Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

সাতাশে চোখ, তালিকা তৈরি তিরস্কারেরও

কেউ দু’হাত ভর্তি নম্বর পেয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছেন। আবার কারও হাতে রয়ে গিয়েছে পেনসিল। কারও খাতা-পেনসিল সবই উড়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের ফল অনেক ভাল হলেও দলনেত্রী কয়েকটি জেলার বেহাল দশায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ভাল ফলের জন্য হাতে-গরমে বাহবা উত্তরবঙ্গের কজন পাচ্ছেন তা আগামী শুক্রবারেই শপথ গ্রহণের দিনই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০২:৩৬
Share: Save:

কেউ দু’হাত ভর্তি নম্বর পেয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছেন। আবার কারও হাতে রয়ে গিয়েছে পেনসিল। কারও খাতা-পেনসিল সবই উড়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের ফল অনেক ভাল হলেও দলনেত্রী কয়েকটি জেলার বেহাল দশায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ভাল ফলের জন্য হাতে-গরমে বাহবা উত্তরবঙ্গের কজন পাচ্ছেন তা আগামী শুক্রবারেই শপথ গ্রহণের দিনই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু, কার কী শাস্তি হতে পারে তা স্পষ্ট হতে অন্তত আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন। তৃণমূলের অন্দরে পুরস্কার-তিরস্কারের তালিকা অনেকটাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। কার্যকারণও তাতে রয়েছে। দলের সূত্রে পাওয়া সেই তালিকা সংক্রান্ত কিছু তথ্য এরকম:

Advertisement

বাহবা-তালিকা

সৌরভ চক্রবর্তী

চা বলয়ের দুই জেলায় ১২টি আসনের মধ্যে ১০টি তৃণমূলের দখলে। আলিপুরদুয়ারে ৫টির মধ্যে ৪টি। জলপাইগুড়িতে ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি। একযোগে দুটি জেলার সভাপতি, এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সৌরভই তাই দলের মধ্যেই যে সংশয় ছিল, তা উড়িয়ে শেষ হাসি হেসেছেন। বিধানসভা কেন্দ্র পিছু পর্যবেক্ষক না দিয়ে ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েই বাজিমাত করেছেন। দলের মধ্যে ‘সৌরভ মডেল’ বলেই যা কি না আলোচিত হচ্ছে। তাই কী পুরস্কার আশা করছেন? সৌরভের জবাব, ‘‘আমি দলের সৈনিক। দলনেত্রী যে দায়িত্ব দেবেন তা পালন করাই লক্ষ্য।’’ সৌরভের পুরস্কার প্রাপ্তি তাই সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

অমল আচার্য

এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল হয়নি। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও ঠিকঠাক চলছে না। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি, উপরন্তু, বামেদের সঙ্গে জোট। লড়াইটা বেশ কঠিন ছিল। জোটের বাজারেও অমলবাবু ইটাহারে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়কে ফের হারিয়েছেন। জেলায় ৪টি আসন ধরে রেখেছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন যিনি, সেই দীপা দাশমুন্সির খাসতালুক উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূলের সংগঠনকে আরও শক্তপোক্ত করার ব্যাপারে অমলবাবু যে দলনেত্রীর সমীহ আদায় করেছেন তা নিয়ে তৃণমূলের অনেকেরই সন্দেহ নেই। ফলে, অমলবাবু স্বীকৃতি পাবেনই বলে আশায় বুক বাঁধছে জেলা তৃণমূল।

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ভাল ফলের ধারাবাহিকতা রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। জোটের বাজারে এমনও বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তৃণমূল ৪টির বেশি আসন জেলায় পাবে না। কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারে আসন পেয়ে রেকর্ড করেছেন রবিবাবু। গত বিধানসভায় অনেক আশা করলেও মন্ত্রিত্ব পাননি। তা নিয়ে কোচবিহারে অনেকেই হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন। অনেক বাধা টপকে এ বার তিনি তবে জোটের বাজারে এমন ফল উপহার দিয়েছেন দলকে। ফলে হাতে-গরম রসগোল্লা মিলবেই বলে নিশ্চিত তৃণমূলের জেলার অনেকেই।

যে জন আছে মাঝখানে

গৌতম দেব

উত্তরবঙ্গে দলের ভাল ফলের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ভূমিকা তো রয়েইছে। ফলে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ফের নিজের পদে বসবেন বলেই মনে করছেন দলের অনেকে। কিন্তু, নিজের জেলা দার্জিলিঙে একটি আসন না মেলার দায় কিছুটা হলেও তো গৌতমবাবুর উপরেও বর্তাবে বলে দলের অনেকে মনে করছেন। দলের একাংশের মতে, দার্জিলিং জেলার দলের দায়িত্ব ফের তাঁর উপরেই দিতে পারেন দলনেত্রী। তবে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে দলনেত্রীর কাছে তিনি ভর্ৎসিত হয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী হলেও এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান সহ কয়েকটি পদ কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

উদয়ন গুহ

তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলে থাকেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তই নাকি জীবনের সব থেকে বুড়ি ‘ঝুঁকি’। একে দীর্ঘ দিনের অনুগামী, সঙ্গীদেরও বুঝিয়ে তৃণমূলে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ সঙ্গে নতুন দলে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, তায় আবার তৃণমূলের জেলা নেতাদের কয়েকজনের কট্টর বিরোধিতা। তারপরেও দিনহাটায় ঘাসফুলের পতাকা আর সবুজ আবির উড়ছে তার হাত ধরেই। তৃণমূল অন্দরের খবর, সে কারণেই তাঁর নাম নিয়ে কালীঘাটে নাকি আলোচনা চলছে। তবে পুরোনো বিধায়কদের মন্ত্রী না করে উদয়নবাবুকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে দলের ভিতরেই রয়েছে নানা মত।

বাচ্চু হাঁসদা

তৃণমূলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ‘আদিবাসী মুখ’। তপন কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক। জেলায় এবারে দলের ‘হেভিওয়েট’দের পতন হলেও, তিনি বিধানসভা রক্ষা করেছেন। প্রাথমিক সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে বির্তক তাঁকে তাড়া করলেও মন্ত্রিত্বের দৌড়ে এখনও রয়েছেন।

হরকাবাহাদুর ছেত্রী

তৃণমূলের প্রতীকে লড়তে চাননি। তাতে কী! জেতার দোরদোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। পাহাড়ে বিমল গুরুঙ্গদের শক্ত চ্যালেঞ্জে ফেলতে তিনিও তৃণমূল নেত্রীর তুরুপের তাস হতে পারেন। কাজেই সামনে পাহাড়ে পুরভোট। এক বছর পরে জিটিএ নির্বাচন। হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে সরকারি কোনও পদে দেখা যাবে বলে মনে করছেন তাঁর অনুগামীদের অনেকেই।

বকুনির আশঙ্কা

কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী

মালদহে তৃণমূলের খাতাই খোলেনি। তা হলে! কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হতে পারে! কী শাস্তি হতে পারে তা নিয়ে তৃণমূলের নানা মহলে কত কী যে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ তো ভাবছেন, কৃষ্ণেন্দুবাবর হাতে রয়েছে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ। সেটাও কী কেড়ে নিতে পারেন দলনেত্রী? নাকি চেয়ারম্যান রেখেই ফের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কঠিন নিয়মের বাঁধনে বেঁধে দেবেন দলনেত্রী। অপেক্ষায় মালদহ।

বিপ্লব মিত্র

তিনি নিজেও হেরেছেন। দলের মধ্যে ফিসফাস, অভিযোগ, কেউ কেউ নাকি বিপ্লববাবুর সহযোগিতা না পেয়েই হেরেছেন। অথচ গোষ্ঠী রাজনীতি ঠেকাতে গত বছর দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন বিপ্লববাবু। এ বারের ভোটে নিজের কেন্দ্রেই হেরেছেন তিনি। জেলায় দলের হাতে মাত্র ২টি আসন। দীর্ঘদিন জেলা সভাপতি থাকায় এই ব্যর্থতার দায় তাঁকেও নিতে হবে বলে দলের একাংশের দাবি। শুধু বিপ্লবাবু নন, তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

শঙ্কর চক্রবর্তী

দক্ষিণ দিনাজপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ সামাল দিতে শঙ্করবাবুকেই দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূল। প্রশাসনিক দিক থেকেও গুরুত্ব বেড়েছিল আগেই। প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক দুই দিক থেকেই জেলার নেতাদের ছাপিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৬টি আসনের মধ্যে এ বার দলের প্রাপ্তি মাত্র ২। জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বও তাঁর হাতে আর কতটা থাকবে সেটাই এখন আলোচ্য বিষয়।

সাবিত্রী মিত্র

দলনেত্রীর কাছ থেকে একাধিকবার সতর্ক বার্তা পেয়েছেন সাবিত্রী মিত্র। তবে এ বারের হার তাঁর সামনে বড়সর প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে। তিনি ভোটে হারেন না এমন মিথ এবার চুরমার। তাঁর এক আত্মীয়ের দাপটে অতিষ্ঠ এলাকার অনেকে। সেই অভিযোগ দলনেত্রীর কাছে পৌঁছেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.