Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শ্যামপুর

বাম গলায় ‘বন্দে মাতরম’, কংগ্রেসের ‘ইনকিলাব’

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে ‘ইনকিলাব মাতরম’! বিরোধী জোটের প্রচারে এমন আশ্চর্য কিছু হাওড়ার শ্যামপুরে এখনও শোনা বা দেখা যায়নি। কিন্তু যা শোনা যাচ্ছে, তা-ই বা কম কী!

প্রচার করছেন জোট প্রার্থী কংগ্রেসের অমিতাভ চক্রবর্তী। ছবি: সুব্রত জানা

প্রচার করছেন জোট প্রার্থী কংগ্রেসের অমিতাভ চক্রবর্তী। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে ‘ইনকিলাব মাতরম’! বিরোধী জোটের প্রচারে এমন আশ্চর্য কিছু হাওড়ার শ্যামপুরে এখনও শোনা বা দেখা যায়নি। কিন্তু যা শোনা যাচ্ছে, তা-ই বা কম কী!

বৃহস্পতিবার প্রচার-মিছিলে বেরিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তী। দলীয় সমর্থকেরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। ধরতাই দিচ্ছিলেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁদের স্লোগানও তো পাল্টে গিয়েছে। মুষ্টিবদ্ধ হাত যখন উপরে উঠছিল, শোনা যাচ্ছিল, ‘বন্দে মাতরম’! অথচ, কোনও পক্ষেরই গলা কাঁপছিল না! শুনে তো পথচারীরা থ! এক জন তো বলেই দিলেন, ‘‘জোটের হাওয়া জোরকদমে বইছে!’’

এ তো গেল বাইরের ছবি। দু’পক্ষের অন্দরের ‘পরিবর্তন‌’টাও কম আশ্চর্যের নয়।

কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য প্রচারে খরচ থেকে শুরু করে নির্বাচনী লড়াইয়ের কৌশল রচনা পর্যন্ত সিংহভাগ দায়িত্বই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে দুই বাম শরিক— সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। প্রার্থীর নামে ইতিমধ্যেই ২০ হাজার হ্যান্ডবিল এবং ১০ হাজার পোস্টার ছাপার বরাত দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাম নেতারা। আসছে ফ্লেক্সও। দিন কয়েক আগেই ওই কেন্দ্রে শাখা কমিটির সভা করে ফরওয়ার্ড ব্লক। কর্মীদের কাছে জোটের হয়ে সওয়াল করছিলেন নেতারা। বরাবর দলের প্রতীক ‘সিংহ’ চিহ্নে ভোট দিতে অভ্যস্ত কর্মীদের তাঁরা বলতে থাকেন, এ বারে ভোট দিতে হবে কংগ্রেসকে। কিন্তু কিছু কর্মী সে কথা মানতে আপত্তি তোলেন। তখন নেতাদের নিদান, ‘‘ধরে নিন প্রার্থী আমাদেরই। শুধুমাত্র প্রতীক বদলে গিয়েছে। সিংহের বদলে নতুন প্রতীক হাত।’’

সব দায়িত্ব বামেরাই নিচ্ছে কেন?

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে, এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভোট মাত্র ৬১৭৬। বামফ্রন্ট পায় ৬৬ হাজার ৯৫১টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৯৫ হাজার ৮০৩টি। ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিএম নেতারা একান্ত আলোচনায় জানিয়েছেন, কংগ্রেসের ভোট যেমন কম, তেমনই কর্মিসংখ্যাও বলার মতো নয়। ফলে, প্রচারের সিংহভাগ দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাঁদেরই। সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ, জোট প্রার্থীর পাশে দাঁড়াতে হবে আপোষহীন ভাবে। আমরা সেই শর্ত মেনে কাজ শুরু করে দিয়েছি।’’

শ্যামপুর কেন্দ্রে সেই ১৯৫২ সাল থেকে লড়াই করছে ফরওয়ার্ড ব্লক। কিন্তু জোটের স্বার্থে আসনটি এ বারে ছাড়তে হয়েছে কংগ্রেসকে। শসাটি গ্রামে দেখা যাচ্ছে, সিপিএম কার্যালয়ের দেওয়াল জুড়ে বড় বড় হরফে লেখা, ‘বাম ও ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার গড়তে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিন’। আঁকা হয়েছে ‘হাত’। তাঁদের পক্ষ থেকে এই রকম দেওয়াল-লিখন আরও করা হবে বলে জানালেন সিপিএমের শ্যামপুর দক্ষিণ লোকাল কমিটির সম্পাদক সুরথ মাইতি। আবার শ্যামপুরে ফরওয়ার্ড ব্লকের লোকাল কমিটির কার্যালয়ে দেখা গেল, কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোটে জয়ী করানোর রণকৌশল ঠিক করতে বিভিন্ন স্তরের কর্মী বৈঠকের স্তূপাকার চিঠি। সব চিঠি ছাপা হয়েছে বামফ্রন্টের নামে। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অসিত সাউ বললেন, ‘‘বামফ্রন্টের নির্বাচনী কাজ যে ভাবে করা হয়, সে ভাবেই সব কাজ হচ্ছে। কোনও ফাঁক নেই।’’ দুই নেতা এ-ও জানান, সব খরচ করা হচ্ছে বামফ্রন্টের তহবিল থেকে। দলের উপরতলার এটাই নির্দেশ।

তবে, এখনও পর্যন্ত অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ ভাবে কোনও নির্বাচনী কমিটি গঠিত হয়নি। যা কিছু কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, সবই বামফ্রন্টের নামে। তবে, সেই সব কর্মসূচিতে কংগ্রেস প্রার্থীকে ডাকা হচ্ছে। তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসছেন। ফলে, ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিই হচ্ছে। নারদ-কাণ্ডের প্রতিবাদে সেই রকমই একটি যৌথ কর্মসূচি দেখা গিয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে।

বামফ্রন্টের এই ‘দাদা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় স্বভাবতই খুশি কংগ্রেস। প্রার্থী তো নিজে আপ্লুতই। মাত্র ৬১৭৬ ভোট নিয়ে ৯৫ হাজার ৮০৩ ভোটের মোকাবিলা করতে যে তারা নামতে পেরেছে, তাতেই তারা তৃপ্ত। যাদের সৌজন্যে এই লড়াই এমন সম্মানজনক অবস্থায় এসেছে, সেই বামনেতাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলতেও তাই তাদের গলা কাঁপছে না। উৎসবের মেজাজে তাঁরা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানান কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের মধ্যে মহানন্দ রায় তো বলেই দিলেন, ‘‘হ্যান্ডবিল, পোস্টার, দেওয়াল লিখন আমরাও করেছি। কিন্তু বামফ্রন্ট যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে কোনও খাদ নেই।’’ প্রার্থীও বলছেন, ‘‘সব কিছুতে বামেদের পাশে পাচ্ছি। আমি খুশি।’’

বামেরা এখানে যেন দাদার ভূমিকায়! কংগ্রেস আদরের ভাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE