Advertisement
E-Paper

Bengal Polls: আবেগে মাল্যভূষিত হয়ে ভোটপ্রচারে কি করোনাকেই আহ্বান?

মালা পরে মানুষের ভালোবাসাকেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কামারহাটির সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৬:৫১
ভয়-মাল্য: করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। অথচ, প্রচারে বেরিয়ে দিব্যি মালা পরে ঘুরছেন ভোটপ্রার্থীরা।

ভয়-মাল্য: করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। অথচ, প্রচারে বেরিয়ে দিব্যি মালা পরে ঘুরছেন ভোটপ্রার্থীরা। এই মালাই বিপদ ডেকে আনবে না তো? (বাঁ দিক থেকে) শমীক ভট্টাচার্য, মদন মিত্র ও সায়নদীপ মিত্র। ফাইল চিত্র

অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। সেই অবস্থায় প্রচারে বেরিয়ে গলায় মালা পরে ঘুরছেন ভোট-প্রার্থীরা। এলাকায় তাঁদের স্বাগত জানাতে ‘জয়’-এর মালা পরিয়ে দিচ্ছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকের একটা বড় অংশ। তাঁরা বলছেন, ‘‘ওই মালা প্রার্থীকে কতটা স্বাগত জানাচ্ছে বলতে পারব না। তবে করোনা ভাইরাসকে যে স্বাগত জানানো হচ্ছে, সেটা বলাই যায়। ফুল থেকে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা তো রয়েছেই।’’ কিন্তু তা কি জানেন ভোট-যুদ্ধের ময়দানে থাকা প্রার্থীরা? সব দলের প্রার্থীরাই অবশ্য এই মালা পরানোকে বলছেন, কর্মী-সমর্থকদের ‘আবেগ’-এর বহিঃপ্রকাশ। যেমন কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের দাবি, ‘‘মানুষের আবেগকে প্রত্যাখ্যান করে লোকতন্ত্রে বেঁচে থাকা কঠিন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে প্রচারে ফুলের ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বদলে মাস্ক বিলি করব।’’

মালা পরে মানুষের ভালোবাসাকেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কামারহাটির সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র। বললেন, ‘‘মানুষের আবেগকে অস্বীকার করতে পারছি না। তবে করোনার দুশ্চিন্তাও রয়েছে। তাই পকেটে স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক নিয়ে ঘুরছি। মালা পরার পরে তাড়াতাড়ি সেটা খুলেও রাখছি।’’ আবার রাজারহাট-গোপালপুরের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে আবেগতাড়িত হয়ে কেউ প্রার্থীকে মালা পরাচ্ছেন, কেউ প্রচারে কুচো ফুল ছুড়ছেন। সেটায় তো আপত্তি করা যায় না।’’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন কড়া নাড়ছে, তখন এ হেন আবেগই বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সংক্রামক রোগ চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের কথায়, ‘‘মালা তো স্যানিটাইজ় করে পরানো হচ্ছে না। আর দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন মাধ্যমে করোনাভাইরাস ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সেখানে ফুল থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

গলা থেকে নাক-মুখের দূরত্ব খুবই কম। ফলে গলায় ঝোলানো মালা থেকে সহজেই প্রার্থী বা তাঁর আশপাশে থাকা লোকজনের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন হাত ঘুরে প্রার্থীর গলায় মালা পরানো হচ্ছে। তার থেকে ভাল হবে, মালা স্যানিটাইজ় করে হাতে নিয়ে এক পাশে রেখে দেওয়া। মাস্ক পরে থাকাও জরুরি।’’

বাস্তবে বহু জায়গাতেই রজনীগন্ধার একাধিক মালা পরে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে প্রার্থীকে। কে কার আগে মালা পরাবেন, তা নিয়েও চলছে হুড়োহুড়ি। মাস্ক ছাড়া হাসিমুখে হাত জোড় করে, মাথা ঝুঁকিয়ে সেই মালা পরেও নিচ্ছেন প্রার্থীরা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে সংক্রমণ রুখতে বিভিন্ন মন্দিরে ফুল দিয়ে পুজো দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে প্রার্থীদের মালা পরা নিয়ে আশঙ্কিত চিকিৎসকেরা। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান জ্যোর্তিময় পালের কথায়, ‘‘শরীরের বাইরে যে কোনও মাধ্যমে করোনাভাইরাস বেশ কয়েক ঘণ্টা থাকতে পারে। সেই মাধ্যম ফুলও হতে পারে। তাই মালা যেমন ব্যবহার করা ঠিক হবে না, তেমনই অযথা ভিড় না করে সব বিধি মেনে চলা উচিত।’’ কেন মালা পরা উচিত নয়, তা ব্যাখ্যা করে ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ শান্তনু ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন, যিনি মালা কিংবা ফুল বিক্রি করছেন, আর পাঁচ জনের মতো তিনিও হয়তো মাস্ক পরছেন না। এ বার ওই মানুষটি যদি সংক্রমিত হয়েও উপসর্গহীন হয়ে থাকেন, তা হলে বোঝা সম্ভব নয়। ওই বিক্রেতার হাঁচি-কাশি থেকে সহজেই ফুলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। এ বার সেই ফুলের মালা বিভিন্ন হাত বদল হয়ে এসে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাই বিপজ্জনক।’’

ফুলে ভাইরাস থাকার বিষয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানী সমিত রায় বলছেন, ‘‘ধূলিকণার মতো ভাইরাসও অতি সহজে ফুলের উপরে থাকতে পারে। তবে সেটিকে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। রাসায়নিক দেওয়া না হলে ফুলের উপরে থাকা ওই ভাইরাস সহজে ধ্বংস হয় না। দীর্ঘক্ষণ থেকে যায়।’’ তাই মাস্ক খুলে, মালা পরে ঘোরা প্রার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি ফল কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!

West Bengal Assembly Election 2021 West Bengal Polls 2021
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy