Advertisement
২৩ মে ২০২৪

ঝড়ের ইঙ্গিত, কাঠগড়ায় সীতারাম

বাম-কংগ্রেস জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে পশ্চিমবঙ্গে সরকারের চেহারাটা কেমন হবে, তা ঠিক করতে সপ্তাহান্তে তিন দিনের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

অতঃ কিম! বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি। ছবি: পিটিআই।

অতঃ কিম! বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

বাম-কংগ্রেস জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে পশ্চিমবঙ্গে সরকারের চেহারাটা কেমন হবে, তা ঠিক করতে সপ্তাহান্তে তিন দিনের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

ভোটের ফলের পরে সাইক্লোনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সীতারাম ইয়েচুরি সেই বৈঠক পিছিয়ে দিলেন। ঠিক ছিল, ২২, ২৩ ও ২৪ মে দিল্লিতে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবির পর সেই বৈঠকে যে ইয়েচুরির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠত, তা নিশ্চিত। পলিটব্যুরোয় প্রকাশ কারাট-অনুগামী, ইয়েচুরি বিরোধীদের সংখ্যাই বেশি। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন ভেঙে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর চার্জশিট তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন। সেটা বুঝেই ঝড় স্তিমিত হওয়ার অপেক্ষায় শীর্ষ বৈঠক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত। সিপিএম পলিটব্যুরোর এক সদস্যের যুক্তি, ‘‘এখন শুধু ময়নাতদন্ত আর দোষারোপ। তা কয়েক দিন পরে হলেও ক্ষতি নেই।’’

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে কার্যত নিজের সাধারণ সম্পাদকের গদি বাজি রেখেছিলেন। ফল প্রকাশের পর সেই জোটের সিদ্ধান্ত নিয়েই সিপিএমের অন্দরমহলে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। তৃণমূলের ‘হিংসা’-র বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে একজোট হওয়ার দাবি উঠেছে, এবং সে জন্যই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাতে হচ্ছে বলে ভোটের আগে দাবি করেছিলেন ইয়েচুরি। আজও তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূলের হিংসা অব্যাহত। কিন্তু সেই হিংসা রুখতে এর পরেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিরোধ চলবে, সে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই ইয়েচুরি। কারণ পলিটব্যুরোয় ইতিমধ্যেই দাবি উঠে গিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে এই জোটের বিস্তারিত পর্যালোচনা হোক।

আজ বেলা ১২টা নাগাদ এ কে গোপালন ভবনে দিল্লিতে উপস্থিত পলিটব্যুরোর সদস্যদের বৈঠক বসে। তত ক্ষণে কেরলে জয় এবং বাংলায় ভরাডুবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু সিপিএম সদর দফতরে কেরল-জয়ের উল্লাসকে চাপা দিয়ে দিয়েছে বাংলায় হারের ধাক্কা। জোট-কৌশলের পর্যালোচনা করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন কারাট অনুগামীরা। পলিটব্যুরোর বৈঠকেও একই দাবি ওঠে। জোটের বিরুদ্ধে যুক্তি দেওয়া হয়, বাংলায় বামেদের ঘাড়ে চেপে লাভ কুড়িয়েছে কংগ্রেস। অথচ কংগ্রেসের ভোট পুরোপুরি বামেদের ঝুলিতে পড়েনি। ইয়েচুরি যুক্তি দিয়েছেন, বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ভোট বদলাবদলি হয়েছে। বৈঠক শেষে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ভোটে যে রণকৌশল নেওয়া হয়েছিল, তার পর্যালোচনা করে দল প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেবে। বামেদের জন্য এটা ধাক্কা। যার চেষ্টা হয়েছিল, তা হল না কেন, এর গুরুতর সমীক্ষা হবে।’’ তবে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘তৃণমূলি হিংসা’-র প্রতিরোধ কি চলবে? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘রাজ্য কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারও পর্যালোচনা হবে।’’ তবে এ সব বৈঠকের আগেই সিপিএমের অন্দরের লড়াইকে উস্কে দিতে চেয়েছেন মমতা। তাঁর ব্যাখ্যা, সিপিএম আর কংগ্রেস দু’দলই ‘চরিত্র ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ভুল করেছে। তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, ‘‘প্রকাশ কারাটজি প্রশ্ন করুন কেন কেরলে কুস্তি আর বাংলায় দোস্তি করলেন?’’

বাংলায় জোটের পর মানিক সরকার কটাক্ষ করেছিলেন, পার্টির অবস্থা এখন ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো। জোটের প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন প্রকাশ কারাট, এস আর পিল্লাইয়ের মতো নেতারা। কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়তে অসুবিধা হবে— এই যুক্তিতে পিনারাই বিজয়নও বিরুদ্ধে ছিলেন। তার পরেও সূর্যকান্ত মিশ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে ইয়েচুরি জোটের পক্ষে সিলমোহর বসিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন থামেনি। কেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো নেতা কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে যাচ্ছেন, তা নিয়ে এ কে গোপালন ভবনে প্রশ্নের মুখে পড়েন ইয়েচুরি। তিনি বলতে বাধ্য হন, জাতীয় স্তরের নেতারা কংগ্রেসের সঙ্গে একমঞ্চে যাবেন না।

এ বার যে দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীদের দাঁত-নখ বেরিয়ে পড়বে, তা ইয়েচুরিও বুঝতে পারছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন শুনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সকলেরই মতামত জানানোর অধিকার রয়েছে। কিন্তু পার্টি দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে ভাবেই হারের পর্যালোচনা হবে।’’ ইয়েচুরির সমস্যা হল, তিনি কেরলের জয়ের কোনও কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না। অথচ বাংলার হারের দায় তাঁকে নিতে হবে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘বাংলার পাশাপাশি কেরলে হারলে ইয়েচুরি আরও প্যাঁচে পড়তেন। বলা হতো, বাংলায় জোটের মূল্য কেরলে চোকাতে হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন। এ বার নিজের বিরোধীদের তিনি কী করে থামাবেন, সেটাই প্রশ্ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE