Advertisement
E-Paper

সমীক্ষার ইঙ্গিতে আরও বাড়ল হিংসা, ধৈর্যের বার্তা সূর্যদের

ভোট-পর্ব শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছিল। ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় শাসক দলের এগিয়ে থাকার ইঙ্গিত মিলতেই জেলায় জেলায় আরও বেড়ে গেল অশান্তির অভিযোগ। টিভিতে সমীক্ষার খবর সম্প্রচারিত হওয়ার রাত থেকেই যে ভাবে হামলা শুরু হয়েছে, বাস্তবে ফলপ্রকাশের পরে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় বিরোধী শিবির ও আমজনতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০৪:৩৭
হামলার পরে আতঙ্কে জড়সড় দুধকুমার । — নিজস্ব চিত্র

হামলার পরে আতঙ্কে জড়সড় দুধকুমার । — নিজস্ব চিত্র

ভোট-পর্ব শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছিল। ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় শাসক দলের এগিয়ে থাকার ইঙ্গিত মিলতেই জেলায় জেলায় আরও বেড়ে গেল অশান্তির অভিযোগ। টিভিতে সমীক্ষার খবর সম্প্রচারিত হওয়ার রাত থেকেই যে ভাবে হামলা শুরু হয়েছে, বাস্তবে ফলপ্রকাশের পরে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় বিরোধী শিবির ও আমজনতা। ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশনের চাপে পুলিশ যে কড়া অবস্থান নিয়েছিল, এখনতারা কী ভূমিকা নেবে, উঠছে সেই প্রশ্নও।

অথচ এই রাজ্যেরই হাওড়ার কুমারিয়া গ্রামে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা থামাতে একজোট হয়েছে শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী কংগ্রেস-সিপিএম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই শাসক তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কিন্তু এখনও পর্যন্ত হিংসায় রাশ টানার ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও আবেদন করা হয়নি! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব’ বা তাঁর স্নেহভাজন অনুব্রত মণ্ডলদের ‘চড়়াম চ়়ড়াম ঢাক’ বাজানোর মন্তব্যই তৃণমূলের কর্মী-সমথর্কদের প্ররোচিত করেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় সরকারে ফেরার ইঙ্গিত মিলতেই শাসক দলের একাংশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের। প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু অবশ্য মঙ্গলবার তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের পরামর্শ দিয়েছেন, সমীক্ষা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দলের কাজে মন দিতে। সন্ত্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এবং ভোট-গণনার দিন নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে।

সমীক্ষার খবর জানার পরেই হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বর্ধমানের ভাতার। সেখানে আবার হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নবম ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া দুই ভাইও! ভাতারের ঘটনায় ৭ জন এবং আরামবাগে ৮ জন হাসপাতালে ভর্তি। বর্ধমানে এক জন তৃণমূল সমর্থক এবং আরামবাগে দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শাসক দলের তরফে আক্রমণ বাড়ছে জেনেই সিপিএম নেতৃত্ব এ দিন চেষ্টা চালিয়েছেন কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে। এ দিন কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং উদ্বাস্তু আন্দোলনের নেতা কান্তি বিশ্বাসের স্মরণসভায় সূর্যবাবু বলেন, ‘‘স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের জোটের জয় নিশ্চিত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমাদের এই লড়াই এগোবেই।’’ গণনার দিনের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে ২০টি জেলার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন রাজ্য সম্পাদক। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘কর্মীদের বলেছি, টিভি চ্যানেল দেখে এত টেনশন করবেন না! আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা। নিজেদের দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ভাবে পালন করুন। অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ান।’’ জিতলে যে দায়িত্ব বেড়ে যায়, প্রয়াত জ্যোতি বসুর কথা এনে তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু আবার বলেছেন, ‘‘জিতলে কাজ করতে হবে। হারলেও নিজেদের কাজ করে
যেতে হবে।’’

বামেদের তরফে এমন বার্তার পরেও জেলায় জেলায় পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আভাস মিলছে। ভাতারের মোহনপুরে যেমন সোমবার রাত থেকে এ দিন সকাল পর্যন্ত গোলমাল চলেছে তৃণমূল-সিপিএমে। পুলিশের হিসেবে, দু’পক্ষের ১৭টি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, সোমবার সন্ধে নাগাদ সামন্তপাড়ায় তৃণমূল বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। সকাল ৬টা নাগাদ তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পিস্তল, বোমা, রামদা নিয়ে মোহনপুর গ্রামের খাঁ পাড়ায় হামলা চালায়। সিপিএম কর্মী নবকুমার রায়ের বাড়িতে দল বেঁধে ঢোকে তারা। নবকুমারবাবুকে না পেয়ে তাঁর বড় ছেলে, নবম শ্রেণির ছাত্র কার্তিককে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। নববাবুর স্ত্রী অর্চনাদেবীর দাবি, দুষ্কৃতীদের হাতে-পায়ে ধরেন তিনি। সেই ফাঁকেই কোনও রকমে পালায় কার্তিক। অর্চনাদেবীর অভিযোগ, এর পরেই দুষ্কৃতীরা তাঁর ছোট ছেলে, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র দুধকুমারের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। অর্চনাদেবী কোনও রকমে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালান। তাঁর দাবি, ‘‘কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখলাম, কী ভাবে সব ভেঙেচুরে ফেলল ওরা!’’

সোমবারের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও আতঙ্ক কাটেনি দুধকুমারের। মাকে জড়িয়ে সে খালি বলে গিয়েছে, “মা, আমার খুব ভয় করছে। দাদা কখন আসবে? ওরা আবার এসে আমাকে মারবে না তো?” আর মা ছেলেকে ধরে কাঁদছেন। যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের দাবি, “সিপিএম হেরে যাবে বলে আমাদের উপরে আক্রমণ করেছে। এখন নজর ঘোরানোর জন্য অমানবিক ভাবে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”

হুগলির পুরশুড়া, গোঘাট, আরামবাগ এবং খানাকুলের বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাত থেকে বোমাবাজি, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের আরামবাগ জোনাল নেতা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল দেখেই লাগামছাড়া সন্ত্রাস শুরু করেছে তৃণমূল।” আরামবাগে তৃণমূল ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দীর পাল্টা দাবি, “সিপিএমই এলাকা উত্তপ্ত করতে প্ররোচিত করছে। আমাদের কর্মীরা সংযতই আছে।’’ মহকুমা শাসক প্রতুলকুমার বসুর বক্তব্য, “সোমবার বিকালেই শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার আবেদন জানিয়ে সর্বদল বৈঠক করেছি। তার পরেও বিশৃঙ্খলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

assembly election 2016 suryakanta mishra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy