Advertisement
E-Paper

উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা...

হাত দিয়ে খাট পিটিয়েই গলার সুরে তাল মেলাচ্ছেন সা রে গা মা পা-এর প্রতিযোগীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা এসেছেন। প্রত্যেকের জীবনে সঙ্গীতও এসেছে ভিন্ন ভাবে।

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০০:১০
স্নিগ্ধদীপ, তন্ময়, গৌরব, নোবেল

স্নিগ্ধদীপ, তন্ময়, গৌরব, নোবেল

রাজারহাটে শোয়ের সেটে ঢুকতেই বিরাট পুকুর পেরিয়ে নৌকোর পাশ কাটিয়ে এই ঘর। ঘরে ঢুকতেই গুটিকতক চেনা মুখ। হাত দিয়ে খাট পিটিয়েই গলার সুরে তাল মেলাচ্ছেন সা রে গা মা পা-এর প্রতিযোগীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা এসেছেন। প্রত্যেকের জীবনে সঙ্গীতও এসেছে ভিন্ন ভাবে।

উত্তর দিনাজপুর থেকেই এসেছেন দুই প্রতিযোগী, তন্ময় বিশ্বাস ও স্নিগ্ধদীপ ভৌমিক। গানের সঙ্গে তন্ময়ের বন্ধুত্ব শুরু তাঁর বাবা-জেঠুর হাত ধরে, ‘‘জেঠুর কীর্তনের দল ছিল। রামমঙ্গল, মনসামঙ্গল হতো। তখন থেকেই আমি ওঁদের কাছে তালিম নিতে শুরু করি। আর আমাদের দিনাজপুরে খন গান খুব প্রচলিত। খিসা খন ও শাস্তরি খন, এ সবই মূলত গাইতাম।’’

একই জায়গার ছেলে স্নিগ্ধদীপ। কিন্তু তন্ময়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব এখানেই। স্নিগ্ধদীপের জীবনে গানের ভূমিকাও বেশ আলাদা। ‘‘আসলে আমি বুনিয়াদপুরের ছেলে। কিন্তু ওই জায়গাটাকে আমি আমার পরিচিতির মধ্যে রাখি না। সেখানে পরিবার কখনও আমার পাশে দাঁড়ায়নি। আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। আমার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন, তাই পরিবারের বাকিরা আমাদের দাবিয়ে রাখতে চাইত। এমন দিনও গিয়েছে যে, মাকে কেউ এক গ্লাস জলও দেয়নি আর এখন তো বাটি ভরে খাবার দিয়ে যায়। তা ছাড়া বছর দশেক হল বিয়েও করেছি। তাই সংসারের চাপে গানকে জীবনে মুখ্য করে তুলতে পারিনি।’’ স্নিগ্ধদীপের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। আর এখন বুনিয়াদপুরের পরিবারও তাঁর পরিচয়ে পরিচিত।

সুমন, অঙ্কিতা, গুরুজিৎ, ঋতি

সত্যিই সঙ্গীত কোনও সীমা মানে না। এই মঞ্চও তারই প্রমাণ। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে এসেছেন নোবেল। এর আগেও এ দেশে বছর তিনেক থেকেছেন তিনি। তবে এ বার সঙ্গীত তাঁকে টেনে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে আছে তাঁর নিজের ব্যান্ডও। নোবেল বলছিলেন, ‘‘গৌরব আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রেস্তরাঁয় গিয়ে ভাল খাবার খাইয়েছে।’’ কলকাতার ঢাকুরিয়া অঞ্চলের ছেলে গৌরব সরকার। ছেলেবেলা থেকেই বাড়িতে গানবাজনার পরিবেশ। প্রথাগত তালিমও নিয়েছেন সঙ্গীতে। তবে খাবারেই তাঁর আগ্রহ বেশি। শোয়ের অন্য প্রতিযোগীদের কাছ থেকেও জানা গেল, গৌরবই নাকি এই শোয়ের ফুড অ্যাপ। কলকাতার কোথায় কী খাবার পাওয়া যায়, তার খবর মেলে গৌরবের কাছে। তবে খাবারের ভক্ত প্রায় গোটা টিম। সকলে দল বেঁধে ভোর রাতে বেরিয়ে পড়ে ফুড ট্রেলে। জ়াকারিয়া স্ট্রিটের দোকানে ভোর চারটের সময়ে পেট পুরে খাওয়া হয় বিরিয়ানি, চাঁপ। ঋতি টিকাদারের কথায়, ‘‘ভোর চারটে থেকে দুপুর ১টার মধ্যে অন্তত চার বার আমরা খাই। কী করে খেয়েছি জানি না। তবে খেয়েছি।’’

‘‘গান গাইতে এসে প্রায় ৮-১০ কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেলেছি,’’ হাসতে হাসতে বললেন দুর্গাপুরের ছেলে গুরুজিৎ সিংহ। গুরুদ্বারায় কীর্তন গেয়েই তাঁর সঙ্গীত সফর শুরু। পরে রবীন্দ্রভারতী থেকে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। তবে শুধু ভক্তিগীতিই নয়, গুরুজিৎ হিপহপেও সমান উৎসাহী।

তবে তাঁদের রিহার্সাল ঘরে নয়, চলে নৌকোয়। জানাল ক্লাস ইলেভনের অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। গোবরডাঙার মেয়ে অঙ্কিতার সঙ্গীতে হাতেখড়ি তার মা-ঠাকুমার কাছে। কিন্তু এখন এই শোয়ের দাদা-দিদিরা তার গুরু আর নৌকো হল রিহার্সালের মঞ্চ।

এই শোয়ের সবচেয়ে ছোট সদস্য কৃষ্ণনগরের সুমন মজুমদার। তার নালিশ, শোয়ের দাদা-দিদিরা ভারী পিছনে লাগে তার। সঙ্গে সঙ্গে গুরুজিৎ ওকে কাছে টেনে নিলেন, ‘‘আর তুই যে রোজ স্নান করিস না, সেটা বলে দেব?’’

আড্ডা শেষে বেরিয়ে আসতেই চোখে পড়ল ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট। স্টুডিয়োয় চলে ব্যাডমিন্টন। প্রতিযোগীদের সঙ্গে র‌্যাকেট হাতে নেমে পড়েন শোয়ের পরিচালকও।

ছবি: নিরুপম দত্ত।

Sa re ga ma pa Singer Music
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy