Advertisement
E-Paper

পুলিশের সঙ্গে শুভেন্দুর কথা, নালিশ সূর্যের

নিজের পুলিশের উপরেই আস্থা খুইয়েছেন তিনি। গত দু’দফার ভোটে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই উৎকণ্ঠিত যে, ‘কিছু পুলিশ’-কে ‘ভিতু’ বলে ভর্ৎসনা পর্যন্ত করতে ছাড়েননি। তাঁর এই নড়বড়ে অবস্থার সুযোগ নিতে এ বার আসরে নামল বামেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:৪৩
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

নিজের পুলিশের উপরেই আস্থা খুইয়েছেন তিনি। গত দু’দফার ভোটে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই উৎকণ্ঠিত যে, ‘কিছু পুলিশ’-কে ‘ভিতু’ বলে ভর্ৎসনা পর্যন্ত করতে ছাড়েননি। তাঁর এই নড়বড়ে অবস্থার সুযোগ নিতে এ বার আসরে নামল বামেরা। দিদির উপরে স্নায়ুর চাপ বাড়াতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করলেন, মমতার পুলিশ এখন খবর জোগাচ্ছে তাঁদেরই। মুখ্যমন্ত্রী কী করছেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, ভোট নিয়ে কী ছক কষছেন— এ সব খবরই চলে আসছে তাঁদের কাছে।

আর সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবারের শেষ দফা ভোটের আগে দু’টি বড়সড় অভিযোগ করেছেন সূর্যবাবু। এক, ‘‘কোচবিহারে ভোটের আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী চালসার এক রিসর্টে বসে জেলার পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন, তৃণমূলের সেই সাংসদ, যাঁর বিরুদ্ধে সারদার তথ্য লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া রয়েছেন রাজ্য পুলিশের এক মহিলা অফিসার। যিনি এখন সিআইডিতে থাকলেও আগে জঙ্গলমহলের দায়িত্বে ছিলেন।’’ সূর্যবাবুর দ্বিতীয় অভিযোগ, ‘‘গত ১ মে মধ্যরাতে সাত জন ওসি-কে নিয়ে পাঁশকুড়ার বনমালী কলেজে মিটিং করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের এক সাংসদ। যিনি এ বার প্রার্থীও বটে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুড়জল কোথা থেকে আসবে, সে সব নিয়ে কথা হয়েছে সেখানে। কী ভাবে তাঁদের লুব্ধ করা হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা হয়েছে সেই রাতে।’’ সূর্যবাবুর কথা থেকেই স্পষ্ট, তাঁর অভিযোগের তির তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর দিকে।

শুধু সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ তুলেই থেমে থাকেনি সিপিএম। দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছে। সেখানে পাঁশকুড়া, ময়না, হলদিয়া, মরশিদা ও রামনগর থানার ওসিরা শুভেন্দুর সঙ্গে গভীর রাতে গোপন বৈঠক করেন বলে উল্লেখ রয়েছে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে সুতাহাটা এবং কাঁথি থানার ওসি-ও ওই বৈঠকে ছিলেন বলে অভিযোগ করেন সূর্যবাবু। জেলার সিপিএম নেতাদের দাবি, পুলিশ সূত্রেই তাঁরা খবর পেয়েছেন যে, শুভেন্দুর হয়ে এই গোপন বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন পাঁশকুড়ার ওসি মদন রায়। প্রায় পাঁচ বছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনি ওই থানায় রয়েছেন। এক সময় তমলুকের সাংসদের রোষানলে পড়ে তাঁকে ‘দুর্বল’ থানায় যেতে হয়েছিল। কিন্তু পরে সে সব মিটিয়ে আবার পাঁশকুড়ায় ফেরেন।

বামেদের অভিযোগে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তুষ্ট করার জন্য মদ এবং মাংসের ঢালাও ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তৃণমূল সাংসদ। সে জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানের আশ্বাসও দেওয়া হয়। যে থানাগুলি নিয়ে অভিযোগ, সেই সব এলাকায় এ বার শাসক দল বিপাকে বলেই প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে ভোট লুঠ করা যায়, সেই ছক কষারই চেষ্টা ওই বৈঠকে হচ্ছিল বলে বিরোধীদের সন্দেহ।

তবে সূর্যবাবুর অভিযোগ এক কথায় খারিজ করে দিয়েছেন শুভেন্দু। সাংসদের কটাক্ষ, ‘‘ওঁর মাথা খারাপ হয়েছে। ডাক্তার দেখান। এ ব্যাপারে আর কোনও মন্তব্য করব না।’’ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেননি সংশ্লিষ্ট সাত থানার ওসিরাও। ময়নার ওসি ইমরান মোল্লা বা হলদিয়ার আইসি দেবাশিস ঘোষ স্পষ্টই জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনও বৈঠক হয়নি। একই দাবি করেছেন জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তাও। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ১ মে দুপুর-বিকেল থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী জেলায় ঢুকে পড়েছে। পাঁশকুড়ার ওই কলেজেই ঘাঁটি গেড়েছে তারা। ফলে তাদের নাকের ডগায় সাংসদ ওসিদের নিয়ে বৈঠক করবেন, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে পুলিশের মধ্যে প্রভাব খাটানোর অপচেষ্টা করছেন সূর্যবাবুরা। জমিতে কোথাও ওঁদের দেখা যাচ্ছে না। শুধু সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন।’’

নির্বাচন কমিশন অবশ্য অভিযোগটি হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না। উপ নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা এ দিন দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ উঠলে কমিশন তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।’’ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্যও বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ আর নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি মারাত্মক। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

তবে বামেদের অভিযোগ মতো ১ মে গভীর রাতে সত্যি সত্যিই পাঁশকুড়ার কলেজে কোনও বৈঠক হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রশাসনের একাংশের মধ্যেও। তাঁদের মতে, এটা বামেদের রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে। কাল শেষ দফার ভোট। তার আগে সূর্যবাবুরা মানুষকে এই বার্তাই দিতে চাইছেন যে, রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের আঁচ পেয়ে গিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনের একটা বড় অংশ। মমতা খাতায়কলমে মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও, এখন বিরোধীদেরই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। শাসক দলের গতিবিধির খবর তাঁরাই পৌঁছে দিচ্ছেন বিরোধী শিবিরে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্মের খবরও যে তাঁদের কাছে এসে পৌঁছচ্ছে তা বোঝাতে সূর্যবাবু দাবি করেন, ‘‘শেষ দফায় যে ২৫টি আসনে ভোট হবে, তার মধ্যে ১১টায় হেরে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ওঁরা। দিদির পাশে বসে এক ভদ্রলোক কাগজে লিখে লিখে যে হিসাব তৈরি করেছেন, সেই কাগজটিও এখন আমাদের কাছে।’’

assembly election 2016 Shubhendu Adhikary Suryakanta Mishra Secret Meeting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy