Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ভোটযুদ্ধে মূল হাতিয়ার আদিবাসী উন্নয়ন

বলাই বাহুল্য কেশিয়াড়িতে। আর আপাতত সেই বলাই নায়েকই ভাবাচ্ছেন শাসক তৃণমূলকে। বিক্ষুব্ধ হিসাবে লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির জেলা সভাপতি বলাইবাবু নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেশ করেছেন।

দেবমাল্য বাগচী
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

বলাই বাহুল্য কেশিয়াড়িতে।

আর আপাতত সেই বলাই নায়েকই ভাবাচ্ছেন শাসক তৃণমূলকে। বিক্ষুব্ধ হিসাবে লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির জেলা সভাপতি বলাইবাবু নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেশ করেছেন। ফলে তিনি যে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক থেকে একটা বড় অংশ যে কেটে নেবেন, তা বলাই বাহুল্য।

সুবর্ণরেখার উত্তর-পূর্বে জঙ্গলমহল ঘেঁষা কেশিয়াড়ি বিধানসভা। আদিবাসী অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে বাম জমিন বেশ শক্ত বরাবরই। কিন্তু গত কয়েক বছরে সারা রাজ্যের মতো এখানেও অনেকটাই বেড়েছে তৃণমূলের প্রভাব। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দলের ভিতরের কোন্দলও। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আদিবাসী উন্নয়নের প্রসঙ্গটিও।

কেশিয়াড়ির ন’টি ও দাঁতন-১ ব্লকের আটটি অঞ্চলের ২৭১টি বুথ নিয়ে কেশিয়াড়ি বিধানসভার ৬৮ শতাংশ মানুষ তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। আদিবাসী উন্নয়নই এখানে ভোট জয়ের মূল অস্ত্র। আসনটি তফশিলি উপজাতি সংরক্ষিতও বটে। ১৯৮২ সাল থেকে একটানা আধিপত্য বজায় রেখেছে সিপিএম। এমনকী পরিবর্তন ঝড়ের ২০১১ বিধানসভাতেও কেশিয়াড়ির বিধায়ক ছিলেন বিরাম মান্ডি। কিন্তু সে সময় এই বিধানসভার আদিবাসী ভোটের একটা বড় অংশ গিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দিকে। তাই বিরাম মান্ডি জিতেছিলেন মাত্র ১০৩৭ ভোটের ব্যবধানে। ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলা তৃণমূল অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল ২০১৪লোকসভা ভোটে। সে বার মাত্র ২৯শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা। প্রায় ৫১শতাংশ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সেখানেও কিন্তু ছিল আদিবাসীদের একটা বড় অংশের সমর্থন।

কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বেশ খানিকটা বদলেছে। এলাকার আদিবাসী সংগঠনগুলির দাবি, এই পাঁচ বছরের শেষে তাঁদের উন্নয়নের ঝুলিটা খালিই রয়ে গিয়েছে। বরং ইন্দিরা আবাসের সুযোগ থেকেও অনেক আদিবাসী বঞ্চিত হয়েছেন। তাই আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন। বিক্ষুব্ধ নির্দল বলাইবাবু বলছেন, “বঞ্চিত আদিবাসীরা এ বার আমাদের সমর্থন করবে। অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে এই লড়াই।”

বলাইবাবু প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল যে চাপে রয়েছে, তা নিয়ে কোনও রাখঢাক নেই দলে। প্রার্থী পরেশ মুর্মু বলেন, “এখানে সিপিএম ও বিজেপি আমাদের কাছে কোনও ‘ফ্যাক্টর’ নয়। তবে বলাইবাবু প্রার্থী হওয়ায় আমাদের একটু চাপ বেড়েছে। তবে মানুষ উন্নয়নের নিরিখে ভোট দেবেন। আমাদের জয় হবেই।”

কেশিয়াড়ির লড়াইয়ে অন্য মজা রয়েছে বিজেপি-র। গত পাঁচ বছরে এই এলাকায় বিজেপি-র সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে বলে দাবি করেছেন নেতারা। ভোটের হারেও বেড়েছে বিজেপি। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে কেশিয়াড়িতে বিজেপি-র ভোট ছিল প্রায় ৩.৯৭শতাংশ। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রায় ১৪.৫ শতাংশ ভোট পায়। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ মনে করেন লোকসভায় সিপিএম ও তৃণমূলের ভোট কেটেই বিজেপি বাড়বাড়ন্ত।

কিন্তু এ বার বিজেপি প্রার্থী করেছে বিনোদবিহারী মুর্মুকে। বিনোদবাবু কেশিয়াড়ির প্রাক্তন বিধায়ক মহেশ্বর মুর্মুর ছেলে। ১৯৮২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এই কেন্দ্রে সিপিএমের হয়ে জিতে এসেছেন এই মহেশ্বরবাবু। বয়সের কারণে এখন তিনি রাজনৈতিক অবসরে। তাই গতবার বিধায়ক পদ প্রার্থী ছিলেন বিরাম মান্ডি। কিন্তু বিনোদবিহারীবাবু এ বার বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় হাওয়া অন্যরকম। বিনোদবাবুর আশা, বাবার ভোটের অনেকটাই তিনি পাবেন ছেলে হিসাবে। তবে দলীয় সংগঠন নিয়েও তিনি যথেষ্ট আশাবাদী। বরং তিনি বলছেন, ‘‘তৃণমূলের মতো বাম-কংগ্রেস জোটকেও মানুষ ভালভাবে মেনে নিতে পারবেন না। মানুষ বামেদের চান না। বিকল্প খুঁজছেন তাঁরা। ফলে তাই উভয় তরফের অনেক ভোটই আমার দিকে আসবে।’’

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সারদা কেলেঙ্কারি প্রভাব ফেলেছিল। এ বারও ভোটের মুখেই যে ভাবে নারদ কাণ্ড প্রকাশ্যে এসেছে তাতে বেশ চাপে শাসকদল। কেশিয়াড়ির ব্যবসায়ী অনিন্দ্য সাহু বলেন, “সারদার মতো ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে অনেকেই ঠকেছিলেন। এ বার আবার ঘুষকাণ্ড। কিন্তু গ্রামের মানুষ এ সব বোঝে না। তবে তাঁরা ভয় পায় গোলমালকে।’’

তবু সিপিএম কি পারবে তাঁদের দীর্ঘদিনের জেতা আসনটি ধরে রাখতে, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বাম-কংগ্রেস জোটের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দাঁতন-১ ব্লকে তৃণমূলের বাড়বাড়ন্ত। দাঁতন-১ এর আলিকষা, তররুই, মনোহরপুর, আঙ্গুয়া, কেশিয়াড়ির বাঘাস্তি ও নছিপুর অঞ্চলে তৃণমূলের প্রভাবে শঙ্কিত বামেরা। বিদায়ী বিধায়ক তথা সিপিএম প্রার্থী বিরাম মান্ডির অভিযোগ, ‘‘ওই সব এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাস চালাচ্ছে শাসকদল। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হলে আমরাই জয়ী হব। কিন্তু জঙ্গলমহলের নির্বাচনের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় আশঙ্কা বাড়ছে।’’

কেশিয়াড়ির অন্যত্র অবশ্য রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। বিরাম মান্ডি বলেন, “কেশিয়াড়িতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চরমে। ওঁদের দুই শিবির প্রার্থীকে ধরে টানাটানি করছে। মানুষ এ সব ভাল চোখে দেখছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE