Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মারধর-বোমাবাজি, বাধা বুথে যেতেও

বাহিনীর কড়া নজর, মাঝে মধ্যে হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের টহল। ফলে সামনাসামনি লড়াই কমই হল। কিন্তু তার মাঝেও রাত থেকে হুমকি, মার, বুথ দখল, বুথে যেতে বাধা, প্রার্থীদের উপর টুকটাক হামলার অভিযোগ তেতে উঠল জেলার গ্রামীণ অঞ্চলের ১৬টি বিধানসভা।

বিবেকানন্দ কলেজে গণ্ডগোলের পরে জখম তৃণমূলের এজেন্ট। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

বিবেকানন্দ কলেজে গণ্ডগোলের পরে জখম তৃণমূলের এজেন্ট। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

বাহিনীর কড়া নজর, মাঝে মধ্যে হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের টহল। ফলে সামনাসামনি লড়াই কমই হল। কিন্তু তার মাঝেও রাত থেকে হুমকি, মার, বুথ দখল, বুথে যেতে বাধা, প্রার্থীদের উপর টুকটাক হামলার অভিযোগ তেতে উঠল জেলার গ্রামীণ অঞ্চলের ১৬টি বিধানসভা।

কেতুগ্রাম

সকাল ৯টা নাগাদ আনখোনা পঞ্চায়েতের চাকটা অবৈতনিক বিদ্যালয়ের ৬ ও ৭ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, সিপিএমের কোনও এজেন্ট নেই। বুথে খবরদারি করছেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান আবু মজাব শেখ। শেখ পচা নামে এক ব্যক্তিকে নিজের দাদা পরিচয় দিয়ে বুথে নিয়ে গিয়ে নিজেই ভোট দিলেন তিনি। একই ভাবে সাকের খলিফা নামে এক প্রতিবন্ধীকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে গিয়ে নিজের ভাই পরিচয় দিয়ে ভোট দিয়ে দিলেন তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী জাকের খলিফা। যদিও বুথের বাইরে এসে প্রধানের ভাই পচা এবং জাকেরের প্রতিবন্ধী ভাই দিব্যি বাড়ির দিকে হাঁটা লাগালেন। উপপ্রধান এবং জাকেরের অবশ্য দাবি, ‘‘ওরা নিজেরা ভোট দিতে পারবেন না বলে ওদের ইচ্ছা অনুসারে ভোটটা আমরা দিয়ে দিলাম।’’ আর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সামশের আহমেদ বললেন, ‘‘নিয়ম নেই, তা জানি। কিন্তু বোঝেনই তো সব।’’ কাঁদরা পঞ্চায়েতের সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথেও খবরদারি করতে দেখা গেল তৃণমূলেরই উপপ্রধান মিন্টু শেখকে। তাঁর দাবি, এজেন্ট হিসাবেই তিনি বুথে রয়েছেন।

রায়না

রাত থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উকিল কিস্কু, সিপিএম রায়, শেখ সামসুদ্দিনের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের। গোতান গ্রাম পঞ্চায়েতের কুটশিমুল, হদিসপুর, আতাপুর প্রভৃতি গ্রামে তৃণমূলের সন্ত্রাসে এজেন্ট দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করে সিপিএম। যশাপুর গ্রামে শেখ রকি নামে এক সিপিএম কর্মীকে মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতি সামলায়।

খণ্ডঘোষ

সকাল থেকেই বাদুলিয়ার ২২৮ নম্বর বুথে শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বাসিন্দাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রামে পৌঁছন সিপিএম প্রার্থী অসীমা রায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল নেতা অপার্থিব ইসলাম আমায় কটূক্তি করেন।’’ এলাকায় মোটরবাইক বাহিনীর তাণ্ডবও চলে বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। অপার্থিব যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ডাহা মিথ্যে কথা।’’ তৃণমূল প্রার্থী নবীন বাগের দাবি, ‘‘এমন ঘটনার কথা জানা নেই।’’

মঙ্গলকোট

সিনুট গ্রামে দুপুর ১টা নাগাদ তৃণমূল বুথ দখলের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সিপিএম কর্মীরা বাধা দিলে শুরু হয় বোমাবাজি, সংঘর্ষ। মোট ৬ জন জখম হন। সকলেই বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি। এলাকার তৃণমূল নেতা তানিম বাসানের দাবি, ‘‘সিপিএম বহিরাগত লোকজন এনে আমাদের উপর চড়াও হয়েছে।’’পাল্টা সিপিএম নেতা নূরুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন বোমা হাতে বুথ দখল করতে আসে। আমরা প্রতিরোধ করাতেই ওরা পিছু হটে। নিজেদের ছোড়া বোমার আঘাতেই জখম হয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা।’’

গলসি

গলসির ফরওয়ার্ড ব্লক প্রাথীর গাড়ি লক্ষ করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ, গলসির জাগুলিপাড়ার ঘটনা। জোট প্রার্থী নন্দলাল পণ্ডিত ১৮১ নম্বর বুথের এজেন্টকে নিয়ে গাড়ি করে ফিরছিলেন। অভিযোগ, গাড়ি থেকে নেমে কয়েক পা এগোতেই বোমা ছোড়া হয়। নন্দলালবাবুর দাবি, ‘‘আমাকে খুন করতেই তৃণমূল এই হামলা চালিয়েছে।’’ বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দু’ক্ষেত্রেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। সকালে সাতকাহানিয়া কোড়াপাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে ভোট দিতে তৃণমূলের লোকজন বাধা দেয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ৬২ নম্বর বুথে ইভিএমের পাশের জানলা খোলা ছিল। জানাজানি হতেই প্রিসাইডিং অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। বুদবুদ মহাকালী বিদ্যালয়ে মহিলা পরিচালিত বুথে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সৌম্য কুন্ডু নামে এক তৃণমূল কর্মীকে। বোমাবাজির অভিযোগে অজয়পল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও এক তৃণমূল কর্মী ফণীভূষণ মজুমদারকে।

আউশগ্রাম

কৌচা প্রাথমিক স্কুলের ১২১ নম্বর বুথে দুপুর ১টা নাগাদ তৃণমূল ছাপ্পা মারছে বলে অভিযোগ তোলে সিপিএম। ধানতোড় প্রাথমিক স্কুলের বুথে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পিচকুড়ির ঢাল এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দাপিয়ে বেড়ায় বলেও সিপিএমের অভিযোগ। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের এলাকাছাড়া করে।

মন্তেশ্বর

রাত থেকে কুসুমগ্রাম, লেবুতলা, মামুদপুর পঞ্চায়েত, বারপলাশনে শাসকের চোখরাঙানির অভিযোগ করছিলেন বিরোধীরা। সকালে যদিও বাহিনীর উপস্থিতিতে বুথে ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়তে আবারও রাইগ্রামের বেশ কিছু বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে। মন্তেশ্বরের সিপিএম প্রার্থী চৌধুরী মহম্মদ হেদায়তুল্লার অভিযোগ, বিজুর বয়েজ এফপি স্কুলে এজেন্টকে বের করে ছাপ্পা দিচ্ছে তৃণমূল।

পূর্বস্থলী

হাপানিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে বুথ জ্যাম, ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ করেন বিরোধীরা। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহার অভিযোগ, প্রায় ৫০টি সিপিএম সমর্থক পরিবারকে এমন ভয় দেখানো হয়েছে যে। তাঁরা ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। পিল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ থেকে ৩০ জন ভোটারের কার্ড কেড়ে তৃণমূল নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, উন্নয়নের নিরিখে মানুষ ভোট দিয়েছেন। পূর্বস্থলী দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘বিরোধীরা এজেন্ট দিতে না পারলে কি আমরা তাঁদের এজেন্ট জোগাড় করে দেব। বার বার মিথ্যা অভিযোগ করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করেছেন বিরোধীরা।’’ পূর্বস্থলী দক্ষিন কেন্দ্রে ৮টি বুথে ফের ভোটেরও দাবি করেছে জোট। তার মধ্যে তিনটি বুথই রয়েছে ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের কালীনগর এলাকায়। অভিযোগ, সকাল থেকেই ওই বুথগুলি দখল করে ছাপ্পা মারে শাসক দলের নেতা কর্মীরা।

কালনা

ভোট শুরুর আগেই বেগপুর পঞ্চায়েত এলাকার দুই এজেন্টকে অপহরণের অভিযোগ করে বাম-কংগ্রেস জোট। নেতাদের দাবি, লাল্টু সাঁতরা এবং মাধাই সাঁতরা নামে দুই এজেন্টের খোঁজ মিলছে না। পরে অবশ্য তাঁদের দেখা মেলে। পূর্বস্থলী দক্ষিন কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ফেরার পরে ওই দু’জন আর বুথে বসতে চাননি।’’ তৃণমূল যদিও অভিযোগ মানেনি।

বর্ধমান

শহরের পূর্ত ভবন, রসিকপুর-সহ কয়েকটি জায়গায় সকাল থেকেই এজেন্ট বসতে বাধা, ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। রাস্তার মোড়ে জমায়েত করতে দেখা যায় তৃণমূলের লোকজনকে। পরে অবশ্য সিপিএম পাল্টা লোক নামিয়ে প্রতিরোধ করে। বিবেকানন্দ কলেজের তৃণমূলের এজেন্ট তাপস দাসকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।

ভাতার

ভাতারের নারায়ণপুর, এরুয়ারেও বুথে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Burdwan Bombing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE