Advertisement
০৮ মে ২০২৪

তৃণমূলের কর্মী খুন পুরুলিয়ায়

ফল বেরোনোর পরে শান্তির আবহ রইল না রাজ্যে। বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে শব্দবাজি ফাটিয়ে বিজয়োল্লাসে বাধা দেওয়ায় এক বৃদ্ধ তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। রাজ্যের অন্য সব প্রান্তে অবশ্য গন্ডগোলে অভিযুক্ত শাসক দলই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

ফল বেরোনোর পরে শান্তির আবহ রইল না রাজ্যে। বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে শব্দবাজি ফাটিয়ে বিজয়োল্লাসে বাধা দেওয়ায় এক বৃদ্ধ তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। রাজ্যের অন্য সব প্রান্তে অবশ্য গন্ডগোলে অভিযুক্ত শাসক দলই।

তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা কোর কমিটির সদস্য নবেন্দু মাহালির অভিযোগ, এ দিন রাত ৯টা নাগাদ বাঘমুণ্ডি থানা এলাকার পাথরডি গ্রামে শব্দবাজি ফাটাচ্ছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। এলাকার তৃণমূল কর্মী লক্ষ্মণ পরামাণিক (৬০)-সহ স্থানীয় কিছু বাসিন্দা তার প্রতিবাদ করেন। এর পরেই কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী ধারালো অস্ত্র নিয়ে লক্ষ্ণণবাবুর উপরে চড়াও হন। গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তারেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তৃণমূলের দাবি, লক্ষ্মণবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের আরও দু’জন জখম হন। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘খবরটা পেয়েছি। পুলিশ ব্যাপারটা দেখছে।’’ বাঘমুণ্ডিতে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

এই ঘটনাটি বাদ দিলে এ দিন শহর কলকাতা থেকে শুরু করে হাওড়া, বর্ধমান গ্রামীণ এবং শিল্পাঞ্চল, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলিতে বিরোধীদেরউপরে হামলা, তাদের পার্টি অফিসে ভাঙচুরে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের। আবার কোথাও তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর লোকজন দলেরই বিরুদ্ধ শিবিরের উপরে চড়াও হয়েছে, উঠেছে এমন অভিযোগও।

জয়ের পরে এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সবাইকে শান্তি রক্ষার জন্য আবেদন করছি। ডিএম-এসপি-রা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনী বিধি থাকাকালীন পুলিশ-প্রশাসন কমিশনের অধীনেই থাকে। তা-ও আমি সকলকে শান্তি রক্ষার জন্য অনুরোধ করব।’’ তবে বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘ভোট-প্রচারে প্রকাশ্যে বিরোধীদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার কথা বলেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পার পেয়ে গিয়েছেন। তাতেই ভুল বার্তা গিয়েছে।’’

উত্তর কলকাতার চিড়িয়া মোড়ের কাছে এ দিন দুপুরে অলোক চক্রবর্তী নামে এক সিপিএম সমর্থককে মারধর করা হয়। অলোকবাবুর দাবি, স্থানীয় একটি ক্লাবে তিনি বসে ছিলেন। এক দল তৃণমূল সমর্থক সেখানে ঢুকে তাঁকে রাস্তায় ফেলে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারে। বেলেঘাটাতেও লুনা শিকদার নামে এক সিপিএম সমর্থককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। হাওড়ার শিবপুরের কাউসঘাট রোডে সিপিএম কার্যালয়ে হামলা চালায় তৃণমূলের পতাকা নিয়ে আসা এক দল যুবক। লিলুয়া ও বাঁকড়ার দু’টি ক্লাবেও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, ‘‘কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি। কারা করেছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

হামলার অভিযোগ উঠেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতেও। সিপিএমের অভিযোগ, আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্যেরা আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে সিটু-র সাংগঠনিক অফিসে চড়াও হয়। বনকাটি, দুর্গাপুরের বেনাচিতি, কালীগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ও কালীগঞ্জের সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোতেও অভিযুক্ত তৃণমূল। যদিও তৃণমূল নেতা মলয় ঘটকের দাবি, ‘‘কোনও সিপিএম কর্মীর গায়ে আঁচড় পড়েনি।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুর, ঝাড়গ্রামে একাধিক সিপিএম কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হুগলির খানাকুল, পুরশুড়া, গোঘাটে সিপিএম কর্মীদের মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, পার্টি অফিসে আগুন লাগানোতেও অভিযুক্ত শাসক দল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, পাথরপ্রতিমায় কংগ্রেসের কার্যালয়ে হামলা, কংগ্রেস এবং সিপিএম কর্মীদের দোকান গা-জোয়ারি করে বন্ধ করানোর অভিযোগও মিলেছে। কাকদ্বীপে সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মানেনি তারা।

বৃহস্পতিবার রাতে ব্যারাকপুর রেল স্টেশনের কাছে কংগ্রেসের দলীয় অফিসেও ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ব্যারাকপুরের কংগ্রেসের (শহর) সভাপতি শম্ভু দাস পুলিশে অভিযোগ করেছেন, রাত আটটা নাগাদ রেল স্টেশন সংলগ্ন ওই দলীয় অফিসে বেশ কয়েক জন কর্মী ছিলেন। সে সময় দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর চালায়। কয়েক জন কর্মীকেও মারধর করা হয়। এ দিনই রাত এগারোটা নাগাদ এ বছরের পানিহাটি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি লক্ষ করে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁর নামে হুমকি দিয়ে স্লোগানও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ পঞ্চসায়র থানা এলাকার শহিদ স্মৃতি কলোনিতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। প্রতিরোধ করে সিপিএমও। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলেও গভীর রাত পর্যন্ত গোলমাল চলে।

পাশাপাশি, সামনে এসেছে তৃণমূলের কোন্দলও। গণনা চলাকালীন দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গিতে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে দলের এক গোষ্ঠীর তিন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ উঠেছে কালনার সুলতানপুর এবং কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনে।

মুখ্যমন্ত্রী শান্তি রক্ষার আবেদন করার পরেও কেন বিভিন্ন জেলায় সন্ত্রাস হচ্ছে? তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে ৩০ হাজার গ্রাম, ১২৮টা শহর, ৭৭ হাজারের উপর বুথ আছে। সন্ত্রাস যদি হয়েও থাকে, তা ১ শতাংশ বা আধ শতাংশও নয়। দু’-একটা সামান্য ঘটনা ঘটলে তা দেখা হচ্ছে। তবে এ রকম ঘটনা ঘটছে না বলেই আমাদের কাছে খবর।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘ভোট মেটার পরে আক্রমণ শুরু হয়েছে। যাঁরা জিতেছেন, আশা করব, তাঁরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE