেন, ‘‘যিনি এই ব্যবস্থা করেছেন, তাঁকে উপরওয়ালা আশীর্বাদ করুন। পুরসভা নির্বাচনে তো বুথের ধারেকাছে যেতে পারিনি।’’

কিন্তু ইডলি-চাটনি কি শাসক দলের পক্ষে ভোট ফেলল? এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার কথায়, ‘‘বাড়িতে এসে দিয়ে গিয়েছে। ফেলে দিয়ে কী লাভ! আমরা তো আমাদের মতো ভোট দিয়েছি।’’ তৃণমূলের ইডলি-চাটনি কেন্দ্রে সবুজ গেঞ্জি পরা এক জন বলেন, ‘‘এলাকার দোকান সব বন্ধ। তাই ভোটকর্মী, ভোটারদের বাড়িতে আমরা ইডলি-চাটনি দিচ্ছি। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। অন্য কিছু ভাববেন না।’’ সাড়ে ১২টা নাগাদ এলেন বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ। হাসি হাসি মুখে এলাকায় ঘুরলেন। রাহুলবাবুর কথায়, ‘‘ভোট ভালই হচ্ছে। মানুষ ভোট দিতে পারছেন এটাই বড় কথা।’’

সকাল থেকেই দৃশ্যত জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে শাসক দল যেন ‘ব্যাকফুটে’। জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে সকাল থেকে সক্রিয় ছিল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। সকাল থেকে এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ডিসি-ডিডি-২ নগেন্দ্র ত্রিপাঠী ও ডিসি (সদর) অখিলেশ চতুর্বেদী শাসক দলের সমর্থকদের তাড়া করে বেরালেন। বিকেল তিনটে নাগাদ কোনও মোটর সাইকেল আরোহী বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলেই চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। দুপুরে অবশ্য বৈঠকখানা রোডে সিপিএমের ক্যাম্প অফিসে কয়েক জন কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ভিক্টোরিয়া কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ অবাধ বলে অভিযোগ উঠেছে। দু’টি ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ।

নির্বাচনের দিন শাসক দল ব্যাকফুটে চলে যাবে তা আগাম আন্দাজ করেছিলেন বিরোধী নেতারা। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক কংগ্রেস নেতার কথায়, একদিকে শাসকদলের ভোট ‘ম্যানেজার’ গোপাল তিওয়ারি জেলে। তার বাহিনীর দেখা নেই। ওই ঘটনায় গোপালের শাগরেদররাও জেলে রয়েছে। শাসক দলের নেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী স্মিতা বক্সীর স্বামী সঞ্জয় বক্সী গোপাল ও তাঁর অনুগামীদের ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন। তার উপর বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভাঙার মতো ঘটনা। সে ক্ষেত্রেও শাসক দলের উপর প্রভাব ফেলেছে।’’

কেমন প্রভাব? এ দিন গোপাল তিওয়ারির পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাহিনী। কোনও তাপ উত্তাপ নেই। গোপালের বাড়িতে স্ত্রী কামিনী তিওয়ারি ঘরেই বসে দুই মেয়ের সঙ্গে গল্প করছেন। ভোট প্রসঙ্গে কামিনী বলেন, ‘‘পার্টি খারাপ নয়। পার্টির কয়েক জন নেতা খারাপ। আমাদের এলাকার লোকেরা ওই নেতাদের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে।’’ স্থানীয় এক বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘শাসক দলের ইডলি-চাটনি দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। ওদের সঙ্গে আর লোক নেই।’’ এখনও গণেশ টকিজের কাছে উড়ালপুলের ভাঙা চাঙড় তোলার কাজ চলছে। রয়েছে পুলিশি নজরদারিও। ওই এলাকার বাসিন্দা বিবেক কুমার ও প্রকাশ শর্মার কথায়, ‘‘উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর এলাকায় খুবই ক্ষোভ রয়েছে। কিছু বাসিন্দা ঘরছাড়া হয়ে গিয়েছেন। অনেক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এ রকম ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে আমরা ভোট দিয়েছি।’’ দিনের শেষে উড়ালপুলের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীর কথায়, জোড়াসাঁকোয় শাসক-বিরোধী ভোটের ঝুলি ফুলে উঠেছে। সারাদিন কী করলেন তৃণমূল প্রার্থী স্মিতা বক্সী ও তাঁর স্বামী সঞ্জয় বক্সী। ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওঁরা বলেন, ‘‘নিজেদের এলাকায় আছি। কিন্তু কোথায় আছেন? জবাব এল ‘‘কেন বলব আপনাদের?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC voter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE