Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঋজু মেরুদণ্ডে কি ছিলার টান?

পাঁচটা বছর খুব কষ্টেসৃষ্টেই কেটেছে। কখনও শাসক নেতার চড় খেয়ে, কখনও ফাইলের আড়ালে মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করে। ঘুরে দাঁড়ানোর এবং ভাবমূর্তি ফেরানোর সুযোগ এসেছিল ভোটের মরশুমে। কিন্তু বাঘ হয়ে উঠে কয়েক ধাপ এগনোর পরই শিরায় শিরায় ফের যেন মুষিক রক্তের স্রোত অনুভব করছে পুলিশ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০১:২২
Share: Save:

পাঁচটা বছর খুব কষ্টেসৃষ্টেই কেটেছে। কখনও শাসক নেতার চড় খেয়ে, কখনও ফাইলের আড়ালে মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করে। ঘুরে দাঁড়ানোর এবং ভাবমূর্তি ফেরানোর সুযোগ এসেছিল ভোটের মরশুমে। কিন্তু বাঘ হয়ে উঠে কয়েক ধাপ এগনোর পরই শিরায় শিরায় ফের যেন মুষিক রক্তের স্রোত অনুভব করছে পুলিশ।

শাসকের থেকে অসংখ্য, অজস্র, অগণিত লাঞ্ছনা পেয়েও বাংলার পুলিশ প্রশ্নাতীত আনুগত্যের গর্তে সেঁধিয়ে ছিল এত দিন। ভোট যত এগিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সুর তত চড়া হয়েছে। ইঁদুরের গর্ত থেকে বেরিয়ে পুলিশও যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। বীরভূম হোক বা মুর্শিদাবাদ, কলকাতা হোক বা সল্টলেক— ভোটের দিনে পুলিশের রুদ্রমূর্তি ইঁদুর বানিয়ে ছেড়েছিল গত পাঁচ বছর ধরে বাঘ সেজে দাপিয়ে বেড়ানো দামালদের। লহমায় ফিরেছিল ভাবমূর্তি। বিরোধী দলের কর্মী হোন বা সাধারণ ভোটার, এমনকী নির্বাচন কমিশনও গত কয়েক দফার ভোটগ্রহণের দিনে পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। পুলিশকে পুলিশোচিত লাগছিল বেশ। মনে হচ্ছিল, সঠিক সন্ধিক্ষণেই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।

কিন্তু আবার কী শুরু হল? শেষ দফা ভোটের আগে শাসক নেত্রীর মরিয়া শাসানি শুনে পুলিশ কি ফের মুষিকাবতারে ফেরার চেষ্টায়? ঋজু মেরুদণ্ডে হঠাৎ কি ছিলার টান? ধনুষ্টঙ্কারের উপসর্গ?

হরিদেবপুর, কসবা, পাটুলি, গোঘাট, মালদহ— একের পর এক জনপদ থেকে ভোট পরবর্তী হিংসার খবর আসছে। কিন্তু পুলিশ আবার যেন সেই নির্বিকার দশায়। কোথাও অভিযুক্তদের চোখের সামনে পেয়েও পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। কোথাও আক্রান্তকেই ধমক দেওয়া হচ্ছে ‘বিরক্ত’ করার ‘অপরাধে’। কোথাও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধারা লঘু করে চটজলদি জামিনের ব্যবস্থা হচ্ছে।

মেজাজে ফিরেও ফের এই মিইয়ে যাওয়া কেন? ক্ষমতায় তিনিই ফিরছেন এবং তার পর অনেক পুলিশকেই ভুগতে হবে— তৃণমূলনেত্রীর এই শাসানিই কি ফের মিইয়ে দিল পুলিশকে? শোনা যাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শাসকের জন্য ‘নির্বিঘ্ন’ করার ছক কষতে পাঁশকুড়ার কলেজে নাকি এক সাংসদের সঙ্গে মধ্যরাতে বৈঠক করেছেন সাত দারোগা। শোনা যাচ্ছে, শেষ দফার ভোটের দিনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় রাখার ‘ওষুধ’ প্রয়োগের দায়িত্ব নাকি ন্যস্ত হয়েছে পুলিশের উপর। শোনা যাচ্ছে, কোচবিহারের ভোট ‘বুঝে নেওয়া’র দায়িত্ব তৃণমূলের সর্বময়ী নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং কোচবিহারের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে ফোনে যোগাযোগ করে তিনি নাকি নানা নির্দেশ পাঠাচ্ছেন। পুলিশও নাকি সেই মতো কাজ করতেই প্রস্তুত হচ্ছে।

এই যা কিছু শোনা যাচ্ছে, সে সব কিছু যদি সত্যি হয়, তা হলে পুলিশ যে ফের গর্তে সেঁধোনোর অপেক্ষায়, তা সপাটেই বলে দেওয়া যায়। তবু ভরসা রাখছি। বিশ্বাস রাখছি, গত কয়েক দফার ভোটে পুলিশের যে ভূমিকার দিকে সপ্রশংস চোখে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছি, সেই ভূমিকা থেকে পুলিশ সরবে না। মেরুদণ্ডে যে ছিলা পরানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেই ছিলা ছিঁড়ে দিয়ে শেষ দফার ভোটও নির্বিঘ্ন করবে পুলিশ।

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় স্পষ্ট হবে অনেক কিছুই। শেষ দফার ভোটের পর যেন বলতে পারি, হরিদেবপুর, কসবা, পাটুলি, গোঘাট বা মালদহের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ছিল। কারণ বাঘ আর ইঁদুর সেজে গর্তে ফেরেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE