Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জওয়ান নেই, পথে তৃণমূলের বাইক বাহিনী

আশঙ্কাটা ছিল। তাই প্রথমেই রওনা দিয়েছিলাম পাতুরিয়া, চাঁছাগোট, পরাণনগর, নবকোলা বুথের দিকে। আশঙ্কাটা সত্যি হবে বুঝিনি। কারণ, কমিশন নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। বুথে বুথেও তো শুধু আধা সেনা থাকার কথা। তবু দেখলাম বুথ জ্যাম। ভোট হচ্ছে এক তরফা। অনেক জায়গায় হুমকি সত্ত্বেও এজেন্ট বসিয়েছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু ভোট শুরু হতেই হুমকিটা যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল তাতে আর ঝুঁকি নিতে পারলেন না বিরোধীরা এজেন্টরা।

শালবনির নবকলা বুথের অদূরেই তৃণমূল কর্মীদের জটলা।

শালবনির নবকলা বুথের অদূরেই তৃণমূল কর্মীদের জটলা।

শালবনি থেকে অভিজিৎ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১০
Share: Save:

আশঙ্কাটা ছিল। তাই প্রথমেই রওনা দিয়েছিলাম পাতুরিয়া, চাঁছাগোট, পরাণনগর, নবকোলা বুথের দিকে। আশঙ্কাটা সত্যি হবে বুঝিনি। কারণ, কমিশন নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। বুথে বুথেও তো শুধু আধা সেনা থাকার কথা। তবু দেখলাম বুথ জ্যাম। ভোট হচ্ছে এক তরফা।

অনেক জায়গায় হুমকি সত্ত্বেও এজেন্ট বসিয়েছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু ভোট শুরু হতেই হুমকিটা যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল তাতে আর ঝুঁকি নিতে পারলেন না বিরোধীরা এজেন্টরা। প্রাণ বাঁচাতে বুথ ছাড়লেন। আর সেই সুযোগে খুশিমতো ভোট করাল শাসকদল। যে খুশি বুথে ঢুকলো, বেরলো। আমরাও ঢুকে পড়লাম গটগট করে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কোনও হেলদোল নেই। পরিচয় জিগ্যেস করা দূরে থাক, একবার আড়চোখে তাকানোর প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেননি। সিপিএমের অভিযোগ, রাতেই সব ‘ম্যানেজ’ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল এত ‘আপ্যায়ণ’ করেছে যে তাদের কথামতোই চলেছে জওয়ানেরা।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের এ দিন খোশমেজাজেই দেখা গিয়েছে। কোথাও গাছতলায় জিরিয়েছেন তাঁরা, আবার কেনাকাটাও সেরে নিয়েছেন এক ফাঁকে। চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দারা কেনাকাটা করতে মেদিনীপুর শহরে যান, সেই ছোট বাজারেই কেনাকাটা করতে দেখা গেল জওয়ানদের। যা দেখে তো হতবাক সাধারণ ভোটার থেকে বিরোধী দলের প্রার্থীরাও। সিপিএম প্রার্থী শ্যামসুন্দর পাণ্ডে, বিজেপি-র প্রার্থী ধীমান কোলে দু’জনেই বললেন, “কিছু বুথে নির্বাচন কমিশনের নজরদারি সত্যিই নজর কেড়েছিল। কিন্তু কয়েকটি বুথে এমন ঘটনা ঘটল যা দেখে কিন্তু মানুষ ভোট দিতে বেরোনোর সাহস পাননি। এই বিষয়টিও কমিশনের নজরে রাখা উচিত।’’ সিপিএম প্রার্থী কিছু বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি করবেন বলেও জানালেন। সব শুনে জেলা পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরের প্রতিক্রিয়া, “খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন, রাস্তায় পুলিশের কোনও টহলদারি গাড়ির দেখা মেলেনি এ দিন। এই ছবির পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে জমেছে শাসকের ভোট-সন্ত্রাসের অভিযোগ। মেটাডহর বুথ তৃণমূলের লোকজন দখল করেছে জেনে পৌঁছেছিলেন সিপিএম প্রার্থী শ্যামবাবু। তাঁকে দেখেই বুথের সামনে জটলা করে থাকা তৃণমূল কর্মীরা তেড়ে এলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। বেরিয়ে যান।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই এ সব হল। জওয়ানেরা কিন্তু এগিয়ে এলেন না। অগত্যা বুথে না ঢুকেই ফিরতে হল শ্যামবাবুকে। মানিকবাঁধ বুথে আবার বিজেপি-র এজেন্ট রিঙ্কু কিস্কুকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে আনে।

এ দিন রাস্তায় ঘুরতে দেখা দিয়েছে শাসকদলের মোটরবাইক বাহিনীও। বুথের মধ্যেও চলেছে শাসক দলের শাসানি। এরই মধ্যে কিছু বুথে অবশ্য ভোট হয়েছে আঁটোসাটো নিরাপত্তায়। যেখানে প্রতিটি নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE