Advertisement
১০ মে ২০২৪
ভরসা সেই সবুজেই

চড়াম চড়ামে চোনা রইল দুই আসনে

১১-০ হল না। প্রতি আসনে ৪০-৫০ হাজারের ব্যবধানও হল না। বাগে আনা গেল না কাজল শেখকেও। মর্যাদার লড়াইয়ে হাতছাড়া হল নানুর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

১১-০ হল না। প্রতি আসনে ৪০-৫০ হাজারের ব্যবধানও হল না। বাগে আনা গেল না কাজল শেখকেও। মর্যাদার লড়াইয়ে হাতছাড়া হল নানুর।

দু’টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে তৃণমূলের পক্ষে ফল দাঁড়াল ৯-২। দিনের শেষে তাই বীরভূমে গড় ধরে রাখতে পারলেও চোনা অনেকটাই রইল অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের ঝুলিতে!

বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি যদিও বলছেন, ‘‘আমি আগে বলেছিলাম, ১১টিই জিতব। শেষে বলেছিলাম, ১০-১ হতে পারে। মুরারইয়ে জেতার ব্যাপারে সংশয় ছিল। কিন্তু হাঁসন ও নানুরে আমরা মোটেই হারার মতো জায়গায় ছিলাম না। কেন হারলাম, তা নিয়ে পর্যালোচনা প্রয়োজন।’’

যদিও গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে জেলায় বিজেপি-র ভোট কমলেও হিসেব মেলেনি বামেদের। বাম নেতৃত্বের দাবি ছিল, লোকসভায় বিজেপি-র ভোট ছিল শাসকবিরোধী। যাঁরা বিজেপি-র পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। কিন্তু, স্বভাবে ‘তৃণমূল-বিরোধী’ হওয়ায় বিধানসভা ভোটে সেই ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বামেদের ঘরেই ঢুকবে বলে আশা ছিল নেতৃত্বের। কারণ হিসেবে নেতাদের ব্যাখ্যা ছিল, এ রাজ্যে বিজেপি-র সরকার গড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাই শাসকবিরোধী সেই ভোট বামেরাই পাবে বলে দাবি ছিল সিপিএম নেতৃত্বের। যদিও বেশ কিছু আসনের হিসেব বলছে, বামেদের সেই আশায় জল ঢেলেছেন মানুষ। বিজেপির ভোট-শতাংশ কমলেও তার বড় অংশ বামেদের ঘরে যায়নি। আবার বিজেপি-র ভোট শতাংশও ততটা কমেনি। তার জেরে মুরারইয়ের মতো উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশ কিছু আসনে বড় অঙ্কের ভোট পেয়ে বামেদের জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে শাসকদল তৃণমূলেরই সুবিধা করে দিয়েছে বিজেপি।

শাসকবিরোধী ‘হাওয়া’র পরেও এমন ফল হল কী করে? তৃণমূলের ব্যাখ্যা— ‘উন্নয়নে’র চাপে সারাদা-নারদার ‘অপপ্রচার’ উড়ে গিয়েছে। গ্রামের মানুষ দিদিকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীদের হাতে সাইকেল তুলে দেওয়া কিংবা ক্লাবগুলিকে অনুদানের মতো ঘটনা গ্রামের মানুষের উপর বড় প্রভাব ফেলেছে। স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে তোলার দিক থেকে যতই সমস্যা থাকুক না কেন, ওই সব উদাহরণ দিয়ে উন্নয়ন ‘দেখিয়ে’ মানুষের কাছে সহজেই ভোট চাইতে পেরেছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। বিরোধীদের দাঁড়ানোর কোনও জমিই দেয়নি। তাই লোকসভার ফলের হিসেবে জেলায় চারটি আসনে পিছিয়ে থেকেও তার তিনটিই ছিনিয়ে নিতে পেরেছে তৃণমূল।

আর অনুব্রত বলছেন, ‘‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়, উন্নয়নের জয়। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির তাবড় নেতা, সনিয়া থেকে রাহুল, নরেন্দ্র মোদী থেকে রাজনাথ সিংহ— কেউ প্রচারে আসতে বাকি রাখেননি। প্রচারে কুৎসা, মিথ্যাচার চলেছে। জবাব দিয়েছেন মানুষ। এক জন মহিলা উন্নয়নকে সঙ্গী করে একা গোটা রাজ্য চষে ফেলেছেন। এই জয় দিদির কেরিশমার, জয় মানুষের।’’

এ দিকে, এ দিন ভোটের প্রাথমিক ট্রেন্ডে তৃণমূলের এগিয়ে যাওয়ার খবর মিলতেই দৃশ্যতই হতাশা ছড়ায় বাম নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বেশির পার্টি অফিসে কর্মীদেরই দেখা যায়নি। লোকসভা ভোটের পরে এ বার বিধানসভাতেও হারের মুখ দেখতে হল প্রবীণ সিপিএম নেতা রামচন্দ্র ডোমকে। গণনার শেষে নিরাশ দেখাল তাঁকেও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য বলছেন, ‘‘এই ফল প্রত্যাশিত ছিল না। সারা রাজ্যের সঙ্গে জেলার ফলও খুব খারাপ। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘তবুও মানুষের রায় মানতেই হবে। কেন মানুষ আমাদের ভোট দেননি, তা এক্ষুনি বলা সম্ভব নয়। কারণ খুঁজতে গভীর পর্যালোচনা দরকার।’’

এর পরে কি জেলায় বামেদের কোনও প্রাসঙ্গিকতা থাকবে? মনোবলে ধাক্কা লাগলেও হার মানতে নারাজ বাম কর্মী-সমর্থকেরা। নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা জানাচ্ছেন, ২০১১-র ধাক্কা সামলে যদি টেকা যায়, এই হারের পরেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। অনুব্রত যদিও বলে দিয়েছেন, ‘‘আর চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজানোর প্রয়োজন নেই। ওদের শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। মৃত বাড়িতে ঢাক বাজে না। খোল করতাল বাজে। এ বার সেটাই বাজবে।’’ এর পরেই দলীয় কর্মীদের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা— ‘‘এই জয়ের পরে জেলায় যেন কোনও হানাহানি বা মারামারি না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE