জয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে সবুজ ঝড়। আর তাতে তছনছ পদ্মবাগান। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে তৃণমূল নিজের এলাকা যেমন ধরে রেখেছে, তেমনই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন জেলায় তৈরি হওয়া গেরুয়া অঞ্চলও গ্রাস করেছে। এমন ফলই মিলেছে ইভিএমে।
কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান এবং বীরভূম—দক্ষিণবঙ্গের এই ৭ জেলা এমনিতে তৃণমূলের গড় হিসাবেই পরিচিত। দেখে নেওয়া যাক, ওই জেলাগুলিতে কেমন ফল করল তৃণমূল। বিজেপি-রই বা কী অবস্থা।
কলকাতার ১১টি আসন দখল করেছে তৃণমূল। জোড়াসাঁকো আসন নিয়ে বিজেপি আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত তা হাতছাড়া হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি আসনের মধ্যে ৩০টিই জোড়াফুল শিবিরের দখলে। ১টি আসন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর ঝুলিতে। উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসনের মধ্যে ২৮টি তৃণমূলের দখলে। মাত্র ৫টি বিজেপি-র। অথচ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ওই জেলার ১২টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে গেরুয়া শিবিরের সেই বেলুন ফেঁসে গিয়েছে। হাওড়ার ১৬ আসনের একটিতেও দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়াশিবির। সব ক’টিই জোড়াফুলের দখলে। হুগলির ১৮টি আসনের ৪টি বিজেপি-র। বাকি ১৪টি জোড়াফুল শিবিরের। এমনকি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডোমজুড়, বৈশালী ডায়মিয়ার বালি আসনটিতেও নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে পদ্মশিবিরকে। পূর্ব বর্ধমানের ১৬টি আসনের সব ক’টিই পেয়েছে তৃণমূল। দলীয় নেতা অনুব্রত মণ্ডলের গড় বীরভূমের ১১টি আসনের ১০টি তৃণমূলের। শুধুমাত্র দুবরাজপুরে জিতেছে বিজেপি।
সব মিলিয়ে এই ৭টি জেলার ১৩৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ১০টি বিজেপি পেয়েছে। একটি আসন পেয়েছে আইএসএফ। বাকি ১২৫টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। এই ফলেই বিজেপি-র নীলবাড়ি দখলের ইচ্ছা অঙ্কুরেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এই ‘সবুজ’ অভিযান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ওই ৭ জেলায় তৃণমূল এগিয়ে ১০৫টি আসনে। বিজেপি এগিয়ে ৩১টি আসনে। ২০২১-এর ভোটে ওই এলাকায় ঘটেছে সবুজ ‘বিপ্লব’।
মুর্শিদাবাদের ২০টি আসনে ভোট হয়েছিল। জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জে ভোট ১৬ মে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গড়ে ২০টি আসনের মধ্যে ১৮টি পেয়েছে তৃণমূল। মাত্র ২টি বিজেপি। গোটা বাংলা তো বটেই, কংগ্রেসকে খালিহাতেই ফিরিয়ে দিয়েছে অধীর নিজের দুর্গই। নদিয়ার ১৭টি আসনের মধ্যে ৯টি বিজেপি-র। ৮টি আসন তৃণমূলের। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় পূর্ব মেদিনীপুরে ৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। ৭টি বিজেপি-র দখলে।
গত লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘুরিয়ে জঙ্গলমহলের ৪ জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার বেশির ভাগ এলাকাতেই ফুটেছে ঘাসফুল। ঝাড়গ্রামের ৪টি আসনি তৃণমূলের দখলে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৫টি আসনের ১৩টি তৃণমূলের এবং মাত্র ২টি বিজেপি-র। পুরুলিয়ায় অবশ্য গত লোকসভার মতো প্রতাপ বজায় রেখেছে বিজেপি। মোট ৯টি আসনের ৬টি বিজেপি-র। ৩টি পেয়েছে তৃণমূল। বাঁকুড়ার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টি পদ্মশিবিরের এবং ৪টি তৃণমূলের।
উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র গড়ে তোলা সাম্রাজ্যেও ঘাসফুলের দাপট দেখা গিয়েছে। বিজেপি-র সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের মোট ৫৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০টি, তৃণমূল পেয়েছে ২৩টি এবং ১টি আসন নির্দলের ঝুলিতে। এক নজরে উত্তরবঙ্গের জেলাভিত্তিক ফল।
কোচবিহারের ৯টি আসনের ৭টি বিজেপি-র এবং ২টি তৃণমূলের দখলে। আলিপুরদুয়ারের ৫টি আসনই বিজেপি পেয়েছে। জলপাইগুড়ির ৭টি আসনের ৪টি বিজেপি-র এবং ৩টি তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে। দার্জিলিঙের ৫টি আসনই পেয়েছে বিজেপি। উত্তর দিনাজপুরের ৯টি আসনের ৭টি তৃণমূলের এবং ২টি বিজেপি-র দখলে। দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি আসনের মধ্যে ৩টি তৃণমূলের। ৩টি পেয়েছে বিজেপি-ও। মালদহেও কংগ্রেস এবং বিজেপি-কে সরিয়ে এগিয়ে তৃণমূল। ওই জেলার ১২টা আসনের ৮টি তৃণমূলের এবং ৪টি বিজেপি-র হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy