Advertisement
E-Paper

হামলার ফোন পেয়ে ওসি বললেন, ‘কেন এত বিরক্ত করছেন’

এলাকার এক বাসিন্দাকে বাঁশপেটা করছে দুষ্কৃতীরা। কয়েক ফুট দাঁড়িয়ে রয়েছেন পাটুলি থানার ওসি অভিজিৎ ঘোষ। কিন্তু দুষ্কৃতীদের থামানোর কোনও চেষ্টাই করছেন না তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৪:০৪
পাটুলি থানার ওসি অভিজিৎ ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র

পাটুলি থানার ওসি অভিজিৎ ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র

এলাকার এক বাসিন্দাকে বাঁশপেটা করছে দুষ্কৃতীরা। কয়েক ফুট দাঁড়িয়ে রয়েছেন পাটুলি থানার ওসি অভিজিৎ ঘোষ। কিন্তু দুষ্কৃতীদের থামানোর কোনও চেষ্টাই করছেন না তিনি। রবিবার এমনই অভিযোগ উঠল পাটুলি থানা এলাকায়। আরও অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দারা ব্যবস্থা নিতে বললে ওসি দার্শনিকের সুরে বলেন, ‘‘আমি চাই সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’’

দুষ্কৃতীদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার বাসিন্দারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতীরা। তার পর থেকেই গোলমালে ওসি-র ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

পাটুলি থানা যে গোলমালে নিষ্ক্রিয় থাকবে, আগেই তেমন আশঙ্কা গাঙ্গুলিবাগান-পাটুলি এলাকার অনেকে। কারণ, রবিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে গোলমাল শুরু হলেও তা সামলাতে থানার কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, সুজন দত্ত নামে এলাকার এক সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলার কথা জানাতে ওসি-কে ফোন করেছিলেন এলাকার এক বাসিন্দা। অভিযোগ, ঘটনাটি শুনে ওসি তাঁকে ধমক দেন। বারবার ফোন করে বিরক্ত করা হচ্ছে কেন, তার উত্তর চেয়েছিলেন অভিজিৎবাবু।

শনিবার ভোটের দিন কলকাতায় পুলিশ ছিল ‘পুলিশের চেহারায়’। আমজনতার কুর্নিশ কুড়িয়েছিল লালবাজার। রবিবার পাটুলি থানার ভূমিকা দেখার পরে এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন। লালবাজারের নিরপেক্ষ থাকার বার্তা কি তা হলে মানছেন না অভিজিৎবাবুর মতো ওসি-রা, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। লালবাজার সূত্রে খবর, রবিবার রাতেও গোলমালের সব তথ্য প্রথমে উচ্চকর্তাদের কাছে ঠিক মতো পৌঁছয়নি।

লালবাজারের খবর, অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধেও নিরপেক্ষ না হওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। এমনকী, তিনি ভোটের আগে অস্ত্র উদ্ধার বা তল্লাশিতে সক্রিয় হননি বলেও লালবাজারে অভিযোগ জানিয়েছিল খোদ বাহিনীরই একাংশ। এমন নানা অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টরদের মধ্যে গুঞ্জন ছিল, নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়ে চেয়ার খোয়াতে হবে পাটুলি থানার ওসি-কে। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি। তিনি পাটুলি থানার ওসি-র পদে থাকলে গোলমাল হতে পারে, এই আশঙ্কা করেছিলেন বিরোধী দলের নেতারা। রবিবার রাতে তাঁরা বলেন, সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে।

কে এই অভিজিৎ ঘোষ?

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি ১৯৮৯ ব্যাচের সাব-ইনস্পেক্টর। ২০১১ সালে পালাবদলের সময়ে চারু মার্কেট থানায় অতিরিক্ত ওসি পদে ছিলেন তিনি। তখন থেকেই রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বলে শোনা যায়। এর পরে বাঁশদ্রোণী থানার ওসি-র দায়িত্ব পান তিনি। সেখানে এক বন্দিকে লকআপে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখায় বিতর্কের মুখে পড়ে লালবাজার। এর পরেই স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চে বদলি করা হয় তাঁকে। স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চে বেশ কিছু দিন থাকার পরে থানায় ফেরেন অভিজিৎবাবু। এ বার ঠাকুরপুকুর থানার ওসি হয়ে। সেখান থেকে বদলি হয়েই পাটুলি থানার দায়িত্ব নেন তিনি। মন্ত্রী অরূপবাবু অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন এক সহকারী কমিশনার জানান, থানায় দারোগা থাকার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর কোনও অভিযোগ ছিল না। বাহিনীতে নির্বিরোধী লোক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে ওসি হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের অভিযোগ মিলেছে তাঁর নামে। অভিজিৎবাবুর সঙ্গে কাজ করা এক প্রবীণ পুলিশকর্তার আবার বক্তব্য, ‘‘গোলমেলে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যে দৃঢ়তা প্রয়োজন, সেটা ওঁর কোনও দিনই ছিল না।’’

রবিবার রাতের ঘটনাতেও তেমনই অভিযোগ উঠল অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে। পুলিশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, মাত্রাছাড়া গোলমালের খবর শুনে লালবাজার অতিরিক্ত বাহিনী পাঠায়। শুরু হয় লাঠিচার্জ। তখন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ অভিজিৎবাবুকে ধমকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘আমাদের লাঠি মারছেন কেন?’’ পাল্টা গর্জে ওঠেননি অভিজিৎবাবু। থতমত খেয়ে তাঁকে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি কাউকে লাঠি মারতে বলিনি।’’ এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সোমবার অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘যা বলার আমার উপরওয়ালারা বলবেন। আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

তবে পাটুলি থানার একাংশের ব্যাখ্যা, প্রথমে এক জায়গায় গোলমাল শুনে বাহিনী গিয়েছিল। দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় ভাবা হয়েছিল, পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে যাবে। কিন্তু মোটরবাইক বাহিনী যে ঘুরে ঘুরে দাপিয়ে বেড়াবে, তা ভাবা যায়নি। থানার এক অফিসারের সাফাই, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ে ঠিক তথ্য না দেওয়া হলে ৪টি থানার বাহিনী এল কী ভাবে?’’

এ যুক্তি অবশ্য মানতে নারাজ পুলিশেরই একাংশ। তাঁরা বলছেন, মোটরবাইকবাহিনী কাদের নেতৃত্বে ঢুকছে, কোথায় কোথায় হামলা হতে পারে, সবই ওসি জানতেন। তিনি জেনেবুঝেও নিষ্ক্রিয় থাকার পন্থা নিয়েছিলেন। দু’-এক জন সাব-ইনস্পেক্টর সক্রিয় হতে চাইলেও তিনি তা সমর্থন করেননি। সে জন্যই প্রতিবেশী থানাগুলি থেকে বাহিনী গিয়েছে ঘটনা শুরু হওয়ার দু’ঘণ্টা পরে।

ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আগেই সক্রিয় হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তৃতীয় দফার ভোটের পরে হিংসায় লাগাম টানতে রাজ্যের ডি়জিকে কড়া হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। এ বার কলকাতার ভোট পরবর্তী হামলা নিয়ে যদি কমিশন রিপোর্ট চায়, কী বলবেন পুলিশকর্তারা?

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলছেন, ‘‘তদন্ত চলছে। আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’ অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘কমিশন রিপোর্ট চাইলে সব ঘটনাই জানানো হবে। বাদ যাবে না ওসি-র ভূমিকাও।’’

Abhijit Ghosh Ganguli-Bagan charu Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy