Advertisement
E-Paper

কোন্দল-কাঁটা থেকেই গেল তৃণমূলে

প্রত্যাশার চেয়েও বেশি আসনে জিতেছেন বলে স্বীকার করছেন তৃণমূলের নেতারাই। কিন্তু অনেক প্রত্যাশিত আসন হাত ছাড়াও তো হল। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর থেকেই তাই কোথায় কী সমস্যা— তা খুঁজতে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল তৃণমূলের মধ্যে।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৩৯
জোর ধাক্কা নিজের গড়েই। ইংরেজবাজারে হারের পর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র।

জোর ধাক্কা নিজের গড়েই। ইংরেজবাজারে হারের পর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র।

প্রত্যাশার চেয়েও বেশি আসনে জিতেছেন বলে স্বীকার করছেন তৃণমূলের নেতারাই। কিন্তু অনেক প্রত্যাশিত আসন হাত ছাড়াও তো হল। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর থেকেই তাই কোথায় কী সমস্যা— তা খুঁজতে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল তৃণমূলের মধ্যে।

এই বিপুল জয়েও কাঁটা হয়ে রইল মালদহ ও দার্জিলিং। এই দু’টি জেলায় শাসক দল খাতাই খুলতে পারেনি বলে দুই জেলার নেতারা যে কোনও মুহূর্তে শাস্তির মুখে পড়ায় আশঙ্কায় প্রহর গুণছেন। আব্দুল করিম চৌধুরী, সাবিত্রী মিত্র, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, শঙ্কর চক্রবর্তীর মতো মন্ত্রীরা হেরেই গিয়েছেন।

তৃণমূলের অন্দরেই খবর, সাবিত্রীদেবী, কৃষ্ণেন্দুবাবু, শঙ্করবাবু ও আব্দুল করিম চৌধুরী অন্য কোনও দলের কাছে হারেননি। হেরেছেন নিজেদের দলের কাছেই। এবং সেটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে না পেরে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের শঙ্করবাবু ও বিপ্লব মিত্রের কোন্দল নতুন বিষয় নয়। তার উপরে হরিরামপুরে আছেন সোনা পাল। দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেছিলেন বিপ্লববাবুই। কোন্দল ভোটের আগে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি করা হয়েছিল শঙ্করবাবুকে। তাতে ঝগড়া কমা তো দূরের কথা, আরও মাথাচাড়া দেয়।

ভোটের মুখেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিকবার গোলমালের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এমনকী, দলের প্রার্থী সত্যেন রায় জেলাশাসকের কাছে গিয়ে নালিশ জানান, তাঁর বিরুদ্ধে জোটকে ভোট দিতে বলছে তৃণমূলের লোকজনই!

জেলার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জেলা সভাপতি হওয়ার পর থেকে শঙ্করবাবু নিজের মতো করে দল চালানোর চেষ্টা শুরু করেন। বিপ্লব অনুগামীদের গুরুত্ব খর্বের চেষ্টা শুরু হয়। শঙ্করবাবু ছেলে ও ব্যক্তিগত সহকারীকে দিয়ে ভোট করানোর চেষ্টা করেছেন বলে আলোচনা শুরু হয়। ফলেও তার প্রভাব পড়েছে। সভাপতি পদ হারানো বিপ্লববাবুও নিজের মতো করে দলকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন প্রশ্নে তাঁকে এবং বিপ্লববাবুকে উল্টো মেরুতে দেখা গিয়েছে। যার সব থেকে বড় উদাহরণ সোনা পাল। তাঁকে বহিষ্কার করেন বিপ্লববাবু। আর শঙ্করবাবু আসার পরেই তাঁর ‘স্নেহধন্য’ হিসাবে পরিচিত ওই নেতাকে দলে ফেরানো হয়।

মালদহে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং সাবিত্রী মিত্রের কোন্দল কমা তো দূরের কথা, ভোটের বাজারে তা আরও চরমে ওঠে বলে দলের মধ্যেই অভিযোগ রয়েছে। আড়াল থেকে দুলাল সরকারের মতো নেতার অনুগামীদের কয়েক জনও নিজস্ব গোষ্ঠীর প্রভাব বজায় রাখতে মরিয়া ছিলেন। তৃণমূল নেত্রীকে জেলা সফরে গিয়ে একাধিকবার এই নেতানেত্রীকে সতর্ক করতে দেখা গিয়েছে। তাতেও ফল মেলেনি। তিন জনই এ বার হেরে বসেছেন।

উত্তরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তালিকায় তৃণমূলের এক নম্বরে থাকা কোচবিহার অবশ্য নিজেদের অনেকটাই সামলে নিয়েছে। জেলায় ৪টি আসন থেকে বেড়ে ৮টি হয়েছে। শীতলখুচি, দিনহাটা, নাটাবাড়ি, মাথাভাঙা, কোচবিহার দক্ষিণ সর্বত্র দলীয় কোন্দলে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রচার থেকে দলীয় কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় একাধিকবার কোচবিহারে এসে ‘হুইপ’ পর্যন্ত জারি করেন। তাতে অনেকটা
ফল মিলেছে।

জলপাইগুড়িতে জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী, পুর চেয়ারম্যান মোহন বসু, কিসান কল্যাণী, কল্যাণ চক্রবর্তী থেকে হাল আমলের তরুণ নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায় নিজেদের মতোই ভোট করেছেন। যার ‘সুফলে’ জেলায় একমাত্র আসনে জিতে ফের বিধানসভায় যাচ্ছেন কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা। আবার দীপা দাশমুন্সি খাসতালুক উত্তর দিনাজপুর অবশ্য যে জায়গায় ছিল, সেখানেই পড়ে রয়েছে।

অমল আচার্য থেকে তিলক চৌধুরী বা আবদুল করিম চৌধুরী গোটা বছর নিজেদের লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। এ দিন অমলবাবু পাশ করলেও করিম সাহেব নিজের ‘ছেলেদে’র নিয়ে আলাদা ফ্রন্ট খুলতে গিয়ে দলের মধ্যেই বিরাগভাজন হয়ে হেরে বসেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। তেমনই দার্জিলিংয়ে জেলা নেতারা ভাইচুং ভুটিয়া ও গৌতম দেবকে নিয়েই ব্যস্ত থাকায় ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়া নকশালবাড়িতে তৃণমূল ভোটের পরীক্ষায় ফেল করেছেন।

assembly election 2016 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy