Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: হাওড়ায় ঢুকছে ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীরা, অভিযোগ

হাওড়া জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হবে দু’দফায়। গ্রামীণ হাওড়ায় হবে ৬ এপ্রিল এবং হাওড়া সদরে হবে ১০ এপ্রিল।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

ভোটের আগে এত দিন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যে অভিযোগ করে আসছিল, এ বার সেই একই অভিযোগ শোনা গেল খোদ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখে। তাদের অভিযোগ, ভোটে গন্ডগোল পাকাতে বিজেপি আগে থেকেই হাওড়া স্টেশন এলাকার একাধিক হোটেলে ভিন্ রাজ্য থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে রেখেছে। অবিলম্বে তল্লাশি চালিয়ে ওই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা দরকার। না-হলে নির্বাচনের দিন অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে হাওড়ার বিজেপি নেতা উমেশ রাই বলেন, ‘‘তৃণমূল নিজে যে সন্ত্রাস করবে বলে পরিকল্পনা করেছে, সেটাই এখন বিজেপি-র ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। ওরাই বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে জড়ো করছে।’’

হাওড়া জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হবে দু’দফায়। গ্রামীণ হাওড়ায় হবে ৬ এপ্রিল এবং হাওড়া সদরে হবে ১০ এপ্রিল। তৃতীয় ও চতুর্থ দফার সেই ভোটগ্রহণ পর্বের আগে মঙ্গলবার শহরে আসেন বিশেষ সাধারণ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই দুই পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দেখা করে এমনই অভিযোগ করেছেন হাওড়া জেলার তৃণমূল সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য। পর্যবেক্ষকদের কাছে তাঁরা তাঁদের অভিযোগে জানান, হাওড়া স্টেশন ও গোলাবাড়ি এলাকার মধ্যে বিভিন্ন হোটেলে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে প্রচুর দুষ্কৃতী এসে ডেরা বেঁধেছে। অবিলম্বে হোটেলগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে ওই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ধরতে হবে। না-হলে তারাই ভোটের দিন চার দিকে গোলমাল পাকাবে।

এত দিন দেখা গিয়েছে, শাসকদল ভোটদান প্রক্রিয়া ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ ভাবে মিটেছে বলে দাবি করলেও বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলত। কিন্তু খোদ শাসকদল কমিশনের সামনে আগে থেকেই এমন অভিযোগ জানানোয় তা রাজনৈতিক ভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।

এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই দুই পর্যবেক্ষক হুগলি নদীর ধারে পূর্ব রেলের বিশেষ অতিথি নিবাসে আসেন জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলতে, তাদের অভিযোগ ও বক্তব্য শুনতে। গত শনিবার ডুমুরজলা ময়দানে এক জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, ভোটের দিন বিজেপি ‘বহিরাগতদের’ ঢুকিয়ে গোলমাল পাকাতে পারে। কাঁথিতে প্রথম দফার ভোটে এমনই কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতীকে তৃণমূলের সমর্থকেরা ধরে ফেলেছিলেন বলেও দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী। তখনই ইঙ্গিত মিলেছিল যে, হাওড়ার ভোটে ‘বহিরাগত’ দুষ্কৃতীদের অভিযোগটি বড় আকার নিতে চলেছে।

হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা বা উত্তর হাওড়ায় বিভিন রাজ্যের বহু অবাঙালি বাসিন্দা রয়েছেন। ওই এলাকায় কে এখানকার ভোটার আর কে বহিরাগত, তা বোঝা খুবই মুশকিল। এটা ঘটনা যে, এর আগে বহু বহিরাগত দুষ্কৃতীকে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে হাওড়ার ওই সমস্ত এলাকায়।

বিজেপি-র আবার পাল্টা অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহিরাগত’ শব্দটিকে ব্যবহার করে যে ভাবে মহিলাদের প্ররোচিত করছেন ভোটের দিন ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি নিয়ে তাড়া করতে, তাতে তো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা নিয়েই সংশয় তৈরি হচ্ছে। এ দিন বিজেপি-র পক্ষ থেকে বিমল প্রসাদ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের কাছে অভিযোগে জানান, বহিরাগত বলে আসলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। কারণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীই এখন তৃণমূল নেত্রীর আক্রমণের লক্ষ্য।

এ দিন সিপিএমের পক্ষ থেকেও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগ জানিয়ে বেরোনোর পরে জেলা সিপিএমের মুখপাত্র অরূপ রায় এবং প্রবীণ সিটু নেতা সমীর সাহা বলেন, ‘‘আমতার চন্দ্রপুরে আমাদের প্রায় ৩৯২ জন সমর্থক ঘরছাড়া। তাঁরা বাড়ি ফিরতে চাইলে ভুয়ো মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি পুলিশ সব জায়গায় মোটেও নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে না।’’ নাজিরগঞ্জ, লিচুবাগান, থানামাকুয়া, গোয়াবেড়িয়ার মতো জায়গায় আরও কিছু বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গেই তাঁদের বক্তব্য, শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় না থেকে পুলিশকেও শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন করানোর দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে ওই দলের দুই সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ ও শুভ্রজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের সুবিধার্থে একাধিক নির্দল প্রার্থীকে দাঁড় করাচ্ছে। ভোটের দিন ওই প্রার্থীদের এজেন্টরা ভিড় করবেন বুথের ভিতরে। করোনা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার। সেই সঙ্গেই তাঁদের দাবি, বুথের ভিতরে কোনও গোলমাল হলে প্রিসাইডিং অফিসারের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিতি মাইক্রো-অবজ়ার্ভারেরাও যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ডেকে আনতে পারেন, তাঁদের সেই ক্ষমতাটুকু দেওয়া হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE