তাকে নিয়ে টিভিতে এর আগে বড় কাজ বলতে প্রায় বছর কুড়ি আগে।
তার চরিত্রে অভিনয় করার তালিকায় আছেন স্বয়ং উত্তমকুমার থেকে আবির চট্টোপাধ্যায়। রয়েছেন রজিত কপূর থেকে সুজয় ঘোষ। অ্যাপিল তার এমনই যে যশরাজ ফিল্মস্ও তাকে নিয়ে মোহগ্রস্ত। সেখানে সুশান্ত সিংহ রাজপুত তার ভূমিকায়।
এতটা পড়ে নিশ্চয়ই খানিকটা আঁচ করে ফেলেছেন। নাকি স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ধার করে বলব, ‘ঘটনাটা বায়োস্কোপের ছবির মতো চোখের সামনে দেখতে’ পাচ্ছেন?
তবে ‘বায়োস্কোপ’ নয়, টিভির পর্দায়। ইটিভিতে ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ‘ব্যোমকেশ।’ নতুন মোড়কে। শোয়ের ফরম্যাটটাও অন্য রকম। সপ্তাহে তিন দিন এবং এই তিন দিনেই শেষ হয়ে যাবে একটা করে গল্প। তাই সিরিয়াল নয়, টেলিভিশন সিরিজ বলাই ভাল হবে।
আর ব্যোমকেশের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ‘ফেলুদা’ সব্যসাচীর পুত্র গৌরব চক্রবর্তী। সত্যবতী ও অজিতের ভূমিকায় ঋধিমা ঘোষ ও সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এমন একটা প্রোজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে প্রচণ্ড খুশি গৌরব। তবে চাপও যে কম নয়, তা জানেন। এর আগে ব্যোমকেশের চরিত্রে রজিত কপূরের এমন পারফর্ম্যান্স। সর্বোপরি যে চরিত্রে ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার। সেই জুতোতে পা গলানো যে সহজ নয়, সেটা বেশ ভালই অনুভব করছেন তিনি। আইফোনে ‘ব্যোমকেশ’য়ের লুক টেস্টের ছবি দেখাতে দেখাতে বললেন, “হ্যাঁ, সে চাপটা তো আছেই। কিন্তু আমি এখন ওটা নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। এটার মেকিং তো সম্পূর্ণ অন্য।”
গৌরবের মতোই উচ্ছ্বসিত ঋধিমা। বললেন, “গৌরবের থেকে আমার চাপটা কম। এর আগে এত ভাল ভাল অভিনয় হয়েছে ব্যোমকেশের চরিত্রে! ঊষসী (চক্রবর্তী)দি-র সঙ্গে হয়তো তুলনা হবে। তবে সেটা নিয়ে এখনই ভাবতে রাজি নই।” তাঁর লুক নিয়ে কম খাটতে হয়নি। লম্বা হাতা ব্লাউজ আর শাড়িতে ‘সত্যবতী’ হয়ে ওঠা তো সহজ নয়? “আরে, একদম ঠিক। প্রথমে তো কেউ ভাবতেই পারছিল না আমাকে সত্যবতীর মতো দেখাতে পারে। আমি লুকটার জন্য শ্রবন্তী দাসকে ধন্যবাদ দেব,” বললেন তিনি।
গৌরবের উপর চাপ যেমন আছে, তেমনই একটা সমাধানও আছে। তাঁর মতো হরিপদ দত্ত লেনের ঠিকানায় যে ফেলুদাও থাকেন! তা ফেলুদার থেকে কোনও টিপস্ নিলেন না? “না, এই প্রাথমিক স্তরে বাবা এখনও কোনও টিপস দেননি। শুধু একবার বলেছেন, ‘নিজের মতো করো’। আসলে বাবাও তো ফেলুদার ব্যাটন পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে। আর আমাদের টিমটাও খুব তারুণ্যে ভরা। মনে হয় কোনও ছক অনুসরণ না করাই ভাল,” জানালেন সব্যসাচী-পুত্র।
সত্যিই ‘টিম ব্যোমকেশ’য়ের ট্যাগলাইন হতে পারে ইয়াং ব্রিগেড। শোয়ের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর যে মৈনাক ভৌমিক। সিরিজের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর থেকে অভিনেতা সবাই যখন জেন ওয়াইয়ের সদস্য, তখন ব্যোমকেশের লুক কেন সেই তিরিশের দশকে থাকল?
মৈনাক বললেন, “আমরা আসলে ‘ব্যোমকেশ’য়ের মতো একটা পিরিয়ড সাহিত্যকে ওই সময়েই রাখতে চাই। বিবিসির ‘শার্লক’য়ের মতো ব্যোমকেশের আধুনিকীকরণ করতে চাইনি। আমরা ছবির মেকিংটাকে নতুন করেছি।” কিন্তু এতদিন যাঁরা ব্যোমকেশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তাঁদের সকলের গড় বয়স তো গৌরবদের থেকে ঢের বেশি। সেটা কোথাও দর্শকদের মনে ধাক্কা দেবে না তো? “একদমই না। গল্পে কিন্তু ব্যোমকেশ পঁচিশের আশেপাশে। আমরাই বরং সাহিত্যের ব্যোমকেশের বেশি কাছাকাছি থাকব,” সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন মৈনাক ভৌমিক। এখন তিনি ব্যস্ত কলকাতার সেই সব রাস্তাঘাট খুঁজে বের করায় যেখানে এই সময়ে দাঁড়িয়েও চল্লিশ দশকের কলকাতাকে পাওয়া যাবে।
একই রকম উত্তেজিত অজিতের চরিত্রে অভিনয় করা সৌগত। জীবনের প্রায় প্রথম পর্যায়ে এমন একটা আইকনিক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগকে কেমনভাবে নিচ্ছেন তিনি? “ছোটবেলা থেকে ভাবতাম যদি ওয়াটসন, অজিত বা তোপসে হওয়া যায়। ভীষণ এক্সাইটিং লাগছে,” জানালেন সৌগত।
নতুন এই প্রোজেক্ট নিয়ে আশাবাদী ইটিভি বাংলার চ্যানেল হেড সুজয় কুট্টি। পারিবারিক ধারাবাহিকের সোজা সরল ফর্মুলায় না-হেটে ব্যোমকেশের মতো একটা পিরিয়ড সাহিত্য নিয়ে টিভি সিরিজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন তারা? “দেখুন, ব্যোমকেশ এমন একটা বিষয় যা বাঙালি জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যোমকেশের কথায়, চলাফেরার মধ্যে ষোলো আনা বাঙালিয়ানা রয়েছে। আর বাঙালিরা সেটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগও করে। তাই টিভির পর্দায় দেখার জন্য যে আট থেকে আশি মুখিয়ে থাকবে তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই,” বললেন সুজয় কুট্টি। আর কাস্টিংয়ে জেন ওয়াইয়ের আধিপত্যের কারণ? সুজয় উত্তর দিলেন, “আগে আমরা বয়সে বড় ব্যোমকেশ দেখেইছি। এ বার তাই ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরবর্তী প্রজন্মের কারওকে নেব। আর গৌরব ভীষণ জনপ্রিয়। পরবর্তী প্রজন্মও ওর সঙ্গে রিলেট করতে পারবে।”
গৌরব নিজে কী মনে করছেন? “বাঙালি কালচার নিয়ে বরাবরই খুব নস্ট্যালজিক। ব্যোমকেশ তো নির্ভেজাল বাঙালিরই প্রতীক। একটা নতুন ফরম্যাটে তাকে দেখতে উৎসাহের ঘাটতি পড়বে না,” বলেন গৌরব। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঋধিমা যোগ করলেন, “একটা ইয়াং টিমকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে সিরিজটা। গৌরব যেটা বলল, বয়স্করা তো দেখবেই আমাদের জেনারেশনেরও দেখার একটা কারণ হবে।” তবে সেই জেনারেশন কি ব্যোমকেশ পড়েছে? এ বার উত্তরটা দিলেন মৈনাক ভৌমিক। বললেন, “আমরা মেকিংটা এমন ভাবে করব যাতে কেউ ব্যোমকেশ আগে না-পড়ে থাকলেও, এই সিরিজটা দেখার পর পড়া শুরু করবে।”
সত্যিই তাই, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যোমকেশ বক্সী’র মতো কালজয়ী সাহিত্যকে আবার টিভির পর্দায় দেখতে মানুষ যে উদগ্রীব হয়ে থাকবে, এ কথা বলতে সত্যান্বেষীর দরকার হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy