ফল জানার পরে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বালিগঞ্জে। ছবি: শিবাজী দে সরকার।
প্রথম রাউন্ডের গণনা শেষ। প্রার্থী এবং বিদায়ী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এগিয়ে রয়েছেন হাজার কয়েক ভোটে। এই খবর পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা ফোন করেছিলেন তাঁকে। কিন্তু ‘নারদ ঘুষ-কাণ্ডে’ অভিযুক্ত মন্ত্রীর ফোন বন্ধ। পরে তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে ভোটে এগিয়ে থাকার এই খবরটি দিলেন ওই নেতা-কর্মীরাই।
একের পর এক রাউন্ডের গণনা শেষ হচ্ছে। প্রতি রাউন্ডেই নিজের ব্যবধান বাড়িয়ে চলেছেন বালিগঞ্জ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। গণনা কেন্দ্রের বাইরে দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারেরা প্রমাদ গুনছেন, কখন হাজির হবেন তৃণমূলের সর্মথকেরা। কিন্তু সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত সমর্থকদের দেখা নেই। তার পরে প্রথমে জনা দশেক সর্মথক জড়ো হলেন ভোটগণনা কেন্দ্রের একশো মিটার দূরে। বেলা বাড়তে অবশ্য বাড়ল সমর্থকদের ভিড়ও। শুরু হল বাজি পোড়ানো। শূন্যে ছোড়া হল সবুজ আবির।
উপরের দু’টি চিত্রই ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের। ওই কলেজে বৃহস্পতিবার ভোটগণনা হয় বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের। সেখানকারই তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রথম সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুব্রতবাবু। সেই সঙ্গে ওই সরকারের অন্যতম সফল মন্ত্রী। ভোটের মাস খানেক আগে তাঁর নাম জড়িয়ে যায় নারদ ঘুষ-কাণ্ডে। তৃণমূল সূত্রে খবর, তার পর থেকেই চাপে পড়ে যান সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় জমানার এই মন্ত্রী। সঙ্গে উপরি পাওনা নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের কড়াকড়ি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সব কারণেই ভোটের আগে ও পরে বেশ চাপে ছিলেন সুব্রতবাবু। শাসকদলের একাংশ প্রচার করে, বালিগঞ্জের মতো অভিজাত এলাকার ভোটারেরা নারদ-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়াকে ভাল ভাবে নেননি। যার প্রভাব পড়ে প্রবীণ ওই নেতার মনেও। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশের দাবি, এর ফলে নিজের জয় নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় তৈরি হয়েছিল তাঁর। আর বৃহস্পতিবার উপরের দুই চিত্র তারই প্রতিফলন বলে মনে করছে পুলিশ ও রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাই সকাল থেকেই মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। তবে তাঁর ফোন যখন বন্ধ, সেই সময়ে ওই গণনা কেন্দ্রে হাজির ছিলেন বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য পরে নিয়মিত ভাবে গণনার আপডেট জানিয়েছেন ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের বাসিন্দা সুব্রতবাবুকে।
তবে ফল ঘোষণার পরে বিজয়ী সার্টিফিকেট নিতে গণনা কেন্দ্রে এসে সব রকম সংশয়ের কথা অস্বীকার করেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এ বারের জয় ঐতিহাসিক। আগে থেকেই আমার আশা ছিল ২০০-র বেশি আসন পাব। অনেক মানুষ আশা করতে পারেননি এই জয় আসবে।’’ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রতিদিনের মতো পুজোপাঠ করেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। মাঝে মাঝে খবর নিয়েছেন ভোট গণনার। নিজের জয়ের ব্যাপারে নিঃসংশয় হওয়ার পরেই ভোট গণনা কেন্দ্রে আসেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সুব্রতবাবু এ দিনের জয়কে ঐতিহাসিক বললেও তাঁর দলের সমর্থকদের মধ্যেই তাঁর জয় নিয়ে সংশয় ছিল। তা যে ভুল নয়, সমর্থকদের একাংশের কথা থেকে তা পরিষ্কার। এ দিন ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের বাইরে সকাল থেকেই বেপাত্তা দলীয় সমর্থকেরা। আর বেলা বাড়তে সমর্থকদের যে ভিড় ছিল তাঁর বেশিরভাগটাই কড়েয়া, তপসিয়া এলাকার। অথচ দলের হেভিওয়েট নেতা সেখানকার প্রার্থী। সকালে কারও দেখা মেলেনি কেন জানতে চাইলে সবুজ আবির মাখা মাঝবয়সী এক সমর্থকের জবাব, ‘‘জানতাম, দাদা জিতবেন। কিন্তু নারদ, বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়া— এ সবের পরে আমরা কিছুটা চাপে ছিলাম। তাই আগে থেকে কোনও বিজয় উৎসবের প্রস্তুতি নিইনি। সকালে ভাল খবর আসতেই আমরা আবার রাস্তায় নেমে এসেছি।’’
কথাটি যে ভুল নয়, তা ওই কেন্দ্রের বাইরের চিত্র থেকেই পরিষ্কার। সমর্থকেরা জড়ো হলেও কয়েক ঘন্টা পরে আসে বাজি, ফুল, ঢাক। যা নিয়ে শেষ দুপুর থেকে মেতে ওঠেন একমাসের বেশি সময় ধরে উদ্বিগ্ন থাকা সমর্থকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy