Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Election: ‘পাল্টা’র রাজনীতি নিয়ে চর্চা এই কেন্দ্রে

জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের একাংশের মতে, এ বারের ভোটে যদি কোনও কেন্দ্রে ‘বাহুবলের আস্ফালন’ দেখা যায়, তবে সেটি পাণ্ডবেশ্বর।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫৮
Share: Save:

হুমকি-পাল্টা হুমকি, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, মারধর-পাল্টা মারধর। এমন নানা কিছু ‘পাল্টা’র মধ্যেই যেন আটকে রয়েছে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল ও বিজেপি, দুই দলের প্রচার-পর্ব। এ দিকে, সিপিএম তার প্রচারে ‘নতুন মুখ’কে এনে জোর দিচ্ছে কয়লার ‘বেআইনি কারবার’ বন্ধের কথা বলে।

২০১১-য় পাণ্ডবেশ্বর এবং দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি হয় পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা। ২০১১-য় ওই আসনে জেতে সিপিএম। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে জেলা জুড়ে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে ‘বিপর্যয়ের’ মধ্যেও এই পাণ্ডবেশ্বরে এগিয়েছিল তৃণমূল। ২০১৬-র বিধানসভায় অল্প ব্যবধানে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তবে, ২০১৯-এ এগিয়েছিল বিজেপি। এ বার এই কেন্দ্র থেকে বিজেপি, তৃণমূল ও সিপিএমের প্রার্থী যথাক্রমে জিতেন্দ্র তিওয়ারি, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সুভাষ বাউরি। জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের একাংশের মতে, এ বারের ভোটে যদি কোনও কেন্দ্রে ‘বাহুবলের আস্ফালন’ দেখা যায়, তবে সেটি পাণ্ডবেশ্বর। তাঁদের মতে, এর কারণ বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্রবাবু ও তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথবাবু। যদিও দুই প্রার্থীই এ তত্ত্বে আমল দেননি।

কিন্তু কেন এমন মনে হওয়া? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সাম্প্রতিক অতীত ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, জিতেন্দ্রবাবু দল ছাড়তেই বৈদ্যনাথপুর, ছোড়া-সহ নানা জায়গায় তৃণমূলে তাঁর অনুগামী বলে পরিচিতদের বাড়ি, ক্লাবের সামনে রাতে বোমাবাজি, শূন্যে গুলি চালানো, মারধরের মতো অন্তত ছ’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেগুলির বেশ কয়েকটিতে সরাসরি নাম জড়িয়েছে খোদ তৃণমূল প্রার্থীর। আবার, উল্টো দিকে, তৃণমূলকর্মীকে সরাসরি হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জিতেন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধেও। দুই প্রার্থীই যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সঙ্গে একে-অপরের বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত গুন্ডা জমায়েত’ ও ‘অস্ত্র মজুত’ করার মতো গুরুতর অভিযোগ প্রায়শই করছেন।

প্রচারেও দুই প্রার্থীর কোনও ‘খামতি’ দেখছেন না এলাকাবাসী। জিতেন্দ্রবাবুর সমর্থনে জেলায় এই মরসুমে প্রথম সভাটি পাণ্ডবেশ্বরের লাউদোহাতেই করে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরাসরি উপস্থিত জনতাকে বলেছেন, ‘‘আপনাদের প্রার্থী দমদার, তা হলে আপনাদের আওয়াজে দম নেই কেন?’’ উল্টো দিকে, প্রচারে ‘দম’ কম নেই নরেন্দ্রনাথবাবুরও। এসেছেন, অনুব্রত মণ্ডল। তৃণমূল সূত্রে খবর, আসতে পারেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পাশাপাশি, দুই প্রার্থীর প্রচারে ‘মেরুকরণের’ রাজনীতিও দেখছেন এলাকাবাসীর একাংশ। যদিও তা স্বীকার করেননি দু’জনেই। জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘এখানকার তৃণমূল প্রার্থী এক জন মাফিয়া। এই মাফিয়া-রাজের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নরেন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মাফিয়াদের সঙ্গে নিয়ে চলা প্রার্থীকে নিয়ে কিছুই বলার নেই।’’

জিতেন্দ্রবাবু দল ছাড়ার পরে তৃণমূলের কেন্দা, বহুলা, ছোড়া পঞ্চায়েতের কয়েকজন তৃণমূল সদস্য বিজেপিতে গিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির ভিতরে জিতেন্দ্রবাবুকে নিয়ে ‘অসন্তোষ’ যে বড় কম নয়, তা বোঝা গিয়েছে, প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরে ‘প্রকাশ্য বিক্ষোভ’ থেকে। উল্টো দিকে, তৃণমূলের এখনও নানা এলাকায় ‘মজবুত সংগঠন’ রয়েছে বলে দাবি। তবে, রয়েছে ‘গোষ্ঠী-কোন্দল’। দুই নেতাই তবে, ‘কোথাও কোনও দ্বন্দ্ব নেই’, এই মন্ত্র আওড়েই ভোট ময়দানে নেমেছেন।

চর্চা চলছে ‘উন্নয়ন’ নিয়েও। বিজেপি প্রার্থীর অস্ত্র, বিদায়ী বিধায়ক হিসেবে ‘ব্যক্তি জিতেন্দ্র’র ‘সাফল্য’ এবং সেই কাজে তৃণমূলের ‘বাধাদান’। উল্টো দিকে, নরেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘উনি উন্নয়নের কাজে ব্যর্থ এক জন বিধায়ক।’’— ঠিক এই জায়গা থেকেই চর্চায় রয়েছেন নবীন সিপিএম প্রার্থী সুভাষ বাউরিও। এলাকার পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, খনি-অঞ্চলে বামেদের শ্রমিক-সংগঠনের কথা। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর বছর ৩১-এর সুভাষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে ‘বাড়ি ছাড়া’ হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার পরেও, তিনি ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তরুণ প্রার্থী সেই ‘লড়াই’ স্মরণ করিয়ে দিয়েই বলছেন, ‘‘আমাদের লড়াই, অবৈধ কয়লার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ওই দু’জনের (তৃণমূল, বিজেপির প্রার্থীরা) প্রতিদিনের মারামারি থেকে পাণ্ডবেশ্বরকে মুক্ত করা। কর্মসংস্থানের কথা বেশি করে বলা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE