সোনালী গুহ। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার দিন শেষ হয়েছিল টিকিট-বঞ্চিত হয়ে চোখের জলে। রাত পোহাতে না পোহাতে অশ্রু মুছে বিজেপি-র দিকে পা বাড়ালেন সাতগাছিয়ার বিধায়ক সোনালি গুহ। শনিবার বিকালে সোনালি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে মুকুল রায়ের কথা হয়েছে। বিজেপি-তে যোগদানের বিষয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু জানতে পারব। আমার সিদ্ধান্ত নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এতদিন আমি যে রাজনৈতিক দল করতাম, সেই রাজনৈতিক দলের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’’
আন্দোলন পর্বে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ছায়াসঙ্গী’ ছিলেন সোনালি। ‘পরিবর্তন’-এর পর মমতা তাঁকে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার করেছিলেন। যে ভাবনার পিছনে কাজ করেছিল ক্লাসের সবচেয়ে দুরন্ত ছাত্র বা ছাত্রীকে ক্লাসের ‘মনিটর’ করে দেওয়া। কারণ, বিরোধীদলে থাকার সময় সোনালি বিধানসভায় তৃমমূলের ‘হল্লাব্রিগেড’-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন। সভা পরিচালনার ক্ষেত্রে সোনালি যে দারুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তা নয়। তবে তিনি চলনসই কাজ করছিলেন। কিন্তু সেই সময়েই হাওড়ার একটি বহুতলে গিয়ে তাঁর সরকারি পরিচয় ব্যবহার করে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সোনালি। তখন তাঁকে সতর্ক করেছিলেন মমতা। ২০১৬ সালেও তাঁকে সাতগাছিয়া থেকেই টিকিট দেওয়া হয়েছিল। সোনালি জিতেওছিলেন। কিন্তু দল এবং নেত্রীর সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছিল তাঁর। মমতা সরকারের দ্বিতীয় দফায় সোনালিকে ডেপুটি স্পিকার তো দূরস্থান, কোনও সরকারি পদও দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি শুধুই একজন বিধায়ক হয়ে রয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, ২০২১ সালে সোনালিকে দলের টিকিটও দেওয়া হল না।
তৃণমূলে একটা কথা খুব চালু যে, সেখানে দলের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে নেতানেত্রীদের সাপ-সিঁড়ির লুডো খেলা চলে। কে কখন সাপের মুখে পড়ে নীচে নেমে আসবেন, তা যেমন কেউ জানেন না, তেমনই সেই তিনিই যে আবার কখন সিঁড়িতে চলে সাঁ করে দলের শীর্ষনেতৃত্বের নেকনজরে পড়বেন, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তৃণমূলের অন্দরে সকলেই কমবেশি এই লুডো খেলায় জড়িত। সোনালির সঙ্গে দলের শীর্ষনেতৃত্বের দূরত্ব যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন দলের এক রসিক নেতা বলেছিলেন, ‘‘সোনালি তো লুডো নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে! পেতে বসে দান দেওয়ারই সুযোগ পাচ্ছে না তো সাপ আর সিঁড়ি!’’ বাস্তবেও সেটাই দেখা গেল শুক্রবার। যে সোনালি আর লুডোর বোর্ড পাতারও জায়গায় রইলেন না। লুডো এবং সাপ-সিঁড়ি ছেড়ে তাঁর শিবির বদলানোয় অতএব তৃণমূলের কেউই খুব একটা বিস্মিত নন।
তৃণমূল টিকিট না দেওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সর্বসমক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সোনালি। কিন্তু তার পরেও দলের তরফে কোনও বার্তা আসেনি। ভেঙে পড়েন সোনালি জানিয়েছিলেন, মমতা তাঁকে ‘ঘরের লোক’ মনে করতেন। তিনি এমন করতে পারেন, বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি। একনিষ্ঠ ভাবে দলের জন্য কাজ করার এমন ‘পুরস্কার’ জুটবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি বলে জানান সোনালি। তখন থেকেই তাঁর পদ্মশিবিরে যোগদানের জল্পনা জোরদার হচ্ছিল। এর পর রাতেই তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র যোগাযোগ হয়। রাতে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের বাড়িতে জরুরি বৈঠকেও সোনালি হাজির ছিলেন। নাটকীয় অন্যকিছু না ঘটলে এখন তাঁর বিজেপি-তে যোগ সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে বিজেপি-তে যোগ দিলেও তাঁকে সাতগাছিয়া বা অন্য কোনও কেন্দ্রের টিকিট দেওয়া হয় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy