Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Election 2021

ভোটের প্রশিক্ষণে স্কুলে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য-বিধি

স্কুলের যে ঘরে প্রশিক্ষণ হচ্ছে, সেই ঘরেই পরের দিন পড়ুয়ারা ক্লাস করছে।

ভোটের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে হিন্দু স্কুলে। সেখানে ভোটকর্মীদের ব্যবহৃত কাগজের গ্লাসে ভরেছে স্কুলের বারান্দা।

ভোটের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে হিন্দু স্কুলে। সেখানে ভোটকর্মীদের ব্যবহৃত কাগজের গ্লাসে ভরেছে স্কুলের বারান্দা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১১
Share: Save:

প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকার পরে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল খুলেছে গত ১২ তারিখ। আর তার এক সপ্তাহের মধ্যেই বেশ কিছু স্কুল চিহ্নিত করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। এই সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যথাযথ স্বাস্থ্য-বিধি মেনে প্রশিক্ষণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। স্কুলের যে ঘরে প্রশিক্ষণ হচ্ছে, সেই ঘরেই পরের দিন পড়ুয়ারা ক্লাস করছে। করোনার পরিস্থিতিতে একই ঘরে এ ভাবে পড়ুয়াদের ক্লাস করা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, সেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক থেকে অভিভাবকেরা।

হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানান, তাঁদের স্কুলে বিধানসভা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। দিনে দু’টি শিফটে প্রশিক্ষণ চলছে। প্রতি শিফটে কয়েকশো জন সরকারি কর্মী প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন। শুভ্রজিৎবাবুর অভিযোগ, স্কুলে ঢোকার সময়ে পড়ুয়াদের জন্য যেমন জীবাণুনাশের ব্যবস্থা রয়েছে, এ ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা নেই। স্কুলে প্রশিক্ষণের কাজ হলে সেই জায়গা জীবাণুমুক্ত করা থেকে সব স্বাস্থ্য-বিধি মানার দায়িত্ব যাঁরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাঁদের উপরেই বর্তায় বলে শুভ্রজিৎবাবুর বক্তব্য। পড়ুয়াদের ঢোকার সময়ে তাদের দেহের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল গান ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রশিক্ষণ নিতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। একটি ক্লাসে অনেকে মিলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। শুভ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘সব চেয়ে আশঙ্কার বিষয়, পরের দিনই ওই সব ক্লাসরুমে পড়ুয়ারা এসে বসছে। ভোটের প্রশিক্ষণ তো দিতেই হবে, কিন্তু স্বাস্থ্য-বিধি মেনে ওই কাজ হলে ভাল হত।’’ শুভ্রজিৎবাবুর পরামর্শ, এখনও কলেজ খোলেনি, তাই কলেজের ঘর ব্যবহার করে ভোটের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণের পরে আবর্জনা ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল চত্বরে। রবিবার।

প্রশিক্ষণের পরে আবর্জনা ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল চত্বরে। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের মতো বৃহত্তর স্বার্থে স্কুলে ভোটের কাজ হতেই পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের তরফে কিছু বিধি মানা হচ্ছে। তবে রোজ প্রশিক্ষণ শেষ হলে আমরা স্কুল স্যানিটাইজ় করছি। একসঙ্গে অনেক কর্মী আসছেন, স্কুলের ভিতরে গাড়ি ঢুকছে, তাই চেষ্টা করছি স্কুলের বাইরের চত্বরও পরিষ্কার রাখতে।’’ বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে আগে প্রাথমিক টেট হয়েছে। তখন বহু পরীক্ষার্থী এসেছিলেন। সে ক্ষেত্রে কোভিড বিধি মেনে স্কুল জীবাণুমুক্ত করা থেকে শুরু করে থার্মাল গানের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মাপা— সবই হয়েছিল।

প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে স্কুলশিক্ষকেরাও কেউ কেউ মনে করছেন, স্কুলগুলিতে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে প্রশিক্ষণ হচ্ছে না। ফলে ওই স্কুলেই পরে যখন পড়ুয়ারা ক্লাস করতে আসছে, তখন ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষক সৌগত বসু বলেন, ‘‘আমি রিষড়া বিদ্যাপীঠে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে কার্যত কোনও স্বাস্থ্য-বিধি মানা হচ্ছে না। একটি বেঞ্চে তিন থেকে চার জন বসছেন। ওই বেঞ্চে বসেই কিন্তু পরের দিন ছাত্রেরা ক্লাস করবে। প্রশিক্ষণের পরে বেঞ্চগুলি খুব ভাল করে স্যানিটাইজ় করা দরকার।’’

এ বিষয়ে জানতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবকে ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএস-এর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE