কোতুলপুর পার্টি অফিসের চেহারা ।
কোথাও পার্টি অফিস ভেঙে শৌচালয় হয়েছে। কোনওটার তালা ভেঙে সেখানে এখন আইসিডিএস সেন্টার। আবার কোথাও পার্টি অফিসটাই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবস্থা এমনই যে আতঙ্কে বহু এলাকায় এ হেন পার্টি অফিসের ধারেকাছেও ঘেঁষছেন না সিপিএমের কমরেডরা।
হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় ঘুরলে এমন উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক। দোরগোড়ায় ভোট। আধা সেনার খবরদারিও বহাল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলের সেই আবহ এখনও তৈরি হল কোথায়? প্রশ্ন বিরোধীদের।
জাঙ্গিপা়ড়ায় নয় নয় করে সিপিএমের সাত-সাতটি পার্টি অফিসে এখনও তালা ঝুলছে। অন্য কিছু অফিসের হালও কমবেশি একই। আগুন লাগানোর ঘটনার পর জোনাল অফিসটি বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল। বর্তমানে দলের তরফে সেটি সাফসুতরো করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া কম্পিউটার, ভাঙা জানলা, দরজা সরানো হয়েছে। কিন্তু আতঙ্কের পর্দা সরছে কই? অফিস নিয়মিত খোলা শুরু হলেও সেখানে এখনও নিয়মিত বসতে ভরসা পাচ্ছেন না দলের নেতা, কর্মী-সমর্থকেরা।
বাহানা পার্টি অফিসের জায়গায় তৈরি হয়েছে শৌচালয় ।
কেন?
উত্তর খুঁজতে বসলে সামনে চলে আসবে জাঙ্গিপাড়ায় ‘সেই ট্রাডিশন’-এর তত্ত্ব।
রাজ্যে শাসকের পরিবর্তন হলেও, বদল ঘটেনি সেই ‘ট্রাডিশনে’। এক সময় বসুমল্লিক, সিংহরায় নেতাদের দাপটে জাঙ্গিপাড়ায় বিরোধীরা ট্যাঁ-ফো করতে পারত না। এখন বিরোধী চেয়ারে বসে ট্যাঁ-ফো তো দূর, পার্টি অফিসই খুলতে পারছেন না বসুমল্লিকরা। লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত—একের পর এক নির্বাচনে সিংহরা ধরাশায়ী। সিংহের গহ্বরে এখন বাসা শাসকদলের কেষ্টবিষ্টুদের।
শাসকদলের দাবি, সিপিএমের পার্টি অফিসগুলিতে হামলার নেপথ্যে কার্যকারণ অবশ্যই রয়েছে।
কী সেই কার্যকারণ?
দিল্লিতে দলনেত্রীর উপর হামলায় সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত চক্রবর্তীর নাম জড়িয়েছিল। তার পর কী করে জাঙ্গিপাড়ায় দিদির ভাইরা হাত গুটিয়ে বসে থাকে? আর তাই-ই জাঙ্গিপাড়ায় সিপিএমের দোতলা জোনাল অফিসে চলে ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড। তার পরেও তৃণমূলের এক আধা নেতার সাফাই, ‘‘জাঙ্গিপাড়ায় এখন সিপিএমই অফিস খোলার পরিস্থিতিতে নেই। কী করেই বা কোনও মুখে এখানে ওঁরা অফিস খুলে বসবেন? দিদির আমলে এমন উন্নয়ন।’’
জাঙ্গিপাড়ার খুড়িগাছি দিলাকাশ অঞ্চলে সিপিএমের স্থানীয় পার্টি অফিসের জায়গায় এখন আইসিডিএস সেন্টার। মাস কয়েক আগে সেখানকার মুণ্ডলিকায় একটি স্কুল নির্বাচনে হেরে যায় শাসকেরা। সেই রোষে স্থানীয় সিপিএম অফিসে তালা মেরে দেয় শাসক দলের অনুগামীরা। লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজবলহাটের জাঁদা পার্টি অফিসে তৃণমূলের ছেলেরা ভাঙচুর চালিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। রসিদপুরের সোঁয়ারিতে একইভাবে বন্ধ হয়ে যায় পার্টি অফিস। কোতুলপুরের বাহানা অঞ্চলে ভাঙচুরের পর দীর্ঘদিন বন্ধই ছিল পার্টি অফিস। এখন সেখানে জনগণের জন্য শৌচালয় হয়েছে। তালিকাটা খুব ছোট নয়। স্থানীয় সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অলোক সিংহরায় বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনকে সবকিছু জানিয়ে এফআইআর করা হয়েছে। প্রশাসন সবই জানে। আধা সেনার টহল চলছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?’’
বস্তুত কী হয়, সেই ম্যাজিকের অপেক্ষাতেই যেন দিন গুনছেন কমরেডরা। কবে শিকে ছিঁড়বে সেই আশায় মনের দিক থেকেও ততটা সাড়া পাচ্ছেন না দলের বহু পোড়খাওয়া কর্মী-নেতা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘কে কী ভাবে আমাদের সাহায্য করবে সেই ভরসায় একটার পর একটা দিন চলে যাচ্ছে। ৩০ এপ্রিল ভোট। সব পার্টি অফিস যে ভাবেই হোক খুলে ভোটের প্রচারে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। না হলে বন্ধু আর পাটির কর্মীদের বাড়িতে বসে দলের কাজ এ ভাবে কতদিন চালানো সম্ভব?’’
এলাকার বিদায়ী বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য এ সব পাত্তা দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ তো যা খুশি করাই যায়। কিন্তু তার ন্যূনতম সারবত্তা থাকতে হবে তো! আসলে রাজনৈতিকভাবে এলাকায় ওঁদের (পড়ুন সিপিএম) মাটি নেই। তবে এ ভাবে কিছু হবে না। তৃণমূলের উন্নয়নের সুফল মানুষ দেখছেন। ভাল সাড়া পাচ্ছি। আগের চেয়ে আরও বেশি ব্যবধানে জিতব।’’ তিনি বলেন, ‘‘আরামবাগ, গোঘাটের মতো জাঙ্গিপাড়াতেও আগে সন্ত্রাসের ভোট হয় বলে রেওয়াজ ছিল। তবে এ বার তৃণমূলের নেতৃত্বে এখানে সন্ত্রাসমুক্ত ভোট দেখবে মানুষ।’’
শাসকদলের প্রার্থী যখন নিশ্চিত জয়ের স্বপ্নে বিভোর। তৃণমূলের উন্নয়ন তত্ত্বকে অসাড় করতে তখন এলাকায় সন্ত্রাসই ফিরি করছে জোট।
ছবি: দীপঙ্কর দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy