Advertisement
১৯ মে ২০২৪

খাওয়া নিয়ে ভাববেন না, সটান বললেন পর্যবেক্ষক

রাজ্য সরকারের আতিথ্য এক রকম পাশে সরিয়ে রেখেই উত্তরবঙ্গে সফর শুরু করল নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল। জেলা প্রশাসনের সাজানো ছকে নয়, বরং তাঁরা যে নিজেদের হিসেব অনুযায়ীই চলবেন, তা শনিবার দুপুরে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পা দিয়েই বুঝিয়ে দেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা।

বাগডোগরা বিমানবন্দরে বিশেষ পর্যবেক্ষক চন্দ্রভূষণ কুমার। শনিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

বাগডোগরা বিমানবন্দরে বিশেষ পর্যবেক্ষক চন্দ্রভূষণ কুমার। শনিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

রাজ্য সরকারের আতিথ্য এক রকম পাশে সরিয়ে রেখেই উত্তরবঙ্গে সফর শুরু করল নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল।

জেলা প্রশাসনের সাজানো ছকে নয়, বরং তাঁরা যে নিজেদের হিসেব অনুযায়ীই চলবেন, তা শনিবার দুপুরে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পা দিয়েই বুঝিয়ে দেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা।

প্রশাসন ঠিক করে রেখেছিল, পর্যবেক্ষক দলের প্রথম বৈঠক হবে দার্জিলিঙে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার— এই চার জেলার নির্বাচন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে দলটি। তাই পর্যবেক্ষকেরা চাইলে, বাকি জেলার আধিকারিকদের উত্তরকন্যায় ডেকে পাঠানো হবে।

কিন্তু বাগডোগরায় পৌঁছেই দলের নেতা, দিল্লির মুখ্য নির্বাচন অফিসার চন্দ্রভূষণ কুমার জানিয়ে দেন, তাঁরা আলিপুরদুয়ারে যেতে চান। খানিক বাদে মধ্যাহ্নভোজের তোড়জোড় শুরু হতেই চন্দ্রভূষণ জানান, ও সব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। বরং যে গাড়িগুলিতে তাঁরা যাবেন, সেগুলির চালকদের খাওয়া হয়েছে কি না, তা দেখে নেওয়া হোক। কেননা, রাস্তায় কোথাও থেমে সময় নষ্ট করা যাবে না। যে ভাবেই হোক দিনের আলো থাকতেই তাঁরা আলিপুরদুয়ারে পৌঁছে যেতে চান।

শুরুতেই আলিপুরদুয়ার কেন?

‘‘আলিপুরদুয়ারে তো সব দলই লড়ছে শুনলাম। সেখানেই প্রথমে যাই’’— মুচকি হেসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারকে বলেন এক পর্যবেক্ষক।

কেন এত তাড়াহুড়ো?

চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘‘অনেকটা পথ যেতে হবে। আলিপুরদুয়ারে পৌঁছতে সময় লাগবে। হাতে বেশি সময় নেই।’’ আর, তাতেই আধিকারিকরা বুঝে‌ যান, কোন পথে কোথায় যেতে হবে তার ‘রুট ম্যাপ’ পকেটে নিয়েই তাঁরা বাগডোগরায় নেমেছেন।

অতীতে বহু সময়েই ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের সফরসূচি অনুযায়ী রুটম্যাপ তৈরি করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এ বার লিখিত ভাবে কোনও সফরসূচি পাঠানো হয়নি। কোথায় কখন বৈঠক হবে, তাতে কাদের ডাকা হবে, সবই ঘণ্টা কয়েক আগে বলে দেওয়া হবে বলে পর্যবেক্ষক দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘‘অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে যা যা করা প্রয়োজন, সবই করব। প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে যদি মনে হয়, প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বুথে বুথে যেতে হবে, তবে তা-ই যাব।’’

দুই মেদিনীপুরেও এ দিন পৌঁছে গিয়েছেন পর্যবেক্ষকেরা। নদিয়া হয়ে মুর্শিদাবাদেও ঢুকে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজরদারি দল। পঞ্জাবের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক ভি কে সিংহের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের দলটি এ দিন কর্ণগড়ের মন্দিরে পুজো দিয়ে কাজ শুরু করে। শালবনি, খড়্গপুর গ্রামীণ, খড়্গপুর টাউনের বেশ কিছু বুথ পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসনের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন পর্যবেক্ষকেরা।

মুর্শিদাবাদে ঢোকার আগে নদিয়ার জুরানপুরে (বছরখানেক আগে গোষ্ঠী সংঘর্ষে অশান্ত হয়েছিল ওই এলাকা) পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে নজরদারি দলের সদস্যেরা জানতে চান, ভোটের সময়ে গন্ডগোল করতে পারে এমন লোকেদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে কি না? তাদের থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে কি না? ফাঁড়িতে ক’টা গাড়ি? কত জন পুলিশ? থানা থেকে গ্রামে যেতে কত সময় লাগে?

বহরমপুরে কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে নজরদারি অফিসারেরা জানান, তাঁরা কোনও একটি উত্তেজনাপ্রবণ বুথ দেখতে চান। তাঁদের সৈয়দাবাদ মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সব দেখে প্রতিবন্ধী ভোটারদের হুইল চেয়ার নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঠের অস্থায়ী কাঠামো তৈরির নির্দেশ দেন তাঁরা।

সব মিলিয়ে, প্রথম ওভার থেকেই পর্যবেক্ষকদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। যা আঁচ করেছে শাসক দলও। শুক্রবারই শিলিগুড়ি লাগোয়া সাহুডাঙ্গির সভায় নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় হওয়া নিয়ে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেই প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বললেও বিশেষ পর্যবেক্ষক চন্দ্রভূষণ কুমারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের কী কাজ করতে হবে, তা আমরা জানি।’’

(সহ-প্রতিবেদন: অনল আবেদিন, শুভাশিস সৈয়দ, সুজাউদ্দিন, সুস্মিত হালদার, আনন্দ মণ্ডল ও সুমন ঘোষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE