Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bhangar

bengal polls: লড়াই মূলত তৃণমূলের সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার

সিপিএম প্রার্থী হিসেবে রেজ্জাক মোল্লা ভাঙড়ে জিতেছেন দু’বার। ১৯৭২ এবং ১৯৮৭ সালে।

আকাশ কর
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৯
Share: Save:

একটা সময় ছিল যখন জটায়ু অনায়াসেই লিখে ফেলতে পারতেন ‘ভয়ংকর ভাঙড়’। আজ সেই জটায়ুও নেই, আজকের ভাঙড়কে দেখলে আপাত ভাবে ভয়ংকর বলাও যাবে না। তা বলে কী ভাঙড় একেবারেই ‘শান্তি-পুর’ হয়ে গেছে? তা-ও নয়। এই প্রেক্ষাপট খেয়াল রাখলেই বর্তমানে ভোট-রাজনীতির ছবিও অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।

সিপিএম প্রার্থী হিসেবে রেজ্জাক মোল্লা ভাঙড়ে জিতেছেন দু’বার। ১৯৭২ এবং ১৯৮৭ সালে। এর পরে তিনি আবার ওই আসনে ফিরে এসে জেতেন ২০১৬ সালে। তবে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে। এর পরে মন্ত্রীও হন সেই ‘চাষার ব্যাটা’। আবার এখানেই সমান্তরাল ভাবে দাপটের রাজনীতি করে যাচ্ছেন শিক্ষিকার দিকে জগ ছুড়ে মারা ‘তাজা নেতা’ আরাবুল। তাঁদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই রাজনৈতিক মহলে খুব অজানা নয়। রেজ্জাক এ বার বয়স ও অসুস্থতার কারণে প্রার্থী হননি। আবার শিকে ছেড়েনি আরাবুলের কপালেও। বরং নয়া চমক হিসেবে তৃণমূল নেত্রী এখানে প্রার্থী করেছেন আদতে কংগ্রেসি, লোকসভা ভোটে সিপিএমের প্রতীকে প্রার্থী হওয়া চিকিৎসক রেজাউল করিমকে। দলীয় সভা থেকে মমতা স্পষ্ট করেছেন, প্রার্থীপদ নিয়ে একাধিক দাবিদার থাকার কারণেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত।

এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন আরাবুল ইসলাম। নিজেদের পার্টি অফিস নিজেরাই পুড়িয়ে দেন তাঁর অনুগামীরা। প্রকাশ্যে কাঁদতেও দেখা যায় তাঁকে। যদিও দলীয় কাজে বেড়ানোর আগে হাতিশালা মোড়ে দাঁড়িয়ে অবশ্য বললেন, ‘‘দলনেত্রী যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা তো মানতেই হবে। তবে ১০০ লোক যাঁর সঙ্গে নেই, তিনিও যদি এখন প্রার্থী হওয়ার দাবিদার হয়ে ওঠেন, তা হলে আমি আর কী করব!’’ ভোটে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে আরাবুল কতটা পরিশ্রম করছেন, তা নিয়ে গুঞ্জন কিন্তু থেমে নেই।

ভাঙড়ের নির্বাচনকে অন্য মাত্রা দিতে আসরে প্রবল ভাবেই আছেন আইএসএফ প্রার্থী নওসাদ সিদ্দিকী। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র যখন তৃণমূল-বিজেপি টক্করের রাজনীতি চলছে, ভাঙড় সেখানে ব্যাতিক্রমী। এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তৃণমূল আর সংযুক্ত মোর্চার। গেরুয়া শিবির কি তা হলে লড়াই থেকে পিছিয়ে পড়ছে? বিজেপির প্রার্থী সৌমি হাতি অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের প্রতি মানুষের সাড়া যথেষ্ট ভাল। মোদীজির নেতৃত্বে বাংলায় যে পরিবর্তন আসতে চলেছে, এখানকার মানুষও তাতে শামিল হবেন।’’ সেই সঙ্গেই এখানে প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই (এমএল) রেড স্টারও। তাদের সমর্থন করছে পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জমিরক্ষা কমিটি।

গত লোকসভা ভোটেও একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে এই কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১,১১,৯৬৫ ভোটে। মাত্র ১৬% ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বামেরা। ১১% পেয়ে তৃতীয় হয়েছিল বিজেপি। সংখ্যালঘু ভোট একজোট হওয়ার সম্পূর্ণ ফায়দা তুলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তবে এ বার লড়াই রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি।

আব্বাস সিদ্দিকী ভাঙড়ে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই এই কেন্দ্রকে খানিকটা সম্মানের লড়াই হিসেবে নেয় আইএসএফ। দল গড়ে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যাওয়ার আগেই তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভাঙড় তাদের চাই। বিনা বাক্যে মেনে নেয় সিপিএম। তাই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ বার ‘ভাঙড়ে ভাইজান!’ তার পর থেকেই ‘ভাঙড়ে ভাঙচুর’ মাঝে মাঝেই খবরে। ভাঙড়ের বুকে তৃণমূলের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া, তাদের কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার মতো এ সময়ের মধ্যে বিরল অভিযোগ যেমন আছে, তেমনই আইএসএফ কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন।

তপ্ত দুপুরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাউড স্পিকারে তারস্বরে বাজছে আব্বাসের বিভিন্ন বক্তৃতা। সেই বক্তৃতা শেষ হতে না হতেই আবার শুরু হচ্ছে কানহাইয়া কুমারের গলায় বামেদের ‘আজ়াদি’ স্লোগান। চায়ের দোকান কিংবা অন্য যে কোনও জটলায় ‘ভাইজান’ এর নামে যেমন এক অদ্ভুত উন্মাদনা, তেমনই অনেকেই মানছেন ‘উন্নয়ন’ হয়েছে বিস্তর।

তৃণমূল প্রার্থী রেজাউল বলছেন, ‘‘৩৪ বছরে সিপিএম মুসলমান সমাজে যে মাদ্রাসা সংস্কৃতি চালু করেছিল তারই ফল হল আব্বাস। আগে বাম থেকে রাম এখন খাম হয়ে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা আমাদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ করছে। ভাঙড়ের মানুষ মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। দেবে না। যত ঘুরছি মানুষের সমর্থন তত বাড়ছে। স্থানীয় সমস্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই গা ঘামাচ্ছেন। ভাঙড়কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মতো আমারও অনেক স্বপ্ন আছে। তিনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করবই।’’

আত্মবিশ্বাসী আব্বাসের ভাই ফুরফুরার আর এক পীরজাদা নওসাদও। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই এখানে একের পর এক অন্যায় করে এসেছে তৃণমূল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। এ বার ভোট লুট রুখতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেটা রুখে দিতে পারলেই রেকর্ড ভোটে আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ তৃণমূলের তরফে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ধর্মের রাজনীতি’ করার অভিযোগ উঠছে। জবাবে আইএসএফ প্রার্থীর জবাব, ‘‘যখন জনপ্রতিনিধি হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছি, তখন ধর্মীয় পরিচয় ঘরে রেখে এসেছি। সবার ভোটেই জিতব। তার পর এত দিন যারা এখানে মানুষের উপরে জুলুম করেছে, আইনের আওতায় এনে তাদের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেব।’’

আনাজ চাষে এগিয়ে থাকা ভাঙড়ে, হিমঘর কিংবা উন্নত মানের হাসপাতালের মতো ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েও তৃণমূল অনুভব করছে, দু’বছর আগে ১ লাখেরও বেশি মার্জিনে এগিয়ে থাকা এই কেন্দ্রে ‘খেলা’ আক্ষরিক অর্থেই জমে গেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE