Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

রুকবানুর নাকি জেবের, না অন্য কেউ

চাপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কে হচ্ছেন তা জানতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই সমাজমাধ্যম দুই নেতার অনুগামীদের প্রচার আর পাল্টা প্রচারে সরগরম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার 
চাপড়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৭:৫৪
Share: Save:

কেউ লিখছেন— ‘চাপড়ার জনতা দিচ্ছে ডাক, নবান্নে এ বার জেবের শেখ যাক’। আবার কেউ লিখছেন— ‘রুকবানুর রহমান মহাশয়কে তৃতীয় বারের জন্য বিধানসভায় পাঠিয়ে মাননীয়া মমতা ব্যানার্জির হাত শক্ত করবে চাপড়ার জনগণ’।

চাপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কে হচ্ছেন তা জানতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই সমাজমাধ্যম দুই নেতার অনুগামীদের প্রচার আর পাল্টা প্রচারে সরগরম।

২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাপড়ায় প্রার্থী করে পাঠিয়েছিলেন রুকবানুর রহমানকে। প্রাথমিক আপত্তি কাটিয়ে দলের প্রায় সর্বস্তরের নেতাকর্মী জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে তাঁকে সিপিএমের বিরুদ্ধে জিতিয়ে আনেন। কিন্তু তার পর থেকে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিতে থাকে। একেবারে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ‘দলের মুখ’ বলে পরিচিত হরিদাস প্রামাণিকদের ‘সাইডলাইনে’ বসিয়ে দিয়ে রুকবানুর ও তাঁর সঙ্গীরা দলের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। সেই তালিকায় একদিকে যেমন ছিলেন শুকদেব ব্রহ্ম, তেমনই ছিলেন রাজীব শেখ, কাংলা শেখ, জেবের শেখরা।

পরে আবার শুকদেবকে সরিয়ে জেবের-রাজীবরা দলের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই সমীকরণও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। একটা সময়ের পর রাজীব ও জেবেরের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লড়াই। রুকবানুর দুই পক্ষের পাশেই থেকেছেন ব্যালান্স করে। কিন্তু ক্রমশ ব্লক সভাপতি জেবের শেখ নিজের মত করে শক্তিশালী বৃত্ত গড়ে ফেলেন। তাঁর অনুগামীরা তাঁকে প্রার্থী করার দাবিও তুলতে থাকেন। দূরত্ব তৈরি হয় রুকবানুরের সঙ্গে। এরই মধ্যে জেলা নেতৃত্বের কাছাকাছি চলে আসেন জেবের। তাঁকে দ্বিতীয় বারের জন্য চাপড়া ব্লক সভাপতি করা হয়। প্রার্থিপদের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি জেবের শেখের অনুগামী পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের একটা অংশ বৈঠক করে জেবেরকে প্রার্থী করার জন্য দলের কাছে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন। জেবের অনুগামীরা যত সক্রিয় হতে থাকেন, পাল্টা সক্রিয় হতে থাকেন রুকবানুর অনুগামীরাও। এখন সেই চলে প্রতিযোগিতাই চলে এসেছে সমাজমাধ্যমের উঠোনে।

জেবের অনুগামীদের দাবি, জেলার ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক তাঁদের নেতার। সেই নেতৃত্বই নাকি তাঁর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত করে দিয়েছেন। রুকবানুরের অনুগামীদের পাল্টা দাবি, কলকাতায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বিধায়কের। মৃত রিজওয়ানুর রহমান তাঁর ভাই, তাঁদের মায়ের সঙ্গে নেত্রীর সম্পর্কের কথা কারও আজানা নয়। ফলে অনুগামীদের বিশ্বাস, গত বারের মত এ বারও শেষ মুহূর্তে টিকিট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলবেন রুকবানুর। এবং এই বিশ্বাস এতটাই প্রবল তাঁরা রুকবানুরের হয়ে প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন।

তবে এই নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ দুই নেতাই। রুকবানুর বলছেন, “কারা এমন ভাবে প্রচার করছেন, তা জানি না। তবে বিগত দশ বছর ধরে আমি যে ভাবে ধারাবাহিক ভাবে উন্নয়নের কাজ করে গিয়েছি, চাপড়ার মানুষ আমায় আবার বিধায়ক হিসাবে দেখতে চাইতেই পারেন।” জেবের বলছেন, “এমন প্রচার কারা করছে, কেন করছে, তা আমি জানি না। জানতেও চাই না। কারণ প্রার্থী করার বিষয়টা তো সম্পুর্ণ দলের হাতে।”

তবে দলীয় সূত্রেরই দাবি, আড়াল থেকে দুই নেতাই নিজের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দলের সামনে তুলে ধরার জন্য অনুগামীদের দিয়ে প্রচার করাচ্ছেন। তবে দলের জেলা নেতারা বলছেন, পিকে-র টিমের রিপোর্টের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু বিচার বিবেচনা করেই এ বার প্রার্থী তালিকা তৈরি হবে। রুকবানুর বা জেবেরের বাইরে তৃতীয় কারও কথাও চিন্তা করতে পারে দল। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশিস রায় বলেন, “সকলেই প্রার্থী হতে চাইতে পারেন। কিন্তু শেষ কথা বলবেন দলনেত্রী। তাঁর মনোনীত প্রার্থীকে জেতানোর জন্য সবাইকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE