অতিমারিতেও মা আসছেন কিন্তু তার জৌলুস চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে না। প্রতি বছর পুজো আসার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী মহলে আরও একটা প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। মাচার আমন্ত্রণ। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে মানুষ আসেন নায়ক-নায়িকাদের কাছ থেকে দেখতে। তাঁদের গান শুনতে, নাচ দেখতে... উপরি পাওনা, মঞ্চ থেকে জনতার সঙ্গে তারকাদের কথোপকথন-হাসি-মশকরা। কিন্তু অতিমারির আবহে এ বছর মাচার উচ্ছ্বাসও প্রায় স্তব্ধ। সরকারিভাবে ঘোষিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১ অক্টোবর থেকে যাত্রা, নাটক, নাচগানের অনুষ্ঠান, ম্যাজিক শুরু করার ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ‘অংশগ্রহণকারী’র সংখ্যা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে পঞ্চাশে এবং পুজোর মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। এ অবস্থায় এই মরসুমে মাচা বা জলসার ভবিষ্যৎ কী?
ফি বছর অগস্ট মাস থেকে অনুষ্ঠানের বুকিং শুরু হয়ে যায়। জলসার মরসুম চলে শীতকাল অবধি। কিন্তু এ বছর উদ্যোক্তাদের কাছে তেমন কোনও খবর নেই। মাচা মানে শুধু তারকাদের পারফরম্যান্স নয়, একটা ইন্ডাস্ট্রি। ইলেকট্রিশিয়ান, মিউজ়িশিয়ান, ডেকরেটার্স... এ রকম বহু মানুষের রুজিরুটি জড়িয়ে মাচার সঙ্গে। সেই সঙ্গে তারকাদের ব্যাঙ্ক-ব্যালান্সও বটে।
জলসার উদ্যোক্তা বাবুয়া ভৌমিকের কথা থেকে পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া গেল। ‘‘অক্টোবর থেকে এপ্রিল অবধি ফাংশনের সিজ়ন চলে। এ বছর কোনও বুকিং হয়নি। ক্লাব, পুজো কমিটি কেউ যোগাযোগ করেনি। বড় অসহায় অবস্থা আমাদের। মুখ্যমন্ত্রী কী বলতে চেয়েছেন, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। দুর্গাপুজো যেখানে হচ্ছে, সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে অসুবিধে কোথায়? উনি তো ক্লাবগুলোকে সাহায্য করছেন, শিল্পীদেরও করুন। বড় মাঠে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে অনুষ্ঠান করতে পারি। যাঁরা প্যান্ডেল করেন, লাইট-সাউন্ড দেন, গাড়ি ভাড়া দেন, বহু অনামী শিল্পী... সকলে বসে গিয়েছেন। এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাব কী করে, জানি না,’’ বাবুয়ার গলায় অসহায়তা ও অসন্তোষ।