Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Amit Shah

Bengal Polls: ‘শাহের ষড়যন্ত্র’ বনাম ‘দিদির উস্কানি’, পাঁচটি প্রাণ নিয়ে শেষ হল চতুর্থ দফার ভোট

প্রথম তিন দফার ভোটে রাজ্যে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে। হয়েছে প্রাণহানিও। কিন্তু চতুর্থ দফার ভোট সে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল।

প্রথম তিন দফার ভোটে রাজ্যে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে।

প্রথম তিন দফার ভোটে রাজ্যে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৩৬
Share: Save:

প্রথম তিন দফার ভোটে রাজ্যে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে। হয়েছে প্রাণহানিও। কিন্তু চতুর্থ দফার ভোট সে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল। শনিবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং গন্ডগোল তো হলই, একই সঙ্গে এক দিনে প্রাণ গেল সব মিলিয়ে পাঁচ জনের। তার মধ্যে চার জনই নিহত হলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে। কোচবিহারের শীতলকুচির এই ঘটনার নিন্দা করেছে তৃণমূল-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দল। বিজেপি দুঃখপ্রকাশ করেছে।

বুধবার শীতলকুচিতে ভোটের প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার পর থেকেই এলাকায় সন্ত্রাসের চোরাস্রোত ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছিলেন। শনিবার সকালে ভোট শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। পাঠানটুলি শালবাড়ির ২৮৫ নম্বর বুথে জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন ১৮ বছরের তরুণ আনন্দ বর্মণ। গোটা ঘটনার জন্য তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীদের দায়ী করে আনন্দের পরিবার এবং বিজেপি। তৃণমূল যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।

এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে যায় শীতলকুচিরই জোড়পাটকি এলাকার ১২৬ নম্বর বুথে। সেখানে সিআইএসএফ-এর গুলিতে নিহত হন একই সঙ্গে ৪ জন। একই সঙ্গে আহত হন আরও ৪ জন। তাঁরা এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন একাধিক হাসপাতালে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার দেবাশিস ধর জানিয়েছেন, উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আক্রান্ত সিআইএসএফ জওয়ানরা গুলি চালান। নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘আত্মরক্ষার্থে গুলি’র রিপোর্ট দিয়েছেন রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে।

বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও এড়ানো গেল না অশান্তি।

বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও এড়ানো গেল না অশান্তি।

শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া উচিত। ওরা বলছে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়েছে। মিথ্যে কথা। আসলে রাজনৈতিক নির্দেশেই এ সব চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় যে চক্রান্ত চলছে তা আজ প্রমাণ হয়ে গেল।’’ নিহতদের পরিবারের সঙ্গে রবিবার দেখা করবেন তিনি। শনিবার বিকেলেই মমতা উত্তরবঙ্গ পৌঁছে গিয়েছেন।

অন্য দিকে, শিলিগুড়িতে ভোটপ্রচারে এসে নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শীতলকুচির ঘটনার উল্লেখ করেছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশের পাশাপাশি পুরো ঘটনার জন্য তিনি মমতাকেই দুষেছেন। মোদীর কথায়, ‘‘উনি (মমতা) জনসভায় নিজের ছাপ্পা ভোট গ্যাংকে ট্রেনিং দিচ্ছেন, ট্রেনিং। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ১০ বছর সরকার চালানোর পরে শেখাচ্ছেন, কেমন করে নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘেরাও করতে হয়, কী ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে পেটাতে হয়, আর কেমন করে বুথে হামলা করতে হয়। এই হিংসা, লোককে নিরাপত্তারক্ষীদের উপরে আক্রমণ করার উস্কানি দেওয়ার পদ্ধতি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার পদ্ধতি আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।’’

শীতলকুচির পাশাপাশি কোচবিহারেরই দিনহাটা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। উত্তরবঙ্গের আর এক জেলা আলিপুরদুয়ারে ভোট মোটামুটি নির্বিঘ্নে হলেও অশান্তির নানা ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায়। সেখানেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে রাজ্যের শাসকদল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সুভাষগ্রাম এলাকায় ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছেন সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী লাভলি মৈত্র।

আগের তিন দফার মতোই প্রার্থীদের উপর হামলা, ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন জায়গায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে আইএসএফ প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকির উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চুঁচুড়ার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য ওই ঘটনা নিয়ে নেটমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়ো অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আনন্দবাজার ডিজিটাল যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।

কসবার বিজেপি প্রার্থী ইন্দ্রনীল খাঁ অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ধাক্কাধাক্কি এবং বুথে ঢুকতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল কর্মীরা। যদিও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ভোটের দিন টাকা বিলি করতে গিয়ে সঙ্ঘাতে জড়ান বিজেপি প্রার্থী। যাদবপুর বিধানসভার অন্তর্গত বাঘাযতীন এলাকায় এক তৃণমূল এজেন্টকে বুথে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE