Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আড়াই মাস বাদে ফিরলেন সেই ছাত্রীর বাবা

গলির মুখটায় থমকে দাঁড়ান। চোখে জল আসে দু’জনেরই। তবে এ দিনও বাড়িতে ঢোকেননি তাঁরা। চোখের জল মুছে চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে যান ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে। রবিবার। সকাল তখন ১০টা। ধূপগুড়ির সেই নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা-মা।

অনির্বাণ রায়
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

ব্যবধান প্রায় আড়াই মাসের। গলির সামনে এসে একবার থমকে দাঁড়িয়েছিলেন স্বামী-স্ত্রী। গলির শেষে তাঁদের বাড়ি। আড়াই মাস তালাবন্ধ।

গলির মুখটায় থমকে দাঁড়ান। চোখে জল আসে দু’জনেরই। তবে এ দিনও বাড়িতে ঢোকেননি তাঁরা। চোখের জল মুছে চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে যান ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে। রবিবার। সকাল তখন ১০টা। ধূপগুড়ির সেই নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা-মা।

গত ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির সেই নিহত ছাত্রীর বাবা-মা। তারপরে আর এলাকায় ফেরেননি তাঁরা। রবিবার এলাকার প্রাথমিক স্কুলের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢোকেন দম্পতি। আড়াই মাস পরে ফিরলেন পুরোনো পাড়াতেও।

এ বারের ভোটে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার চালিয়েছিলেন। এ দিনও দিনভর জোটের কর্মীদের সঙ্গেই থাকলেন সেই ছাত্রীর বাবা।

তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা আমাকে হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে মানসিক ভাবে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি অম্বিকেশ মহাপাত্র-অশোক গঙ্গোপাধ্যায়দের পাশে পেয়েছি। ওঁরা আমার বাড়িতে এসে জোর দিয়েছেন। ওঁরা তৃণমূলে হঠাতে জোটের কথা বলেছেন। তাই আমিও জোটের হয়েই কাজ করেছি।’’

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের রাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতার ডাকা সালিশি সভাতে বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল দশম শ্রেণির ছাত্রীটি। তার ‘শাস্তি’ হিসেবে থুতু চাটানোর হুমকি দেওয়া হয়। দম্পতির অভিযোগ, হুমকি শুনেই অপমানে ছাত্রীটি পালিয়ে যায়। সভা থেকে কয়েক জন ছাত্রীর পিছু নেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু তার বাবাকে যেতে দেওয়া হয়নি। পরদিন সকালে পাশের রেললাইন থেকে ছাত্রীটির বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বাবা। অভিযুক্তরা সকলেই এলাকার তৃণমূল কর্মী। তারপর থেকেই ওই পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি-হেনস্থা সয়ে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

বুথ অফিসের থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই ছাত্রীর বাবা। বেশিরভাগ সময়টা স্কুলে ঢোকার গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বললেন, ‘‘পাড়ার সবাই ভোট দিতে আসবে। সকলের সঙ্গে দেখা করতে চাই।’’ পুরোনো পাড়ার পড়শিরা একে একে বুথে ভোট দিতে ঢুকেছেন, ছাত্রীর বাবা তাঁদের দিকে তাকিয়ে হেসেছেন। জোড় হাতে নমস্কার জানিয়েছেন। কেউ কুশল জানতে চাইলে এক দিকে মাথা কাত করে বুঝিয়েছেন, কোনও রকমে দিন কাটছে। মুখে অবশ্য কিছু বলেননি। তাঁর আশঙ্কা, কথা বললেই ‘ওঁরা’ তেড়ে আসতে পারে। প্রচার করার অভিযোগ তুলে হুমকি দিতে পারে। আশঙ্কা নিয়েও ভোটকেন্দ্রের সামনে থেকে দিনভর সরেননি তিনি। কেন? বললেন ‘‘মেয়েটার মৃত্যুর সুবিচারের জন্য এত দিন লড়াই করছি। মামলার তদন্তে ওরা রাজনীতি জড়িয়ে দিয়েছে। আমি যে হাল ছেড়ে দেইনি তা বোঝাতেই সারা দিন দাঁড়িয়েছিলাম।’’

আজ, সোমবার কলকাতা রওনা দেবেন তিনি। অম্বিকেশ মহাপাত্রের সমর্থনে প্রচার করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 dhupguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE