ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই অশান্তির আগুন জ্বলেছিল বিভিন্ন জেলায়। ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় শাসকদলের এগিয়ে থাকায় আভাস মিলতেই মঙ্গলবার দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হিংসার ঘটনা ঘটে। আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ। ফল ঘোষণার পর যে কোনও ধরনের অশান্তি এড়াতে তৎপর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ-প্রশাসন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যুযুধান দুই শিবিরও দলের কর্মী- সমর্থকদের এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ভোটের পরে জেলায় বড় কোনও অশান্তি হয়নি। কোথাও কোথাও সামান্য গোলমাল হয়েছে। তবে দেখা গিয়েছে, সেই গোলমাল থামানোর জন্যও সব রাজনৈতিক দল সচেষ্ট ছিল।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও বলেন, “যে কোনও জায়গাতেই গোলমাল থামানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা ভূমিকা থাকে। নেতৃত্বের কথা অনেকে শোনেন। আশা করি, ভোটের ফলপ্রকাশের পরও জেলায় তেমন অশান্তি হবে না। সর্বত্রই শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।”
এ নিয়ে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “সর্বদল বৈঠকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। অশান্তি এড়াতে যা যা পদক্ষেপ করার সবই করা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরের বক্তব্য, “বেশ কিছু এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। পুলিশের মোবাইল ভ্যানও ঘুরছে। এরপরও বিশৃঙ্খলা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।”
কী বলছে যুযুধান দুই শিবির? বাম নেতা তথা মেদিনীপুরের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণা বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমাদের লড়াই । গণতন্ত্র বিপন্ন করতে নয়। দলের কর্মীদের বলা হয়েছে, এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে। মানুষ আক্রান্ত হলে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে। পুলিশ- প্রশাসনকেও বলছি, এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খড়্গপুর গ্রামীণ কেন্দ্রে দলের প্রার্থী দীনেন রায় বলেন, “দলের কর্মীদের কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দিতে বলা হয়েছে।দলের কেউ কোনও গোলমালে জড়াবে না। কর্মীরা সংযতই থাকবেন।”
ভোটের আগে ও পরে সবংয়ের বিভিন্ন এলাকায় হিংসার ঘটনা ঘটে। সবংয়ে খুন হন তৃণমূল কর্মী। এ দিন কংগ্রেসের মোহাড় অঞ্চল সহ-সম্পাদক কানাই জানা বলেন, “নির্বাচনের পর থেকে পথে বেরলেই দেখে নেব বলে হুমকি চলছে। সবং বিধানসভায় আমরা জিতলেও নিশ্চিন্ত হতে পারব না। রাজ্যে জোট ক্ষমতায় না এলে মিথ্যে মামলা, মারধরের আশঙ্কা রয়েছেই।’’ যদিও এ নিয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয়বাবু বলেন, “ভোটের আগে যেমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল গণনার পরেও যাতে তা বজায় থাকে সেটা আমি সম্প্রতি প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক ডেকে বলে দিয়েছি। আশা করছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হবে না।”
গোলমাল এড়াতে দলের কর্মীদের সংযত থাকার কথা বলছেন বিভিন্ন দলের জেলা নেতারাও। বিজেপি নেতা ধীমান কোলের কথায়, “ভোট তো একটা উৎসব। সেখানে ভোটকে কেন্দ্র করে অশান্তি হবে কেন? কেন মানুষ আশঙ্কায় থাকবে? উদ্বেগে থাকবে? যে করেই হোক, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে হবে।” একই মত কংগ্রেস নেতা সৌমেন খানের। সৌমেনবাবুর কথায়, “অশান্তি এড়াতে যা যা পদক্ষেপ করার আশা করব পুলিশ- প্রশাসন সেই পদক্ষেপ করবে।”
আজ, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর কলেজে (উপরে) ও খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে (নীচে) হবে ভোট গণনা। বুধবার দুই জায়গাতেই কড়া নজরদারি। — নিজস্ব চিত্র।
ভোটের পর থেকে কমবেশি অশান্তি চলছিল জেলার বেশ কিছু এলাকায়। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সমস্ত এলাকায় নির্দেশ পাঠিয়েছেন, ভোটের ফলপ্রকাশের দিন স্থানীয় নেতারা যেন এলাকা না ছাড়েন। কোথাও কোনও গোলমাল হলে তা থামানোর জন্য স্থানীয় নেতারাই যেন পদক্ষেপ করেন। পুলিশ- প্রশাসনের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করেন।
গণনা কেন্দ্রে মূল পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি প্রতিটি টেবিলে থাকছেন মাইক্রো অবজারভার। মাইক্রো অবজারভাররা মূল পর্যবেক্ষককে সাহায্য করবেন। জেলার চার জায়গায় ভোট গণনা হবে। মেদিনীপুরে হবে চারটি কেন্দ্রের গণনা এবং খড়্গপুরে হবে আটটি কেন্দ্রের গণনা। ঘাটালে হবে তিনটি কেন্দ্রের গণনা। ঝাড়গ্রামে হবে চারটি কেন্দ্রের গণনা। খড়্গপুরে ঝাপেটাপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের ফল গণনা হবে। নির্বিঘ্নে গণনা সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি, সুষ্ঠুভাবে গণনার কাজ সম্পন্ন করা যাবে।”
প্রতিটি গণনা কেন্দ্র ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হবে। অশান্তি এড়াতে গণনা কেন্দ্রের সামনে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হবে। পর্যবেক্ষক ছাড়া গণনার ঘরে কেউ ঢুকতেও পারবেন না। আগে পোস্টাল ব্যালট গণনা হবে। পরে ইভিএম গণনা শুরু হবে। জেলার বিধানসভা কেন্দ্রগুলোয় গড়ে ১৮- ২০ রাউন্ড গণনা হবে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার মতে, “সব কিছু ঠিকঠাক চললে দুপুর ১২টা- সাড়ে ১২টার মধ্যেই বিধানসভার ফলাফল জানা যাবে।”