Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গণনার টেনশন এড়াতে বই-জিম, আড্ডাই আশ্রয়

দীর্ঘ প্রতীক্ষার আজ অবসান। তার আগের দিনটা টেনশন না কি জেতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসের মেজাজে কাটল সব দলের প্রার্থীদের? তারই খোঁজ নিতে ঢুঁ মারা হয়েছিল তাঁদের কয়েকজনের বাড়িতে। দেখা গেল কেউ বইয়ে ডুবে, কেউ পরিবারের সঙ্গে, কেউ পুজোআচ্চায় ব্যস্ত রাখলেন নিজেকে। টেনশন কাটাতে কেউ আবার জিমেই স্বচ্ছন্দ।

জিমে ব্যস্ত হরিপালের তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না।

জিমে ব্যস্ত হরিপালের তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

দীর্ঘ প্রতীক্ষার আজ অবসান। তার আগের দিনটা টেনশন না কি জেতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসের মেজাজে কাটল সব দলের প্রার্থীদের? তারই খোঁজ নিতে ঢুঁ মারা হয়েছিল তাঁদের কয়েকজনের বাড়িতে। দেখা গেল কেউ বইয়ে ডুবে, কেউ পরিবারের সঙ্গে, কেউ পুজোআচ্চায় ব্যস্ত রাখলেন নিজেকে। টেনশন কাটাতে কেউ আবার জিমেই স্বচ্ছন্দ।

বাড়িতে ভোটের আবহে ইদানীং তিন রকম খবরের কাগজ আসছে। গৃহকর্তার সকাল সকালই বিছানা ছাড়ার অভ্যাস। এক সময় হাঁটতেও বেরোতেন। স্ত্রী করবী (মান্না) বললেন চাপা স্বরে। কিন্তু সিঙ্গুর আন্দোলন পর্বের পর তাতে ছেদ পড়েছে। এখন তাই বাড়িতে রাখা মেশিনেই হণ্টন।

সকাল থেকেই নানা দরকারে বহু লোকের সমাগমে সরগরম হরিপালের তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্নার বাসভবন। কেউ সার্টিফিকেট নেবে। কারও আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে চিঠির জন্য অপেক্ষা। বেলা বাড়লে ভিড়ও বাড়তে থাকে।

তাড়াহুড়োয় খবরের কাগজগুলোও ভাল করে চোখ বোলানোর সময় নেই। সমীক্ষার ফল দলকে এগিয়ে রাখলেও টেনশন যে একটা রয়েছেই কাউন্টিং নিয়ে দলের কর্মীদের নানা নির্দেশ দেওয়াতেই তা মালুম হল। যদিও জেতা নিয়ে তাঁর যে সংশয় নেই তা জানাতে ভুললেন না।

তাঁর বিরুদ্ধে বামেদের প্রার্থী যোগীয়ানন্দ মিশ্র। সমানে সমানে লড়াই দিয়েছেন তরুণ এই প্রার্থী। গণনার আগের দিন বার বারই জোনাল অফিস থেকে কমরেডদের ঘন ঘন ডাক আসছে। চন্দননগরে কারা কাউন্টিং হলে থাকবেন তার তালিকা তৈরি করতে হবে। জেতা নিয়ে অবশ্য আশাবাদী তিনি।

সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই তুলনায় অনেক ধীরস্থির। দেখতে দেখতে নির্বাচনের ময়দানে দুই দশক কাবার করা পোড় খাওয়া এই প্রবীণকে ফলপ্রকাশের আগেই বাড়িতে মিষ্টিমুখ করাতে হাজির এক ভক্ত। মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ওঁরা ভালবাসেন তাই আসেন।’’ জেতা নিয়ে কোনও টেনশন নেই জানিয়ে বলেন, ‘‘বই টই পড়ে সময় কেটে যাচ্ছে। তা ছাড়া সিঙ্গুরের মানু‌ষ আমায় চেনেন।’’ কথা শেষ করে আলমারি থেকে বই টেনে নিলেন মাস্টারমশাই।

যদিও শাসকদলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত গণনা নিয়ে এতটাই টেনশনে যে ভোরবেলা উঠেই চুঁচুড়ার ফ্ল্যাট থেকে সোজা দক্ষিণেশ্বরে। নিজের কেন্দ্রে মহানাদ কালীবাড়ি ঘুরে সেখান থেকে ত্রিবেণী রঘুডাকাত কালীবাড়িতে পুজো সেরে দলের ছেলেদের সঙ্গে খানিক আড্ডার পর কাউন্টিং হলের জোগাড়ের জন্য দলের ছেলেদের সঙ্গে বৈঠক। বলেন,‘‘শুধু নিজের এলাকা নয়, যেহেতু দলের দায়িত্ব আমার উপর তাই আরামবাগ, চন্দননগর, শ্রীরামপুর সব জায়গাতেই কথা বললাম।’’ তাঁর বিরুদ্ধে জোটপ্রার্থী কংগ্রেসর দিলীপ নাথ সকালবেলায় পরিবারের সবার সঙ্গে চা খেয়েই মোটর সাইকেলে বেরিয়ে গেলেন চড়া রোদ মাথায় নিয়ে। বললেন, ‘‘যা হবার তা হবেই।’’ চুঁচুড়ায় ফরওয়ার্ড ব্লকের চিকিৎসক প্রার্থী প্রণব ঘোষেরও একই বুলি। বলেন, ‘‘ফল যাই হোক না কেন, আমাকে তো রোগী দেখতেই হবে।’’

গণনার আগে বিভিন্ন সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। প্রতিটি সমীক্ষাতেই শাসক দল তৃণমূলেরই প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষাকে পাত্তা দিতে রাজি নন হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় বিরোধী দলের কোনও প্রার্থীই। বরং অধীর আগ্রহে তাঁরা তাকিয়ে ভোটের ফল ঘোষণার দিকে।

(ডান দিকে) রোগী দেখছেন চুঁচুড়ার ফরওয়ার্ড প্রার্থী প্রণব ঘোষ।

ভোটের ফল যে তাঁর পক্ষে যাবে তা নিয়ে প্রায় নিশ্চিত উলুবেড়িয়া উত্তরকেন্দ্রের বিধায়ক নির্মল মাজি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের যে জোয়ার রাজ্যজুড়ে দেখা গিয়েছে তারই ফল মিলবে এই নির্বাচনে। তৃণমূল বিপুল ক্ষমতা নিয়ে যেমন ফিরবে, তেমন আমার জয় নিয়েও সংশয় নেই।’’

এক পা এগিয়ে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায়ের মন্তব্য, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষা হল দুর্বলদের হাতিয়ার। এই সমীক্ষায় কে জিতল বা কে হারল তাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না। উন্নয়নের নিরিখে জয় নিয়ে আমরা প্রত্যয়ী। তাই টেনশনের কোনও ব্যাপার নেই।’’ টেনশনে নেই উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল প্রার্থী সমীর পাঁজাও। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও টেনশন নেই। কতটা মার্জিনে জিতব সেটারই অপেক্ষা করছি। তবে ভোটের পরে হিংসার ঘটন‌া যাতে না ঘটে সেই দিকে কড়া নজর রাখতে বলেছি দলের কর্মীদের। শান্তি বজায় রাখাই আমাদের সব চেয়ে বড় কাজ।’’

সমীক্ষার ফল শাসক দলকে এগিয়ে রাখলেও তা মানতে নারাজ উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিশ্বাস করি না। বর্তমান শাসক দল মানুষের কণ্ঠরোধ করেছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর হাত থেকে বাঁচতে মানুষ আমাদেরই সমর্থন করবেন। জেতা নিয়ে আমি আশাবাদী।’’ টেনশনে অবশ্য আছেন‌ শ্যামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ এ বার ভোট দিয়েছেন। সেটাই আমার ভরসা।’’ জেলার অন্যতম পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তথা আমতার কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্র অবস্য গণনা নিয়ে টেনশনে ভুগছেন না বলে জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের সঙ্গে বিধায়ক হিসাবে গত পাঁচ বছর ধরে তাঁদের সুখ-দুখের সাথী ছিলাম। মানুষ আমাকে যে বিমুখ করবেন না সে বিশ্বাস আছে।’’

ছবি: দীপঙ্কর দে ও তাপস ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE