Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সীমানায় কড়া নজরের নির্দেশ

আগে সতর্ক করেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। এ বার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে এসে ‘শ্যাডো জোন’-এ নজরদারি বাড়ানোর কথা বললেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানও। প্রথম বৈঠক করতে এসেই সীমানা এলাকায় উপযুক্ত নজরদারির নির্দেশ দিলেন তিনি।

পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহান।

পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

আগে সতর্ক করেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। এ বার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে এসে ‘শ্যাডো জোন’-এ নজরদারি বাড়ানোর কথা বললেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানও। প্রথম বৈঠক করতে এসেই সীমানা এলাকায় উপযুক্ত নজরদারির নির্দেশ দিলেন তিনি।

শনিবার গভীর রাতে বর্ধমানের সার্কিট হাউসে পৌঁছন নরেন্দ্র চৌহান। রবিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল সর্বদল বৈঠকে যোগ দেয়। ছিলেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, নতুন পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা, আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সেই বৈঠকে বিরোধী দলের নেতারা এক যোগে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের কাছে গত লোকসভা ভোটের ‘অভিজ্ঞতা’র কথা তুলে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি সে বার। তার ফলে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে শাসক দল ভোট লুঠ করেছিল, ভয় দেখিয়ে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত যেতে দেয়নি দুষ্কৃতীরা। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে বর্ধমান পুরভোট ও পঞ্চায়েতে ভোটেও একই রকম সন্ত্রাস হয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের গণনাকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়।

সর্বদল বৈঠকে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের বিশেষ দল। সেখানে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার ছাড়াও ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। সেখানে নরেন্দ্র চৌহান সীমানা এলাকা ও ‘শ্যাডো জোন’ নিয়ে বিশদ জানতে চান। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, গোটা জেলায় ৯৩টি জায়গায় নাকাবন্দি চলছে। এ ছাড়া টহলদারি ও তল্লাশিও চলছে। বিশেষ পর্যবেক্ষক এ দিনও ফুটিসাঁকোর কথা তোলেন প্রশাসনিক বৈঠকে।

বীরভূম, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ জেলার সংযগোস্থলে ফুটিসাঁকো একটি চার রাস্তার মোড়। ভৌগলিক কারণে এই এলাকা দিয়ে দুষ্কৃতীরা অনায়াসে অল্প সময়ের মধ্যে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গা ঢাকা দিতে পারে। সে জন্য ফুটিসাঁকো ও সেখান থেকে ছ’কিলোমিটার দূরের মারুট মোড় দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে রয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ভোট ঘোষণার পরে ফুটিসাঁকো মোড়ে ছ’টি সিসি ক্যামেরাও বসিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিকেলে পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা ফুটিসাঁকো ঘুরে দেখেন।

গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এখনও কত জন গ্রেফতার হয়নি, সে ব্যাপারে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট চান হিমাচল প্রদেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক নরেন্দ্র চৌহান। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, প্রায় এগারোশো এমন অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এর পরেই তিনি জানতে চান ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে এবং দাগি দুষ্কৃতকারী এমন কত জনকে ১০৭ ও ১১০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে? জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ভোট ঘোষণার পর থেকে ১০৭ ধারা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০০ জনকে এবং ১২ জনের ক্ষেত্রে ১১০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। যা শুনে বৈঠকেই নরেন্দ্র চৌহান অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর। আধিকারিকদের এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।

এ দিনের বৈঠকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দার রেজ্জাক মণ্ডল, জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেসের কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপির দেবীপ্রসাদ মল্লিক, তৃণমূলের উজ্জ্বল প্রামাণিক ও উত্তম সেনগুপ্ত হাজির ছিলেন। সিপিএম অভিযোগ করে, শিল্পাঞ্চলে কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। মাফিয়াদের টাকা বিধানসভা ভোটে কাজে লাগানো হচ্ছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক কুলটির পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ করেন। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতো পরে বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।’’

সিপিএম নেতৃত্ব কমিশনের কাছে আরও দাবি করেন, বর্ধমান লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানা ‘সিল’ করা প্রয়োজন। আবার বর্ধমানের আগেই বীরভূমে ভোট শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই দুই জেলার সীমানা এলাকাও ‘সিল’ না করা হলে ভোটের সময়ে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ঢুকে গোলমাল পাকাতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় মোটরবাইক বাহিনী ভোটারদের হুমকিও দিতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিরোধীদের সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বৈঠক শেষে নরেন্দ্র চৌহান বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাজে আমরা সন্তুষ্ট। সর্বদল বৈঠকে যে সব অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016 special observer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE