‘কুসুমদোলা’, ‘কুন্দ ফুলের মালা’, ‘অন্দরমহল’, ‘গাছকৌটো’— চার-চারটে বাংলা মেগা সিরিয়ালে একসঙ্গে কাজ করছেন অনসূয়া মজুমদার। বিস্ময় কাটিয়ে প্রশ্নটা করতে একটু সময় লাগল, একসঙ্গে চারটে মেগা! একটু অতিমানবীয় হয়ে যাচ্ছে না? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন অভিনেত্রী, ‘‘শারীরিকভাবে যদি বলেন, আমাকে ভাবতে হয় না। সিরিয়ালের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের চিন্তা। সত্যি বলতে কী, কাজ করতে ভালবাসি তো, তাই এই হেকটিক শিডিউল আমি উপভোগ করি। ওটা তো অনেক দিনের অভ্যেস!’’ অনসূয়া এক সময় একটি মাল্টিন্যাশনাল সংস্থার দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করতেন। সেই পদের দায়িত্ব সামলে, নাচ, থিয়েটার ও পরদায় অভিনয় করতেন। কিন্তু চারটে সিরিয়ালে তো একই রকম চরিত্র নয়? ‘‘প্রায় প্রতিদিনই দুটো সিরিয়ালের শ্যুটিং করি। কোনও-কোনও দিন তো তিনটেও করি। না, একটা চরিত্র থেকে আর একটা চরিত্রে ঢুকতে আমার মোটেও অসুবিধে হয় না। কেন হবে? তা হলে এত বছর ধরে আর কী অভিনয় করলাম!’’
প্রথম অভিনয় করেন নাটকে। প্রথম সিনেমা ‘বৃত্ত’। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। এর পর নাট্যগোষ্ঠী ‘চেনা মুখ’-এ তাঁর অভিনয় দেখে পরিচালক মৃণাল সেন ‘মহাপৃথিবী’র জন্য প্রস্তাব দেন। এর পর ‘তাহাদের কথা’, ‘কালরাত্রি’, ‘ভাল থেকো’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং আরও অনেক ছবি। প্রথম ধারাবাহিক সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস অবলম্বনে ‘কালপুরুষ’। মাধবীলতার চরিত্রটি করেছিলেন তিনি। প্রথম সিরিয়ালেই যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিলেন। এর পর আর থামতে হয়নি অনসূয়াকে। করেছেন অনেক টেলিফিল্ম। তার পর এল মেগার জমানা। হাতেখড়ি হল ‘শ্যাওলা’ দিয়ে। অভিনয় ও চাকরি, পাশাপাশি চলতে-চলতে ভালবাসার পাল্লা ভারী হয় অভিনয়ের দিকে। একটা সময় শুধুমাত্র অভিনয় করবেন বলে চাকরি ছেড়ে দিলেন। পাশাপাশি ব্রাত্য বসুর ‘সিনেমার মতো’ এবং সোহাগ সেনের ‘সোনাটা’য় নিয়মিত অভিনয় করছেন। আপনাকে নিশ্চয়ই সংসার ত্যাগ করেছে? প্রশ্নটা শুনেই আবার সেই প্রাণবন্ত হাসি, ‘‘পরিবার পাশে না থাকলে আমি এক পাও এগোতে পারতাম না। বিয়ের আগে বাবা-মা, বিয়ের পর স্বামী ও শাশুড়ি, তার পর ছেলের সােপার্ট পেয়েছি এবং এখনও পাচ্ছি। স্বামীও থিয়েটারের মানুষ। কেবলমাত্র আমাকে কাজ করতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া নয়, অভিনয়টা কেমন করছি, তার ফিডব্যাকও পাই তাঁদের কাছ থেকে।’’ শুধু অভিনয় করা নয়, ভাল অভিনয় দেখাও অনসূয়ার কাছে নেশার মতো। তাই এত কাজের মধ্যেও সময় করে নেন সিনেমা দেখার জন্য। চিরজীবন বাংলায় আটকে থাকবেন? তা ছাড়া পরিচালনা নিয়ে কিছু ভাবছেন না? ‘‘আমার জন্ম ঝাড়খণ্ডে। হিন্দি মাতৃভাষার মতোই বলি। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘চোখের তারা তুই’-এ বারাণসীর এক বাইজির চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। চরিত্রটা করে প্রশংসা পেয়েছি বিস্তর। তাই হিন্দি ছবিতে কাজ করার জন্য আত্মবিশ্বাসের অভাব হবে না। ডাক পেলে নিশ্চয়ই করব। এ বার আসি আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নে। হ্যাঁ, পরিচালক হিসেবে কাজ করতে চাই। এর আগে অবশ্য সহ-পরিচালক হিসেবে থিয়েটারে কাজ করেছি। সিনেমা বা থিয়েটার পরিচালনার করার ইচ্ছে আছে। মেগা নয়। মেগা বড্ড লম্বা...’’ দরজার বাইরে থেকে ডাক, ‘‘দিদি শট রেডি।’’ বাস্তব থেকে আবার পরদার জন্য এক নিমেষে তৈরি অনসূয়া, ‘‘আমি রেডি। চল...’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy